শনিবার, ২২ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

মধ্যরাতেও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মানুষের ঢল

নিজস্ব প্রতিবেদক

মধ্যরাতেও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মানুষের ঢল

ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান যেন হঠাৎই বদলে গেছে। আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলন ঘিরে সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে। সেই সঙ্গে রয়েছে নেতা-কর্মীদের সরব উপস্থিতি। কয়েক দিন ধরেই সম্মেলনস্থল এই উদ্যান ছিল মুখরিত। তবে গতকাল মধ্যরাতে নেমেছিল নেতা-কর্মী, কাউন্সিলরসহ মানুষের ঢল। এ যেন এক অন্য উদ্যান। অন্য রকম এক উৎসব। আদর্শের টানে, নেতার টানে, ভালোবাসার টানে সম্মেলনের আগের রাতেও নির্ঘুম কাটান নেতা-কর্মীরা। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শোভা পাচ্ছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি-সংবলিত ডিজিটাল পোস্টার ও   ব্যানার। একই সঙ্গে শোভা পাচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের ছবি। রংবেরঙের ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে গোটা উদ্যান। আলোকসজ্জার এমন রূপ আর কখনো দেখেনি সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। আজ থেকে আওয়ামী লীগের দুই দিনব্যাপী সম্মেলন। গতকাল সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত সম্মেলনের সর্বশেষ প্রস্তুতির খোঁজখবর নিতে গিয়ে লক্ষ্য করা গেছে এ চিত্র। সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, গতকাল গভীর রাতেও বিপুলসংখ্যক মানুষের উপস্থিতি ছিল উদ্যানজুড়ে। তারা সম্মেলনস্থল দেখছেন আর অবাক হচ্ছেন। অনেককেই দেখা গেল বেশ উৎসাহী। অনেকে আবার উত্ফুল্ল। কারণ এমন আয়োজন এর আগে কখনো দেখেননি নেতা-কর্মীরা। সম্মেলন কেন্দ্র করে এমন আনন্দের জোয়ারে নেতা-কর্মীরা আর ভাসেননি। ব্যানার-ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। একইভাবে বিশাল নৌকার ওপর তৈরি মঞ্চের তিন দিকে বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা ও সজীব ওয়াজেদ জয়ের ছবি টাঙানো হয়েছে। উদ্যানের প্রতিটি গেট ও আশপাশের রাস্তা আলোকসজ্জার মধ্য দিয়ে সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে। মঞ্চের পাশাপাশি সারি সারি বসানো হচ্ছে চেয়ার। সামনের দিকে বসানো হয়েছে দামি সোফা। দিনভর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ব্যস্ত সময় কেটেছে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের।

এ ছাড়া কাউন্সিলের জন্য নির্মিত মঞ্চ ও প্যান্ডেল নির্মাণকারী, সাজসজ্জাকারী এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদেরও ব্যাপক তত্পরতা লক্ষ্য করা গেছে। শেষ প্রস্তুতিতে সিএসএফসহ রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা, পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যদের অংশ নিতে দেখা যায়। গ্লাস ফোয়ারার পানি পরীক্ষা করতে নৌবাহিনীর সদস্যদের কাজ করতে দেখা গেছে। দিনভর উত্সুক নেতা-কর্মীদের পদভারে মুখরিত ছিল সম্মেলনস্থল।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ করতেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছিল আগতদের। বিকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা জানান, মঞ্চের কাছাকাছি সর্বসাধারণের প্রবেশে বিধিনিষেধ রয়েছে। মঞ্চে দিনভর চলছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মহড়া। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও মহড়ায় অংশ নিতে দেখা গেছে।

বেলা ১১টায় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ সিনিয়র নেতারা কাউন্সিলের স্থান পরিদর্শন করেন। পরে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ব্রিফিং করেন সেতুমন্ত্রী। এ সময় ওবায়দুল কাদেরকে ঘিরে হাজার হাজার নেতা-কর্মী জড়ো হন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। মঞ্চের পেছনে সেনাবাহিনীর সদস্যদের তাঁবু টানাতে ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা মঞ্চের চারদিকে অবস্থান নিয়েছেন। পৃথক পৃথক স্থানে অবস্থান নিয়েছেন তারা। গতকাল নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে মঞ্চ দেখতে ছুটে আসে উত্সুক জনতা। মঞ্চের দুই পাশে ফুলের টব সাজিয়ে রাখা হয়েছে। নির্মাণ করা হয়েছে বিদেশি অতিথি, দেশের আমন্ত্রিত অতিথি, কাউন্সিলর, ডেলিগেট ও নেতা-কর্মীদের নিরাপত্তা ছাউনি। মঞ্চের পাশে গাড়িতে করে খাবার পানির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের সম্মেলন ঘিরে মঞ্চের প্যান্ডেল ও সাজসজ্জার শতভাগ কাজ শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক। তিনি বলেন, ‘সম্মেলন ঘিরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানজুড়ে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। শান্তিপূর্ণভাবে সম্মেলন সম্পন্ন হবে বলে আমি আশাবাদী। কাউন্সিলে এবারের স্লোগান নির্ধারণ করা হয়েছে— শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে চলেছি দুর্বার, এখন সময় বাংলাদেশের মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার।’

সম্মেলনে বিদেশি অতিথিদের বসার জন্য পৃথক ব্যবস্থা করা হয়েছে। অতিথিদের মধ্যে ভারত থেকে আসছেন বিজেপির নেতা রাজ্যসভার সহ-সভাপতি বিনায়ক প্রভাকর, রাজ্যসভার সদস্য অভিনেত্রী রূপা গাঙ্গুলি ও অনির্বাণ গাঙ্গুলি। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের বর্তমান বিরোধীদলীয় নেতা গোলাম নবী আজাদ, প্রদীপ ভট্টাচার্য, সাংসদ মৌসুম নূর এবং রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির ছেলে অভিজিৎ মুখার্জি। এ ছাড়া সম্মেলনে আসছেন ভারতের তৃণমূল কংগ্রেস নেতা ও পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জি, ত্রিপুরা বিজেপির সভাপতি বিপ্লব কুমার দেব, আসাম ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের আবদুস সবুর দফাদার ও আমিনুল ইসলাম, আসাম গণপরিষদের প্রফুল্ল কুমার মোহন্ত ও ধ্রুতজ্যোতি শর্মা। আসছেন চীনের ভাইস মিনিস্টার জেন শিয়াও সংয়ের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। এ ছাড়া ভুটান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, রাশিয়া, ইতালি, অস্ট্রিয়ার এক বা একাধিক রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা সম্মেলনে যোগ দেওয়ার কথা জানিয়েছেন।

সর্বশেষ খবর