মিয়ানমারে দুর্ঘটনায় পড়ার পর উড়োজাহাজ সংকটে পড়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। দুর্ঘটনার পর অভ্যন্তরীণ রুটের সাতটি ফ্লাইট বাতিল করতে হয়েছে জাতীয় পতাকাবাহী একমাত্র আকাশ পরিবহন সংস্থাটিকে। বিমানের জনসংযোগ শাখার জিএম শাকিল মেরাজ জানান, হঠাৎ করে একটি উড়োজাহাজ বিকল। আগামী সোমবার পর্যন্ত ঢাকা থেকে সৈয়দপুর, সিলেট, যশোর ও রাজশাহী রুটে সাতটি ফ্লাইট বাতিল করতে হয়েছে। বিমানের একটি উড়োজাহাজ ৩৫ জন আরোহী নিয়ে গত বুধবার সন্ধ্যায় খারাপ আবহাওয়ার মধ্যে মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের সময় রানওয়ে থেকে ছিটকে পড়ে। দুর্ঘটনায় কারও মৃত্যু না হলেও ১৯ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হয়। মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় কানাডার কোম্পানি বম্বার্ডিয়ারের তৈরি ড্যাশ-৮ উড়োজাহাজটি। মিয়ানমারে বিমান দুর্ঘটনায় আহত পাইলট ও কেবিন ক্রুসহ ১০ আরোহী গতরাত পৌনে ১১টার দিকে একটি বিশেষ ফ্লাইটে করে দেশে ফেরেন। এদের মধ্যে দুর্ঘটনাকবলিত বিমানের দুই পাইলট ও দুজন কেবিন ক্রু রয়েছেন। আহত আরোহীদের দেশে ফিরিয়ে আনতে গতকাল বিকাল ৪টার দিকে বিমানের একটি বিশেষ ফ্লাইট ইয়াঙ্গুন রওনা হয়। মিয়ানমার পৌঁছানোর পর আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে ফ্লাইটটি বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা হয়। এভিয়েশন সেইফটি নেটওয়ার্ক জানিয়েছে, ওই বিমানে আগুন না ধরলেও ফিউজিলাজ ভেঙে তিন টুকরো হয়েছে। ফরোয়ার্ড প্যাসেঞ্জার ডোরের পেছনে এবং রিয়ার সার্ভিস ডোরের ঠিক পেছনের কাঠামো ভেঙে গেছে। উড়োজাহাজের তলা ফেটে গেছে। ডানপাশের ডানাও জোড়া থেকে ভেঙে গেছে। এমনিতে প্রতি বছর ঈদের সময় অভ্যন্তরীণ রুটগুলোতে বাড়তি ফ্লাইট পরিচালনা করে বিমান। তিনটি ড্যাশ-৮ উড়োজাহাজ দিয়ে ঢাকা থেকে সৈয়দপুর, রাজশাহী, বরিশাল, যশোর, সিলেট, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার রুটে এবং বোয়িং ৭৮৭, ৭৭৭ ও ৭৩৭ উড়োজাহাজ দিয়ে সিলেট, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার রুটে ফ্লাইট চালানো হয়। এবার উড়োজাহাজ নিয়ে সংকট তৈরি হওয়ায় অতিরিক্ত ফ্লাইট পরিচালনার বিষয়টি অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। তবে পরিস্থিতি সামাল দিতে দুটো উড়োজাহাজ ভাড়া আনা হচ্ছে জানিয়ে শাকিল মেরাজ বলেন, আলাফকো এভিয়েশন লিজ অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানির কাছ থেকে ছয় বছরের জন্য দুটি বোয়িং ৭৩৭ এয়ারক্র্যাফট লিজ নেওয়া হচ্ছে। এ দুটো উড়োজাহাজ দিয়ে সিলেট, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সৈয়দপুর, রাজশাহী, বরিশাল ও যশোরে ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে জানিয়ে বিমানের জনসংযোগ শাখার জিএম বলেন, ‘তখন এয়ারক্র্যাফটের সংকট আর থাকবে না, যাত্রীদেরও অসুবিধা হবে না।’ রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী সংস্থা বিমানের বহরে বর্তমানে ১৩টি উড়োজাহাজ রয়েছে। এর মধ্যে দুটি বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার, চারটি বোয়িং ৭৭৭-৩০০, চারটি ৭৩৭-৮০০ ও তিনটি ড্যাশ-৮।
এর মধ্যে একটি বোয়িং ৭৩৭ মেরামতের জন্য গ্রাউন্ডেড। আর মিয়ানমারে দুর্ঘটনায় একটি ড্যাশ-৮ উড়োজাহাজ অকেজো হয়ে গেছে।