ঢাকায় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত সন্দেহভাজন জঙ্গি শরীফুল ইসলাম। যার প্রকৃত নাম মুকুল রানা। সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ধুলিহর ইউনিয়নের বালুইগাছা গ্রামের আবুল কালাম আজাদের ছেলে। তার আসল নাম মুুকুল রানা। পুলিশের ভাষ্যমতে, পুরস্কার ঘোষিত ছয় জঙ্গির একজন এই শরীফুল ওরফে মুকুল রানা আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য। তবে এলাকাবাসীর কাছে সুপরিচিত ও শান্ত স্বভাবের ছেলে ছিলেন মেধাবী ছাত্র মুকুল রানা। এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়া সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের অনার্সের ইংরেজি তৃতীয় বর্ষের ছাত্র মুকুল ঢাকায় চাকরির কথা বলে দুই বছর আগে বাড়ি থেকে চলে যান। এর পর থেকে ঢাকায় তিনি কোনো দলের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলেন কিনা, তা জানত না তার পরিবার। মুকুল রানা তার পরিবারকে জানিয়েছিলেন তিনি ঢাকার রাজউকে (রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ) দাফতরিক একটি পদে চাকরি পেয়েছেন। তার বাবা আবুল কালাম আজাদ জানান, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি যশোরের বসুন্দিয়া গ্রামের মোবারক আলীর মেয়ে মহুয়া আক্তার রিয়ার সঙ্গে মুকুল রানার বিয়ে হয়। বিয়ের এক দিন পরই ডিবি পুলিশ পরিচয়ে বসুন্দিয়া বাজার থেকে সাদা পোশাকধারী সাত-আট জনের একদল পুলিশ একটি মাইক্রোবাসে করে তুলে নিয়ে যায় মুকুলকে। সেই থেকে নিখোঁজ ছিলেন মুকুল। নিখোঁজের পর মুকুলের শ্যালক আমির হোসেন বাদী হয়ে যশোর কোতোয়ালি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। অবশেষে গত শনিবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে ঢাকার মেরাদিয়ায় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে শরীফুল নিহত হওয়ার কথা জানা যায়। পুলিশের দাবি, লেখক অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডে এই শরীফুলই নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। অভিজিেক যেখানে হত্যা করা হয়, সেখানকার ভিডিও ফুটেজে শরীফুলের উপস্থিতি দেখা গেছে বলে পুলিশের দাবি। আবুল কালাম আজাদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ছোটবেলা থেকেই লেখাপড়ায় ভালো মুকুল। ব্যবহারেও ভালো। কারও সঙ্গে কোনো গোলযোগ নেই। এলাকায় কেউ তাকে খারাপ বলতে পারবে না। বিয়ে করার পরদিন ২০ ফেব্রুয়ারি শ্বশুরবাড়ি থেকে ডিবি পরিচয়ে পুলিশ তুলে নিয়ে যায়। ঘটনা নিয়ে একটি জিডিও করা হয়। সেই থেকেই নিখোঁজ মুকুল। মুকুল দুই বছর আগে ঢাকায় যায়। বাড়িতে এসে বলে সে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অফিসে চাকরি করছে। আমি আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি। স্থানীয় ধুলিহর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের একজন সদস্য আমি। দেশের এই পরিস্থিতিতে আমি তাকে রাজনীতি করতে নিষেধ করি।
তবে আমার ছেলে ঢাকা শহরে গিয়ে রাজনীতি করত কিনা তা আমার জানা নেই। কিন্তু হঠাৎ করে একদিন পত্রিকায় জঙ্গি হিসেবে শরীফুল নামে তার ছবি প্রকাশ হওয়ার পর ঘটনা জানতে পারেন। তিনি আরও বলেন, আমার ছেলে যদি কোনো অপরাধ করে তার দায় তো একজন বাবা নিতে পারে না। অপরাধ করলে প্রচলিত আইনে বিচার করে যদি তার ফাঁসি হতো তা মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল। তবে তাকে ক্রসফায়ার দিয়ে হত্যা করা হলো, এটা মন থেকে মেনে নেওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। এটা অন্যায়।
মুকুলের বোন শারমিন সুলতানা রিয়া বলেন, ভাইয়া ২০০৮ সালে ধুলিহর ডিবি ইউনাইটেড মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে জিপিএ-৫ ও ২০১০ সালে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে পাস করেন। সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে ইংরেজি বিভাগে অনার্স তৃতীয় বর্ষে লেখাপড়া করছেন। ঢাকায় যাওয়ার পরে ভাইয়া ফোন দিলেই আমাদের সঙ্গে কথা হতো। তবে তিনি তো জঙ্গি ছিলেন না। খবরে জানতে পারলাম তাকে ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয়েছে। বালুইগাছা গ্রামের ব্যবসায়ী আবদুল মাজেদ জানান, ছোট থেকেই আমাদের সামনে বড় হয়েছে মুকুল। এলাকার আদর্শ স্কুলে লেখাপড়া করেছে, কলেজে পড়েছে। এলাকায় কারও সঙ্গে কোনো দিন গণ্ডগোল করতে দেখিনি। প্রতিবেশী জামেলা খাতুন বলেন, এখন আর ভালোমন্দ জেনে কী হবে। তার জীবনটা কেউ তো ফেরত দিতে পারবে না। সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ধুলিহর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদ্যনির্বাচিত ধুলিহর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাবু সানা বলেন, বেশ কিছুদিন আগে থেকে শুনছি আবুল কালাম আজাদের একটা ছেলে নিখোঁজ রয়েছে। মাসখানেক আগে পত্রিকায় জঙ্গি তালিকার ছবি প্রকাশের পর তার বাবা ছবি দেখে শনাক্ত করে বলে এটা তার ছেলে। সেদিনই জানতে পারলাম তার দুই ছেলে, এক মেয়ে। এর আগে জানতাম তার শুধু এক ছেলে। যদি সে জঙ্গি কার্যক্রমে জড়িত হয় তবে প্রচলিত আইনের আওতায় বিচার হবে— এটা আমরাও চাই। আবুল কালাম আজাদ তার কমিটির সদস্য কিনা— জানতে চাইলে তিনি বলেন, দুই বছর আগে আওয়ামী লীগের ফরম সংগ্রহ করে সে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য পদে নাম লিখিয়েছে।সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইমদাদুল হক শেখ জানান, শরীফুল ওরফে রানা নামে এক জঙ্গি ঢাকায় বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে শুনেছি। আর তার বিষয়ে বিস্তারিত বলতে পারব না। তবে নিহতের লাশ আনতে তার মা ছখিনা খাতুন, দুলাভাই হেদায়েতুল ইসলামসহ পরিবারের লোকজন রবিবার ঢাকায় গেছেন। শরীফ বা মুকুল জঙ্গি সংগঠনে কতটুকু জড়িত সে সম্পর্কে তার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সানা ভালো বলতে পারবেন।