শুক্রবার, ১৪ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

লাগাম টানা হচ্ছে সহ সম্পাদকের পদ

আওয়ামী লীগের সম্মেলন

রফিকুল ইসলাম রনি

লাগাম টানা হচ্ছে সহ সম্পাদকের পদ

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক পদের লাগাম টানা হচ্ছে। কারও খেয়ালখুশিমতো ঢালাওভাবে এ পদে আর নিয়োগ দেওয়ার সুযোগ থাকছে না। কড়াকড়ি আরোপ করা হচ্ছে এ পদে নিয়োগে।

কয়েক দিন আগে ধানমন্ডিতে দলের গঠনতন্ত্র উপ-পরিষদের বৈঠকে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘এবারের কাউন্সিলে সহ-সম্পাদকের পদ কমিয়ে আনা হবে।’ 

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘সহ-সম্পাদক পদ নিয়ে দলের ভিতরে আলোচনা আছে। দলের গঠণতন্ত্র অনুযায়ী নিয়োগ প্রদান করা হবে। এই নিয়োগ প্রক্রিয়া দেখভাল করবেন দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।’  

আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতারা জানান, আগামী ২২ ও ২৩ অক্টোবর দলের জাতীয় কাউন্সিলে সহ-সম্পাদকদের বিশাল বহর ছেঁটে ফেলা হবে। গঠনতন্ত্রের বাইরে অতিরিক্ত একটিও আর সহ-সম্পাদক পদে মনোনয়ন দেওয়া হবে না। আর এই নিয়োগ প্রক্রিয়া পুরোপুরি দেখভাল করবেন দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা।

গঠনতন্ত্র অনুসারে সর্বোচ্চ ৯৫ জনকে সহ-সম্পাদক পদে নিয়োগ দেওয়ার সুযোগ আছে। বর্তমানে আওয়ামী লীগে কতজন সহ-সম্পাদক আছেন তা দলের দায়িত্বশীল কেউ বলতে পারেন না। কেউ বলেন, শত শত, কেউ বলেন অগণিত। ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের মধ্যে যাদের দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান হয়নি, তাদের সাংগঠনিকভাবে কাজে লাগাতেই সহ-সম্পাদকের পদ সৃষ্টি করা হয়েছিল। ২০০২ সালের ২৬ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে প্রথমবারের মতো দলের গঠনতন্ত্রে এ পদ সৃষ্টি করা হয়। আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের ২৫ অনুচ্ছেদের ‘চ’ ধারায় (বিভাগীয় উপ-কমিটি গঠন) বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্রত্যেক সম্পাদকীয় বিভাগের কার্যক্রম অধিকতর গতিশীল ও সমন্বিত করার লক্ষ্যে প্রতিটি সম্পাদকীয় বিভাগে একটি করিয়া উপ-কমিটি গঠন করিবে। উক্ত উপ-কমিটি ১ জন চেয়ারম্যান, ১ জন সম্পাদক, অনূর্ধ্ব ৫ জন সহ-সম্পাদক, প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিশেষজ্ঞ সদস্য, সংশ্লিষ্ট সহযোগী সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং নির্দিষ্ট সংখ্যক সদস্য সমন্বয়ে গঠিত হইবে।’ দলীয় সূত্রমতে, ২০০২ সালের ২৬ ডিসেম্বরের কাউন্সিলের পর ৯৫ জন সহ-সম্পাদক নিয়োগ করা হয়েছিল। এরপর ২০০৯ সালের ২৪ জুলাইয়ের কাউন্সিলে কোনো সহ-সম্পাদক নিয়োগ করা হয়নি। সর্বশেষ ২০১২ সালের ২৯ ডিসেম্বরের কাউন্সিলের পর কেন্দ্রীয় পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে প্রথমে ৬৬ জন সহ-সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হয়। তখন বেশ কিছু নামকরা সাবেক ছাত্রনেতাকে স্থান দেওয়া হয়েছিল। পরে ঘোষণা দেওয়া হয় আরও ৮৩ জনের নাম। এরপর দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সাবেক ছাত্রনেতাদের দলীয় কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করতে ২০১৩ সালে প্রথম দফায় ২৫০ জন ও পরে আরও ৩১৮ জনকে মনোনীত করা হয়।

দলে অভিযোগ আছে, এই সহ-সম্পাদকরা এখন বিভিন্ন জায়গায় কেন্দ্রীয় নেতার পরিচয় দিয়ে দাপিয়ে বেড়াছেন। এই পদে অনেক বেশি সদস্য হওয়ায় বিভিন্নভাবে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে বলে দলে আলোচনা আছে। এ কারণেই এবারের জাতীয় কাউন্সিলে সহ-সম্পাদক পদের লাগাম টানতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়।

সম্প্রতি ধানমন্ডি আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ওবায়দুল কাদের এসব সহ-সম্পাদক নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করে বলেছিলেন, ‘সহ-সম্পাদক ব্যাঙের ছাতার মতো বেড়েছে। পার্টি অফিসের সামনে যার সঙ্গে ধাক্কা লাগে, সেই বলে আমি সহ-সম্পাদক।’ উপ-কমিটির এই নেতাদের অনেকে আওয়ামী লীগের সহ-সম্পাদক পরিচয়ে এলাকায় প্রভাব খাটানোর  চেষ্টা করেন বলেও ওই সময় তিনি উল্লেখ করেছিলেন। 

কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সহ-সম্পাদকের সংখ্যা বাড়ানোর ফলে দলে নানারকম সমস্যা লেগেই আছে। দলীয় সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিভিন্ন সময়ে সহ-সম্পাদকদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটেছে। তাছাড়া সচিবালয়সহ বিভিন্ন জায়গায় তদবির ও প্রভাব খাটিয়ে নিজের স্বার্থ উদ্ধারের কথা দলের উচ্চ পর্যায়ে অভিযোগ এসেছে। একই সঙ্গে চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজির বিস্তর অভিযোগ রয়েছে কিছু সহ-সম্পাদকের বিরুদ্ধে। তাই দলের গঠনতন্ত্র অনুসরণ করেই এবার সহ-সম্পাদক নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দলীয় নীতিনির্ধারকরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের একজন সাংগঠনিক সম্পাদক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সংবাদ সম্মেলন কিংবা কোনো অনুষ্ঠানে দলীয় কার্যালয়ে বিপুলসংখ্যক সহ-সম্পাদকের জন্য বসার জায়গা পান না সিনিয়র নেতারা। এমনকি সাংবাদিকদেরও বসার জায়গা হয় না সহ-সম্পাদকদের ভিড়ের কারণে। সিনিয়রদের কীভাবে সম্মান করতে হয় তা-ও জানেন না তারা। তিনি অভিযোগ করেন, দলের গুটিকয়েক নেতার আশকারায় এরা মাথায় চড়ে বসে আছে। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে চাঁদাবাজির অভিযোগও পাওয়া গেছে। কিন্তু তারা এমন সব নেতার ছত্রছায়ায় থাকে যে, তাদের বিরুদ্ধে কিছু বলাও যায় না।

সর্বশেষ খবর