রবিবার, ১৯ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

জাকাত

মোহাম্মদ আবদুল মজিদ

জাকাত

জাকাত ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের একটি। মাহে রমজানে প্রতিটি ইবাদতে ও নেক আমলে যেহেতু অধিক সওয়াব  মিলে সেহেতু মাহে রমজানকে জাকাত আদায়ের মাস বা মওসুম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। রমজান মাস শেষে ঈদ উদযাপনের আগে ফিতরা প্রদানের যে বিধান রয়েছে তা জাকাত থেকে আলাদা এবং সক্ষম ব্যক্তির জন্য জাকাত দান করা ফরজ। আরবি শব্দ জাকাতের অর্থ পবিত্রতা, ক্রমবৃদ্ধি, আধিক্য ইত্যাদি। জাকাত জাকাতদাতার ধনসম্পদের প্রবৃদ্ধি সাধন করে, পবিত্র করে, ক্রমবৃদ্ধি ঘটায়। জাকাত প্রদান শুধু ধনসম্পদের সমৃদ্ধি সাধনেই সীমাবদ্ধ থাকে না, জাকাত দানকারীর মনমানসিকতার ধ্যান-ধারণার উৎকর্ষ সাধিত হয়। আল কোরআনে সালাত বা নামাজ কায়েমের নির্দেশের পরপরই প্রায় ক্ষেত্রেই জাকাত আদায়ের কথা এসেছে। নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদ বা সঞ্চয় থাকলে জাকাত আদায় আবশ্যক হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু জাকাতের প্রাপক কারা এ বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বনের অবকাশ রয়েছে। দরিদ্র আত্মীয়স্বজন, দুস্থজন সাধারণত জাকাতের দাবিদার। আল্লাহ রব্বুল আলামিন আল কোরআনে জাকাতের  প্রাপক হিসেবে আরেক বিশেষ শ্রেণির দাবিদারের কথা বলেছেন। ‘ইহা প্রাপ্য অভাবগ্রস্ত লোকদের, যারা আল্লাহর পথে এমনভাবে ব্যাপৃত যে দেশময় ঘোরাফেরা করতে পারে না; যাচ্ঞা না করার জন্য অজ্ঞ লোকেরা তাদের অভাবমুক্ত বলে মনে করে, তুমি তাদের লক্ষণ দেখে চিনতে পারবে। তারা মানুষের কাছে নাছোড় হয়ে যাচ্ঞা করে না। যে ধনসম্পদ তোমরা ব্যয় কর আল্লাহ তা সবিশেষ অবহিত।’ (সূরা বাকারা। আয়াত ২৭৩)। অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তি বা পরিবার আছে যারা সাহায্যপ্রার্থী হতে পারে না সামাজিক মান-মর্যাদার কারণে, কিংবা তারা সংকোচ বোধ করে সাহায্য চাইতে, অথচ দেখলে বোঝা যায় তারা দৈন্যদশায় আছে এবং তাদের সাহায্যের প্রয়োজন।

নামাজ ও রোজা হজরত আদম (আ.) থেকে শুরু করে শেষনবী (সা.) পর্যন্ত প্রত্যেক নবী ও রসুলের শরিয়তেই ফরজ রয়েছে। রসুল (সা.)-এর পূর্ববর্তী নবী ও রসুলদের সময়েও জাকাত আদায়ের নির্দেশ ছিল। তবে বিভিন্ন শরিয়তে এর আকার-আকৃতি ও খুঁটিনাটি বিষয়াদি ছিল বিভিন্ন রূপ । হজরত ঈসা (আ.)-এর শরিয়তেও নামাজ ও জাকাত ফরজ ছিল। কোরআনে উল্লিখিত হয়েছে-  ‘যেখানেই আামি (হজরত ঈসা) থাকি না কেন তিনি আমাকে বরকতময় করেছেন, তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন যতদিন জীবিত থাকি তত দিন সালাত ও জাকাত আদায় করতে’ (সূরা মারিয়াম। আয়াত ৩১) প্রশ্ন হতে পারে যে , ঈসা (আ.) কোনো সময় মালদার হননি। তিনি গৃহ নির্মাণ করেননি এবং অর্থকড়িও সঞ্চয় করেননি। এমতাবস্থায় তাকে জাকাতের আদেশ দেওয়ার মানে কী?  উদ্দেশ্য সুস্পষ্ট যে, মালদারের ওপর জাকাত ফরজ- এটা ছিল তার শরিয়তের আইন। ঈসা (আ.)ও এই আইনের আওতাভুক্ত ছিলেন যে, কোনো নিসাব পরিমাণ মাল একত্রিত হলে তাকেও জাকাত আদায় করতে হবে। ‘সে (হজরত ইসমাঈল) তার পরিজনবর্গকে সালাত ও জাকাতের নির্দেশ দিত এবং সে ছিল তার প্রতিপালকের সন্তোষভাজন’ (সূরা মারিয়াম। আয়াত ৫৫)। সূরা আম্বিয়ার ৭২ নং আয়াতে উল্লেখ আছে হজরত ইবরাহিম, হজরত ইসহাক এবং হজরত ইয়াকুবকেও জাকাত প্রদানের জন্যও ওহি নাজিল করা হয়েছিল। জাকাত আদায়কে সম্পদশালী ব্যক্তির পক্ষ থেকে  দারিদ্র্যের প্রতি সাহায্যের আদেশ প্রতীয়মান হলেও এটি মূলত জাকাত আদায়কারীর কল্যাণ প্রবৃদ্ধির জন্যই। আল কোরআনে  স্পষ্ট করা  হয়েছে- ‘ধনে বৃদ্ধি পাবে বলে তোমরা সুদে যা দিয়ে থাক, আল্লাহর দৃষ্টিতে তা ধনসম্পদ বৃদ্ধি করে না; কিন্তু আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য যে জাকাত তোমরা দিয়ে থাক তাই-ই বৃদ্ধি পায়, তারাই সমৃদ্ধিশালী’ (সূরা রূম। আয়াত ৩৯)

লেখক : সাবেক সচিব ও এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর