শুক্রবার, ৩ অক্টোবর, ২০১৪ ০০:০০ টা

টসেই ভেস্তে গেল আশা

টসেই ভেস্তে গেল আশা

টেনশনে ড্রেসিং রুমের সামনে পায়চারি শুরু করলেন মাশরাফি। কখনো আকাশের দিকে কখনো বা উইকেটের দিকে তাকাচ্ছেন। মানসিক চাপ কমাতে ফুটবল নিয়েই মাঠে নেমে পড়লেন সাকিব-তামিম। টানা দেড় ঘণ্টা বৃষ্টির পর যখন মাঠ প্রস্তুত করার কাজ চলছিল তখন মহা টেনশনে দর্শকরাও। সাংবাদিকরা একে অপরের দিকে উৎসুক দৃষ্টিতে তাকাচ্ছেন! ম্যাচ ৫ ওভার হবে, নাকি সুপার ওভার! সবচেয়ে বেশি ভয় ছিল ‘টস’ নিয়ে।
শেষ পর্যন্ত ৫ ওভারও খেলা হয়নি, মাঠ প্রস্তুত না হওয়ায় সুপার ওভারও হয়নি। যে টস নিয়ে আতঙ্ক ছিল, সেই টসেই সর্বনাশ হয়ে গেল বাংলাদেশের। সাকিব মাশরাফিদের কাঁদিয়ে ফাইনালে চলে গেল শ্রীলঙ্কা। সেই সঙ্গে নিশ্চিত করে ফেলল রুপাও। আর ভাগ্য বিড়ম্বনায় পড়ে স্বর্ণ জয়ের আগেই ছিটকে পড়ল বাংলাদেশ। আজ হংকংয়ের বিরুদ্ধে ব্রোঞ্জের জন্য লড়বেন মাশরাফিরা। কালকের দিনটিই ছিল যে দুর্ভাগ্যময়। মেয়েদের কাবাডিতেও হেরেছে বাংলাদেশ। সেমিফাইনালে ইরানের বিরুদ্ধে দাঁড়াতেই পারেনি মালেকারা। ৪০-১৫ পয়েন্টের বিশাল ব্যবধানে হেরে ব্রোঞ্জ নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হলো বাংলাদেশকে। অনেক দিন থেকেই দুর্ভাগ্য যেন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের পিছু ছাড়ছে না। মাশরাফিরা প্রতি পদক্ষেপেই এখন স্বপ্নের মুখোমুখি হচ্ছেন। চলতি বছর এখনো ওয়ানডেতে জয়ের মুখ দেখতে পারেনি টাইগাররা। হাতুরাসিংহে কোচের দায়িত্ব নেওয়ার পর ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে টেস্ট ও ওয়ানডেতে হোয়াইটওয়াশ। এ মাসেই জিম্বাবুয়ে আসছে বাংলাদেশে। তাই এশিয়ান গেমসে স্বর্ণ ধরে রেখে  নতুন করে জেগে ওঠার স্বপ্ন দেখছিলেন ক্রিকেটাররা। কিন্তু সে আশায় গুঁড়েবালি। গতবার স্বর্ণ জিতলেও  এবার ভাগ্য বিড়ম্বনায় হতাশায় নিমজ্জিত হলেন ক্রিকেটাররা। ভাগ্যদেবী টাইগারদের ওপর এতোটাই নাখোশ যে গতকাল একদিনেই দুই দুইবারই টসে হারলেন অধিনায়ক। ম্যাচ শুরুর আগে টস হেরে খারাপ আবহাওয়ার মধ্যেও আগে ব্যাটিং করতে হলো। আর ফাইনাল টসে হেরে বেজে গেল বিদায় ঘণ্টাই। যদিও এই পরাজয়ের কোনো ব্যাখ্যা নেই, নেই গ্লানিও। তবে আফসোসটা থাকছেই। কেন যে অসময়ে বৃষ্টি হলো। এশিয়ান গেমসের মতো আসরে ক্রিকেটের মতো বড় ইভেন্টের সেমিতে কেনই বা কোনো ‘রিজার্ভ ডে’ নেই, তা নিয়েও কাল ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সমর্থকরা। ক্ষোভ অধিনায়ক মাশরাফির মনেও। কিন্তু অধিনায়ককে অনেক কিছুই মেইনটেইন করে চলতে হয়। তাই মনের কষ্টকে স্তিমিত করে করুণ কণ্ঠে সাংবাদিকদের বললেন, ‘একটা রিজার্ভ ডে থাকলে এমন পরিণতি হতো না।’  খেলা হলে বাংলাদেশই জিততো -এমন ধারণা ছিল সমর্থকদের মনে। কেননা তামিম, সাকিব, মাশরাফিদের সামনে থেকে জয় ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়া এতো সহজ নয়। যদিও কাল বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের শুরুটা ভালো হয়নি। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে ওঠে মাত্র ২১ রান। তবে এক পর্যায়ে রান খরা কাটিয়েও উঠেছিলেন টাইগাররা। চতুর্থ উইকেট জুটিতে ভালোই ব্যাটিং করছিলেন তামিম ও সাব্বির। তাদের ৫৩ রানের জুটিটি সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিচ্ছিল। কেননা ইয়ংহি ক্রিকেট মাঠে ১২০ থেকে ১৩০ রানই জয়ের জন্য যথেষ্ট। কিন্তু ১১ ওভারে তিন উইকেটে ৫৯ রান করার পরই শুরু হয় ঝুম বৃষ্টি। আর বৃষ্টি যখন থামল তখন সবই শেষ। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মাঠ প্রস্তুত করতে না পারায় টসের সহায়তা নিতে হলো। সর্বনাশা এই টসই যেন কাল বাংলাদেশের মুখের গ্রাস কেড়ে নিল। স্বর্ণ হাতছাড়া হয়ে গেল বাংলাদেশের।

সর্বশেষ খবর