শনিবার, ২ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

দুদকের নজর এবার সিঙ্গাপুরে

ক্যাসিনোকাণ্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক

দুদকের নজর এবার সিঙ্গাপুরে

সিঙ্গাপুরের বিভিন্ন ক্যাসিনোতে বাংলাদেশের যারা জুয়া খেলেছেন এবার তাদের তথ্য জানতে মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দেশটির রাষ্ট্রীয় দুর্নীতি দমন সংস্থা করাপ্ট প্র্যাকটিসেস ইনভেস্টিগেশন ব্যুরোর (সিপিআইবি) পরিচালকের কাছে এ বিষয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন দুদকের মহাপরিচালক (মানি লন্ডারিং) আ ন ম আল ফিরোজ। চিঠিতে সেখানকার ক্যাসিনোতে গত পাঁচ বছরে প্রবেশকারী বাংলাদেশিদের পাসপোর্ট নম্বরসহ তালিকা দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে বলে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে নিশ্চিত করেছেন কমিশনের মহাপরিচালক (মানি লন্ডারিং) আ ন ম আল ফিরোজ। তিনি বলেন, আমরা দুর্নীতি দমনে সিপিআইবির সহযোগিতা চাই। দুদক সূত্র জানিয়েছে, সিপিআইবির প্রধান উয়ং হং কুনের কাছে বুধবার কমিশনের পাঠানো চিঠিতে সিঙ্গাপুরের বিভিন্ন ক্যাসিনোতে বাংলাদেশি জুয়াড়িদের বিষয়ে তথ্য চাওয়া হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশে যারা অবৈধভাবে সম্পদের মালিক হয়েছে এবং বিভিন্ন সময় বিদেশে অর্থ পাচার করেছে তাদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের শূন্য সহনশীলতার নীতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে দুদকও সর্বাত্মক অভিযান শুরু করেছে। দুর্নীতিবাজরা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করে দেশের বাইরে বিপুল পরিমাণ সম্পদ পাচার করেছেন বলে তথ্য রয়েছে। এ অভিযানে গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদে সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে অর্থ পাচারের কথা বেরিয়ে এসেছে। তারা স্বীকার করেছেন, সিঙ্গাপুরে বিপুল তথ্য অবৈধভাবে পাচার করে সেখানকার ক্যাসিনোগুলোয় জুয়া খেলেছেন। দুদকের চিঠিতে বলা হয়েছে, দুর্নীতির সঠিক তথ্য উদ?ঘাটনে সিঙ্গাপুরের মেরিনা বেসহ অন্যান্য ক্যাসিনোতে যেসব বাংলাদেশি জুয়া  খেলেছেন, তাদের তথ্য দরকার। সেখানকার ক্যাসিনোতে বিদেশিদের প্রবেশ করতে হলে পাসপোর্টের তথ্য দিতে হয়। এসব বাংলাদেশি জুয়াড়ির তালিকা চেয়ে চিঠিতে বলা হয়, সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে সিঙ্গাপুরের মেরিনা বে এবং অন্যান্য স্থানে ক্যাসিনোতে জুয়া খেলা ব্যক্তিদের পূর্ণ তালিকা দুদকের প্রয়োজন। জাতিসংঘের দুর্নীতিবিরোধী কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুর দুর্নীতির বিরুদ্ধে যৌথভাবে লড়াই করতে পারে। কনভেনশনের ৪৮ ধারায় দুই দেশের দুর্নীতিবিরোধী সংস্থার মধ্যে আইনি কার্যক্রমে সহযোগিতার কথা বলা হয়েছে। এর আগে ১৮ সেপ্টেম্বর ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু করে র‌্যাব। এরই মধ্যে গ্রেফতার হন যুবলীগ নেতা ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট, খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, কথিত যুবলীগ নেতা ও ঠিকাদার জি কে শামীম, মোহামেডান ক্লাবের ডাইরেক্টর ইনচার্জ মো. লোকমান হোসেন ভূঁইয়া, সম্রাটের সহযোগী এনামুল হক আরমান, কলাবাগান ক্রীড়াচক্রের সভাপতি  মোহাম্মদ শফিকুল আলম ফিরোজ, অনলাইন ক্যাসিনোর  হোতা সেলিম প্রধান এবং তিন ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান ওরফে পাগলা মিজান, তারেকুজ্জামান রাজীব ও ময়নুল হক মঞ্জু। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে র‌্যাব ও পুলিশের প্রায় অর্ধশত অভিযানে তিন শতাধিক অপরাধীকে  গ্রেফতার করা হয়েছে। অভিযানে কোটি কোটি নগদ টাকার পাশাপাশি বহু মূল্যের ক্যাসিনো সামগ্রী উদ্ধার করা হয়। গণমাধ্যমেও এ বিষয়ে বিভিন্ন খবর প্রকাশ হতে থাকে। এরই মধ্যে ক্যাসিনোবাজদের অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়টি কমিশনের তফসিলভুক্ত বলে টিম গঠন করে অনুসন্ধানে মাঠে নামে দুদক। তিন দফায় সংসদ সদস্যসহ ৩৪ জনের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি করে সংস্থাটি। অবৈধ সম্পদের খোঁজ পেয়ে এরই মধ্যে কয়েকটি মামলা করা হয়েছে। চার শতাধিক ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে দিয়েছে দুদক। বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের অনেকে সিঙ্গাপুরের বিভিন্ন ক্যাসিনোতে জুয়া খেলতে যেতেন। সেখানে ভিআইপি মর্যাদা পাওয়া বাাংলাদেশি জুয়াড়িরা লাখ লাখ ডলারের জুয়া খেলতেন। এসব সব তথ্যের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য দুদকের এই চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

সর্বশেষ খবর