শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৪ ০০:০০ টা

ভয়ঙ্কর ভাড়াটে খুনি

রাজধানীতে হাজার টাকায়ও হয় হত্যার চুক্তি

ভয়ঙ্কর ভাড়াটে খুনি

রাজধানীর কাঁঠালবাগানের গ্যাস্ট্রোলিভার গলিতে ঝুট ব্যবসায়ী রোকন উদ্দিন হত্যায় গ্রেফতার হয় সাহাবুদ্দিন সাবু ও খায়রুল ইসলাম। পুলিশকে তারা জানায়, রোকন উদ্দিনকে হত্যার জন্য মাদক ব্যবসায়ী নাসিমা আক্তার মুক্তা তাদের ১৮ হাজার টাকায় ভাড়া করেছিল। পল্লবীর সুলতানসহ চার খুনের ঘটনায় ১১ সহযোগীসহ গ্রেফতার হয় সন্ত্রাসী ফারুক ওরফে পিচ্চি ফারুক। এরা সবাই কারাগারে থাকা মিরপুর এলাকার এক শীর্ষ সন্ত্রাসীর গ্রুপের সদস্য। ফারুক জানায়, ছয় থেকে ১২ হাজার টাকা মাসিক পারিশ্রমিকে খুনের ঘটনা ঘটায় তারা। ডেমরার মাসুদ মাত্র এক হাজার টাকার চুক্তিতে খুন করে এক গার্মেন্ট শ্রমিককে।
সম্প্রতি রাজধানীতে সংঘটিত অন্তত দুই ডজন খুনের ঘটনায় এমন ভাড়াটে খুনিদের সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পেয়েছে পুলিশ। তাদের হাতে নির্মম খুনের শিকার হয়েছেন ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী, ছাত্র ও নারী। এক হাজার থেকে শুরু করে লাখ টাকার চুক্তিতে তারা খুন করছে। গোয়েন্দাদের অনুসন্ধান ও গ্রেফতার খুনিদের কাছ থেকে পাওয়া শিউরে ওঠার মতো এমন তথ্য পুলিশ প্রশাসনকে ভাবিয়ে তুলেছে। আতঙ্ক ছড়িয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। সংশ্লিষ্টরা বলছে, রাজনৈতিক বৈরিতা, সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ, ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব, পারিবারিক কলহ, নারীঘটিত বিষয়, মাদক ও এলাকার আধিপত্য বিস্তার ছাড়াও বিভিন্ন কারণে এসব ভাড়াটে খুনিকে ব্যবহার করা হচ্ছে। খুন ও বড় ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ড ছাড়া এদের তৎপরতা খুব একটা থাকে না। যে কারণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা এদের সম্পর্কে খুব একটা ওয়াকিবহালও নন। তাই খুনের সঙ্গে জড়িতরা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। রাজাবাজারে মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকী হত্যার শিকার হওয়ার পর স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের বলেছিলেন, এটি পেশাদার অপরাধীর কাজ। তবে এই পেশাদার অপরাধী বা কিলারদের গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, রাজধানীতে ভাড়াটে খুনির সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে তিন শতাধিক ভাড়াটে খুনির নাম পাওয়া গেছে এ পর্যন্ত। তারা গ্রুপে কাজ করে। প্রতিটি গ্রুপে চার থেকে ১০ জন করে কাজ করে বলে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। গ্রেফতার হওয়ার পর ভুল ঠিকানা দিয়ে কিংবা জামিন নিয়ে আর হাজির হচ্ছে না। কিংবা যেভাবেই হোক জামিনে বের হয়ে আবার খুনের জন্য ভাড়াটে হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, ভাড়াটে খুনিদের বেশির ভাগই মাদকাসক্ত ও অল্প বয়সী, যে কারণে খুন করতে এরা দ্বিধা করে না। খুনের ধরন বুঝে নির্ধারিত অঙ্কের টাকার চুক্তি অনুসারে এরা কাজ করে। ডেমরার ডগাইর এলাকায় জবাই করে হত্যা করা হয় গার্মেন্টকর্মী সালমাকে। খুনি মাসুদ গ্রেফতারের পর পুলিশকে জানায়, সালমার প্রেমিকের সঙ্গে মাত্র এক হাজার টাকা ও একটি মোবাইল ফোনের চুক্তিতে সে সালমাকে খুন করেছিল। জানা গেছে, সম্প্রতি রাজধানীতে বেশ কয়েকটি আলোচিত খুনের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে মগবাজারে ট্রিপল মার্ডার, খিলগাঁওয়ে ছেলে খুন ও বাবা গুলিবিদ্ধ, আগারগাঁওয়ে জাহাঙ্গীর আলমের খুন অন্যতম। এ ছাড়া গত তিন মাসে রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে উদ্ধার করা হয়েছে অন্তত ২০টি অজ্ঞাত লাশ। এদের মধ্যে নারীও আছেন। রাজধানীর মাঠে, নির্জন স্থানে, ডোবায়, বস্তাবন্দী, কার্টনবন্দী, এমনকি রাস্তায় পড়ে থাকা আলমিরার ভিতর থেকেও উদ্ধার হয় গুলিবিদ্ধ রক্তাক্ত অজ্ঞাত ব্যক্তির লাশ। হত্যাকাণ্ডের ধরন ও প্রকৃতি পর্যালোচনা করে গোয়েন্দারা নিশ্চিত যে, ভাড়াটে খুনিরা এসব ঘটনা ঘটিয়েছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) জাহাঙ্গীর হোসেন মাতবর বলেন, ‘রাজধানীতে অনেক ভাড়াটে পেশাদার খুনির নাম পাওয়া গেছে। তবে তাদের যারা ব্যবহার করে, সেসব ব্যক্তির ওপর নজরদারি সব সময় থাকে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পুলিশে জনবল সংকটের বিষয়টি সবারই জানা। আশা করছি এই নগণ্যসংখ্যক জনবল নিয়েই পেশাদার খুনিদের গ্রেফতারে গোয়েন্দা পুলিশ সফল হবে।’

সর্বশেষ খবর