বৃহস্পতিবার, ৩ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

অবশ্যই তারেককে ফেরত আনা হবে

সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

অবশ্যই তারেককে ফেরত আনা হবে

লন্ডনে রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে আইনি পদক্ষেপসহ যা যা করা দরকার সরকার তা করবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বিকালে গণভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা অনেক দেশ থেকে এ ধরনের আসামি এনে থাকি। তারেক রহমান একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামি। দু-দুটো মামলায় তিনি সাজাপ্রাপ্ত। আরও মামলা রয়েছে। ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছে। অবশ্যই এ ধরনের সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে ফেরত নিয়ে আসব। তারেক রহমান যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয়ে আছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, একটা দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় চাইতে গেলে তাকে কিন্তু পাসপোর্ট জমা দিতে হয়। এ ছাড়া সে যে দেশের পাসপোর্টধারী সে দেশেও যেতে পারে না, কেননা ওই  দেশে গেলে তার রাজনৈতিক আশ্রয় বাতিল হয়ে যায়।

বিএনপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, তারা নিজেদের বলে সবচেয়ে বড় দল, সবচেয়ে জনপ্রিয় দল। তো তারা কি এত বড় দলে একটা মানুষ পেল না নেতৃত্বের জন্য। একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে তারা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন করে বসে আছে। রাজনীতিতে এমন দেউলিয়াপনা আর দেখেছেন! বাস্তবতা কী? বাংলাদেশের রাজনীতি কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে?

বিএনপি ঘোষণা দিয়েছে, তাদের দণ্ডিত নেত্রী খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না পারলে বিএনপি অংশ নেবে না। সেক্ষেত্রে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে কিনা— সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়ার সাজা হয়েছে কোর্টের রায়ে। আমি তাকে সাজা দেইনি। এটা আদালতের বিষয়। আমার যদি তাকে জেলে ভরার ইচ্ছাই থাকত, তাহলে ২০১৩-১৪ সালে আন্দোলন ও নির্বাচন ঠেকানোর নামে খালেদা জিয়া হুকুম দিয়ে যেভাবে সাধারণ মানুষ হত্যা করলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের পুড়িয়ে মারলেন তখনই তাকে জেলে দিতাম। কিন্তু আমি রাজনৈতিক কারণে তাকে জেলে দেইনি।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, নির্বাচন একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। কোন দল নির্বাচনে অংশ নেবে কি নেবে না সে সিদ্ধান্ত সেই দলের। এটা চাপিয়ে দেওয়ার বিষয় নয়। কোনো রাজনৈতিক দল যদি নির্বাচনে না আসে তাহলে আমরা কি জোর করে নির্বাচনে নিয়ে আসতে পারি? অথবা বলতে পারি নির্বাচনে না এলে কারাগারে পাঠাতে হবে? আমি তো খালেদা জিয়াকে রাজনৈতিক কারণে জেল দেইনি যে সমাঝোতা করে তাকে নির্বাচনে নিয়ে আসব। খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে কোকোর মৃত্যু প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর ছেলে মারা গেল। আমি তাকে সান্ত্বনা দিতে গেলাম। কিন্তু বাসার গেট বন্ধ করে দেওয়া হলো। আমাকে ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হলো না। এমন তো হতে পারত যে আমাকে ভিতর থেকে গেট আটকিয়ে ঢুকতে দেয়নি, আমিও বাইর থেকে তালা ঝুলিয়ে দিতাম, তারা যেন বাইরে যেতে-আসতে না পারে। একাদশ সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে দেশের মানুষ একাদশ সংসদ নির্বাচনে তাঁর দলকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় নিয়ে আসবে। তিনি বলেন, আমি দেশের মানুষের ওপর ছেড়ে দিলাম— যদি তারা উন্নয়নের ধারাবাহিকতা চায় তাহলে নৌকায় ভোট দেবে।

এখন কোটার দরকার নেই : কোটা বাতিল প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কোটা সংস্কার নিয়ে আন্দোলন হয়েছে; সেটা মেনেও নিয়েছি। কোটার দরকার নেই। এখন আর এটা নিয়ে কথা কেন? 

কোটা সংস্কার আন্দোলন প্রসঙ্গে এক সাংবাদিকের প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনো কথাবার্তা নেই, হঠাৎ ‘কোটা চাই না’ বিষয়ে আন্দোলনের শুরু। তাও যেনতেন আন্দোলন নয়, রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে আন্দোলন। এমনিতেই যানজট, সেখানে (শাহবাগ) তিন-তিনটি হাসপাতাল, রোগী যেতে পারছে না, এমন একটা অবস্থার সৃষ্টি। আমরা বসে থাকিনি, আমরা চেষ্টা করেছি তাদের বোঝাতে। কোটা থাকবে কী থাকবে না— এটা তো সরকারের নীতিনির্ধারণী বিষয়। যখন তারা আন্দোলন করল, সবাই যখন এমন সোচ্চার হয়ে পড়ল, কেউ তাদের থামাতে চেষ্টা করেনি। যারা আন্দোলন করেছে তাদের মধ্যে কারা মিশে যাচ্ছে তা নিয়ে কিছু বলতে দেখিনি। তিনি বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে যারা অংশগ্রহণ করেছিলেন জাতির পিতা তাদের জন্য এ পদ্ধতির ব্যবস্থা করেছিলেন। কোটা চাই না বলে হঠাৎ আন্দোলন শুরু হলো। যানজট হলো। রাস্তা দখল করে আন্দোলন হলো। শেখ হাসিনা বলেন, কোটা পদ্ধতি ছাত্রদের বিষয় নয়, সরকারের নীতিনির্ধারণের বিষয়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নামকাওয়াস্তে খরচে ছাত্ররা পড়াশোনা করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্বায়ত্তশাসিত হলেও সেখানে সরকারিভাবে সব খরচ চালানো হয়।   প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৭৫ সালের পর কোনো মুক্তিযোদ্ধা কি চাকরি পেয়েছেন? জিয়াউর রহমান কাদের নিয়ে সরকার গঠন করেন; যারা যুদ্ধাপরাধী তাদের নিয়ে। যেহেতু জাতির পিতা দিয়েছিলেন, তাই সরকারে এসে কোটা পদ্ধতি আমি রেখে দিয়েছিলাম। সেটা নিয়ে যেসব কথাবার্তা বলা হয়েছে; মুক্তিযোদ্ধাদের নানা অসম্মান করা হয়েছে, আমার পক্ষে তা মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জেলা কোটা। কোনো কোনো জেলা থেকে কোটা আছে বলেই অনেকে চাকরি পেয়েছেন। আমি বলে দিয়েছি, যেসব কোটা অপূর্ণ থাকবে তা মেধা থেকে পূরণ করা হবে। আমি লিখে দিয়েছিলাম, ৭৭ শতাংশ পর্যন্ত মেধা থেকে পূরণ হয়েছে। যারা কোটা পাচ্ছে তারাও তো মেধাবী। পাস করার পরই তো কোটা থেকে নেওয়া হয়েছে। এখন কোনো কোটা নেই। চাকরির ক্ষেত্রে কোনো জেলা যদি বাদ পড়ে আমাদের কিছু করার নেই। যারা আন্দোলন করেছে তাদের ছবিও রেকর্ড করা আছে। যদি তাদের কেউ বাদ পড়ে তাও কিছু করার নেই।

প্রসঙ্গ ছাত্রলীগের নেতৃত্ব : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, ছাত্রলীগের আগামী জাতীয় সম্মেলনে সমাঝোতা হলে প্রেসরিলিজে আর না হলে ভোটের মাধ্যমে কমিটি হবে। আগামী ১১ ও ১২ মে ছাত্রলীগের ২৯তম জাতীয় সম্মেলন হওয়ার কথা। এ সম্মেলনে ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠনটির নতুন নেতৃত্ব বাছাই করা হবে। তবে নেতৃত্ব বাছাইয়ে প্রক্রিয়া কী হবে এটা নিয়ে নানা আলোচনা হচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রলীগের আগামীর নেতৃত্ব বাছাই ভোটে নাকি প্রেস রিলিজে কমিটি দেওয়া হবে— এই ছিল প্রশ্ন। উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছাত্রলীগের কনফারেন্স হওয়ার, হবে। আমাদের নিয়ম আছে। সাধারণত প্রথমে সমঝোতা হয়। যদি সমঝোতায় হয় তাহলে প্রেসরিলিজের মাধ্যমেই কমিটি দেওয়া হবে। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে কে কে প্রার্থী, তার কাছ থেকে প্রস্তাব ফরম ছাড়া হয়ে গেছে। এরপর সবাইকে নিয়ে বসা হয়, সমঝোতার চেষ্টা করা হয়, যদি সমঝোতা না হয়, ভোট হয়।  প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। এ ছাড়াও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও মন্ত্রী এবং উপদেষ্টাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুল মতিন খসরু, আবদুল মান্নান খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমানসহ কেন্দ্রীয় ও সহযোগী সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকরা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়াও সিনিয়র সাংবাদিক ও সাংবাদিক নেতাদের মধ্যে  উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম, কালের কণ্ঠ সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, যুগান্তর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সাইফুল আলম, বাসসের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, আমাদের অর্থনীতি সম্পাদক নাইমুল ইসলাম খান, ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, বৈশাখী টিভির হেড অব নিউজ অশোক চৌধুরী, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি মুহম্মদ শফিকুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন।

সড়কের নিয়ম পথচারীকেও মানতে হবে : দুর্ঘটনার জন্য শুধু গাড়িচালকদের দোষ না দিয়ে পথচারীদেরও সড়কের নিয়মগুলো মানার ওপর জোর দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, রাস্তায় চলার কিছু নিয়ম আছে, তা আমরা কতটা মানি? একটা গাড়ি দ্রুতগতিতে আসছে, আমরা হাত একটা তুলে রাস্তায় নেমে যাই। যারা পথচারী, তাদেরও কিছু রুলস জানা দরকার, মানা দরকার। পথচারীরা যেন নিয়ম জানে ও মানে, সে জন্য জনসচেতনতা তৈরিতে গণমাধ্যমের সহায়তা চেয়েছেন তিনি। দুর্ঘটনার পরপরই গাড়িচালককে না পিটিয়ে আইনের হাতে সোপর্দ করতেও বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকার সড়কে ট্রাফিক আইন না মেনে পথচারীদের পারাপারের বিষয়টি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার এই কথাগুলো অনেকে পছন্দ করবেন না, কিন্তু যা বাস্তব, তা-ই বলছি। রাস্তায় চলার নিয়ম আছে, তা আমরা কতটা মানি? একটা গাড়ি দ্রুতগতিতে আসছে, আমরা হাত একটা তুলে রাস্তায় নেমে গেলাম। যারা পথচারী, তাদেরও কিছু রুলস জানা দরকার, মানা দরকার। শেখ হাসিনা বলেন, আপনি বাসে চড়ে যাচ্ছেন, কেন আপনি হাত বের করে যাবেন? আপনারা (সাংবাদিক) যার হাত গেল, তার জন্য কান্নাকাটি করছেন; কিন্তু সে যে নিয়ম মানছে না, সে কথা তো বলছেন না। তিনি বলেন, যারা পারাপার হয়, তারাও নিয়ম মানে কিনা, সেদিকে আপনারা একটু দেখেন। হেলমেট ছাড়া মোটরসাইকেলে এবং সিটবেল্ট না বেঁধে গাড়িতে চড়াও দুর্ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতি বাড়িয়ে দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। সড়ক দুর্ঘটনা হলেই আইন হাতে নিয়ে চালককে মারধর না করতে সবার প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। এক্ষেত্রে আইন অনুযায়ী দায়ী চালকের শাস্তির কথা বলেন তিনি। সড়ক পরিবহন আইনটি প্রণয়ন প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।

সৌদি জোটে গেলেও যুদ্ধে জড়াবে না বাংলাদেশ : সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটে অংশ নিলেও বাংলাদেশ কোনো যুদ্ধে জড়াবে না বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জানিয়েছেন, জাতিসংঘের অধীনে হলেই কেবল যুদ্ধে জড়াবে বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটে গিয়ে মাইন পরিষ্কার বা অন্য কাজগুলো করবে বাংলাদেশের সেনারা। কিন্তু তারা যুদ্ধ করবে না।  

নারীর ক্ষমতায়ন বিষয়ে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে : নারীর ক্ষমতায়ন বিষয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিনের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভবিষ্যতে বাংলাদেশে পুরুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কোনো আন্দোলন হলে তিনি পুরুষদের পক্ষেই থাকবেন। প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যে সংবাদ সম্মেলনে হাসির রোল পড়ে যায়। প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক বাংলাদেশের নারীদের পদে পদে ‘বাধার সম্মুখীন ও পুরুষদের নেতিবাচক’ দৃষ্টিভঙ্গির উত্তরণে সরকার উদ্যোগী হবে কিনা তা জানতে চান। জবাবে প্রধানমন্ত্রী নারীর ক্ষমতায়নে নানা বাধার কথা তুলে ধরেন। তিনি ইউনিয়ন পরিষদে সংরক্ষিত আসনের মহিলা সদস্য নির্বাচন, প্রমিলা ফুটবল টিম চালু করতে গিয়ে যেসব বাধার মুখোমুখি হয়েছিলেন তা উল্লেখ করেন। উল্লেখ করেন, তিনি নারী হয়ে রাজনীতিতে এসে যে বাধার সম্মুখীন হয়েছিলেন তার কথা। তিনি বলেন, ‘এসব বাধা নারীকেই আত্মবিশ্বাস ও দৃঢ়তা নিয়ে মোকাবিলা করতে হয়। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে। শিক্ষাক্ষেত্রে এখন ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা এগিয়ে। ছেলেরা কেন পিছিয়ে আছে তা খুঁজে বের করতে বলেছি আমি। নারী উদ্যোক্তার সংখ্যা বাড়ছে, আরও বাড়াতে সরকার নানা উদ্যোগ নিচ্ছে। নারীকে যদি শিক্ষা-দীক্ষায় অগ্রসর না করতে পারি, তবে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নারীর প্রতি যে দৃষ্টিভঙ্গি তা তো নির্ভর করে অবস্থার ওপর। আমি যখন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মেয়েদের সংরক্ষিত আসন করে দিই, তখন তারা অংশগ্রহণ করবে কিনা, তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়ে গেল। জামায়াতসহ অনেক রাজনৈতিক দল থেকে তীব্র প্রতিবাদ এসেছিল। প্রার্থীদের পরিবারের পক্ষ থেকেও বাধা এসেছিল। তবে আমি জানতাম একবার শুরু করা হলে, আজ যারা বাধা দিচ্ছে, কালই তারা পক্ষে নামবে। পরে নির্বাচনের সময় দেখেছিলাম, যে শ্বশুর-ভাসুর বিরোধিতা করেছিল তারাই কুপি বাতি নিয়ে পাটখড়িতে আগুন দিয়ে মশাল জ্বালিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চেয়েছেন। পরিবর্তনটা একবারেই আসে না। প্রমীলা ফুটবল টিম করতে গিয়েও এ ধরনের বাধার সম্মুখীন হয়েছিলাম। নারী হয়ে প্রেস ক্লাবের মতো জায়গায় বিজয়ী হয়ে আসা বিরাট ব্যাপার বলে ফরিদা ইয়াসমিনকে উদ্দেশ করে তিনি মন্তব্য করেন। নারী সমাজের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, শুধু আইন করে আর জোরজবরদস্তি করে নারীর ক্ষমতায়ন হবে না। অনুশীলন আর কাজের মধ্য দিয়েই নারীর ক্ষমতায়ন ফিরে আসবে। আমরা দাবি করতেই থাকব, আবার নারীদের জন্য সব আলাদা আলাদা চাইব, তাহলে আমরা শক্তিটা দেখাব কীভাবে! মনের জোর ও আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এ বিষয়ে তাদের অবস্থান অত্যন্ত পরিষ্কার। তারাও চায়, ১১ লাখ রোহিঙ্গা যারা বাংলাদেশে অবস্থান করছে, তারা যেন নিজ দেশে ফিরে যায়। আমাদের সঙ্গে বৈঠকের পর তারা মিয়ানমারে গেছে, সে দেশের সরকারের সঙ্গে আলোচনা করছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা যেমন রোহিঙ্গা ইস্যুতে আমাদের উদ্যোগের প্রশংসা করেছে, তেমনি রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার সরকারকে চাপ দেবে। আশা করছি, দ্রুত এটির সমাধান হবে।

সর্বশেষ খবর