মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। মার্চের শেষ দিকে গ্রামের বাড়ি মৌলভীবাজার চলে আসি। এপ্রিলের শুরুতেই গিয়ে যুদ্ধে যোগ দিই। আমার সঙ্গে দুই ভাই এবং ভগ্নিপতিও যোগ দেয় যুদ্ধে। এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে ৩০-৩২ জনের একটি টিম ভারতের কৈলাশর চলে যাই। যাওয়ার পরে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ি সবাই। আমরা কয়েকজন কৈলাশরের একটি মসজিদে উঠি। আমরা তিন ভাই আর ভগ্নিপতি একসঙ্গেই ছিলাম। আসার সময় তেমন টাকা-পয়সা সঙ্গে আনতে পারিনি। মায়ের কিছু গহনাই ছিল সম্বল। ট্রেনিং করে ফিরে মৌলভীবাজারকে শত্রুমুক্ত করতে ঝাঁপিয়ে পড়ি যুদ্ধে। হঠাৎ করে আর্থিক সংকটে পড়ে যাই বিভিন্ন ক্যাম্পের খরচ মেটাতে। এমন পরিস্থিতিতে সিলেটে সেক্টর কমান্ডারের কাছে টাকা আনতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। তখন প্রতি মাসে ক্যাম্পে ২০ টাকা খাওয়া খরচ ছিল। সুলেমান নামের একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিল মৌলভীবাজার সরকারি স্কুল ক্যাম্পের চিফ। আমি সুলেমানকে আমার সঙ্গে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করি। কিন্তু সুলেমান বলল, ভাই অনেক দিন হয় বোনকে দেখি না। আমি আজ একটু বাড়িতে গিয়ে বোনটার মুখ দেখে আসি। ও ওর ছোট বোনটাকে খুব ভালোবাসত। আমি তখন মহসিন আলীকে (সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী) সঙ্গে করে সিলেট চলে গেলাম। এর মধ্যে ঘটে গেল মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। ইউনুস নামের একজন সাহসী মুক্তিযোদ্ধা কুড়িয়ে পাওয়া একটি গ্রেনেড দেখাতে নিয়ে গেল সুলেমানের কাছে। সুলেমান এটা নেড়েচেড়ে দেখছিল। তার পাশেই জমানো ছিল বিপুল পরিমাণ মাইন ও গোলাবারুদ। হঠাৎ সেখানে আমার ছোট ভাই সালাম চৌধুরী এলে ইউনুস তাকে নিয়ে রান্নাঘরের দিকে যান খাবারে ডিম বরাদ্দের বিষয়ে কথা বলতে। এরই মধ্যে সুলেমানের হাত থেকে গ্রেনেডটি পড়ে বিস্ফোরিত হয়। সঙ্গে সঙ্গে সব গোলাবারুদ আর মাইনেরও বিস্ফোরণ ঘটে। মুহূর্তেই পুরো ক্যাম্পে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। মারা যান ২২ জন মুক্তিযোদ্ধা। ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান ইউনুস আর সালাম। তখন আমরা পাকিস্তানি সেনাদের দখলের কারণে মৌলভীবাজার থেকে সরাসরি সিলেট যেতে পারতাম না। ভারত ঘুরে যেতে হতো। সিলেট থেকে টাকা নিয়ে ফেরার পথে দূর থেকে শুনতে পাই সবাই বলছে সব শেষ হয়ে গেছে। কাছে এসে দেখি সত্যিই সব শেষ হয়ে গেছে। একসঙ্গে আমি আমার ২২ জন সহযোদ্ধাকে হারিয়ে ফেলি। এখনো আমাকে সেই দুঃসহ স্মৃতি তাড়া করে। তরুণদের এই ইতিহাসগুলো জানতে হবে। দেশ স্বাধীন করতে টগবগে তরুণরা দিয়ে গেছে তাদের বুকের তাজা রক্ত। নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব মুক্তিযোদ্ধাদের। অনুলেখক : জয়শ্রী ভাদুড়ী।
শিরোনাম
- ১৫ মাসে অন্তর্বর্তী সরকার যা করেছে, অতীতে কেউ করতে পারেনি : প্রেস সচিব
- শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড ‘খুবই উদ্বেগজনক’ ঘটনা: শশী থারুর
- পারমাণবিক শক্তি অর্জনের পথে সৌদি আরব?
- সরকারের সমালোচনা: ভেনেজুয়েলায় নারী চিকিৎসকের ৩০ বছরের কারাদণ্ড
- রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইউক্রেনে হতাহত ১৮
- শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরও যেসব মামলা আছে ট্রাইব্যুনালে
- শেখ হাসিনার রায় নিয়ে যা বলল জাতিসংঘ
- গাজায় আন্তর্জাতিক বাহিনী মোতায়েনে জাতিসংঘের অনুমোদন, হামাসের প্রত্যাখ্যান
- আমার ছেলের খুনীর ফাঁসি যেন দেখে যেতে পারি: আবু সাঈদের বাবা
- দিল্লি বিস্ফোরণে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৫, গ্রেফতার আরও এক কাশ্মীরি
- মালয়েশিয়ায় শর্টপিচ ক্রিকেট টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন সাইবারজায়া ইউনিভার্সিটি
- আফ্রিকার ছয় দেশে আছে রুশ সেনার উপস্থিতি: রাষ্ট্রীয় টিভি
- ‘খালেদা জিয়াকে দেশের সেরা জয় উপহার দিতে চাই’
- উইঘুর যোদ্ধাদের চীনের কাছে হস্তান্তর করবে সিরিয়া
- ‘একটি দল ক্ষমতায় যেতে প্রলাপ বকছে’
- সিরিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় পাশে থাকবে চীন
- বগুড়ায় কোলগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ে জরাজীর্ণ ভবনে চলছে পাঠদান
- শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় নিয়ে যা বলল ভারত
- মোংলায় জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসকরণ বিষয়ক সমন্বয় সভা
- আকাশ প্রতিরক্ষা ও যুদ্ধবিমান চুক্তি চূড়ান্ত করতে ফ্রান্সে জেলেনস্কি
২২ সহযোদ্ধার মৃত্যুস্মৃতি এখনো তাড়া করে
অধ্যক্ষ আহাদ চৌধুরী
প্রিন্ট ভার্সন
এই বিভাগের আরও খবর