শিরোনাম
মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

কাশ্মীর ইস্যুতে উত্তাল ভারতের সংসদ

নয়াদিল্লি প্রতিনিধি

ভারতীয় সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভা শীতকালীন অধিবেশন শুরুর প্রথম দিনই গতকাল কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা রক্ষার প্রশ্নে ও অন্যান্য ইস্যুতে উত্তাল হয়ে ওঠে। জম্মু-কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার, সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ন্যাশনাল কনফারেন্স এমপি ফারুক আবদুল্লাকে গৃহবন্দী করে রাখার বিরুদ্ধে কংগ্রেস ও তৃণমূল একযোগে কেন্দ্রীয় সরকারকে নিশানা করে গর্জে ওঠে।

কাশ্মীরে আবার ৩৭০ ধারা ফিরিয়ে আনার মাধ্যমে ওই রাজ্যের বিশেষ মর্যাদা প্রতিষ্ঠার দাবিতে এদিন মুলতবি প্রস্তাব আনে কংগ্রেস। অন্যদিকে জম্মু-কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী, সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা ন্যাশনাল কনফারেন্স এমপি ফারুক আবদুল্লাকে গৃহবন্দী করে রাখার ঘটনায় মুলতবি প্রস্তাব আনে তৃণমূল কংগ্রেস। মহারাষ্ট্রে অতি বর্ষণের জেরে চাষের ক্ষতি নিয়ে মুলতবি প্রস্তাব আনে শিবসেনাও।

লোকসভায় বিরোধী দলনেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী (কংগ্রেস) বলেন, ‘জম্মু-কাশ্মীরের মানুষ চায় যে আমরাও সেখানে যাই কিন্তু এই কেন্দ্রীয় সরকার আমাদের নেতা রাহুল গান্ধীকে বিমানবন্দরে আটকে দিচ্ছে। অন্য সাংসদদেরও সেখানে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। অথচ ইউরোপ থেকে বিদেশি অতিথিদের ভাড়া করে নিয়ে এসে কাশ্মীর ভ্রমণ করানো হচ্ছে। দেখানো হচ্ছে যে, উপত্যকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। এটা কি আমাদের অপমান নয়? ফারুক আবদুল্লাকে এতদিন ধরে আটকে রাখার কী প্রয়োজন আছে? কেন্দ্রীয় সরকারই বলেছে যে, জম্মু-কাশ্মীর আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়, অথচ সরকারই এই ইস্যুকে আন্তর্জাতিক করে তুলেছে। কাশ্মীরে জওয়ান খুন হচ্ছে, বাইরের শ্রমিকদের খুন হতে হচ্ছে।’

গান্ধী পরিবারের ওপর থেকে নিরাপত্তার দায়িত্ব স্পেশাল প্রোটেকশন গ্রুপ (এসপিজি) প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সরব হয় কংগ্রেস। অধীর রঞ্জন চৌধুরী প্রশ্ন তোলেন, ‘আমাদের নেতা সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী, মনমোহন সিং-প্রত্যেকের ওপর থেকেই সুরক্ষা কবজ কেন তুলে নেওয়া হয়েছে। ইন্দিরা গান্ধী থেকে শুরু করে রাজীব গান্ধী-যে গান্ধী পরিবার দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছে-তাদের নিরাপত্তা কেন এভাবে তুলে নেওয়া হলো? কেন এভাবে তাদের নেতাদের অপমান করা হয়েছে সেই প্রশ্নও তোলেন তিনি।

সৌগত রায় (তৃণমূল) বলেন,  ‘ফারুক আবদুল্লা আজ সংসদে উপস্থিত নেই। গত ৫ আগস্ট থেকে ফারুক আবদুল্লাকে আটকে রাখা হয়েছে। তার এখন ৮৩ বছর বয়স। অথচ সরকারের তরফে তার আটকের ব্যাপারে কোনো কারণ দর্শায়নি। আমি চাই যে সরকার হয় ফারুককে মুক্তি দিক, না হয় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ নিজে এসে সংসদে দাঁড়িয়ে এ ব্যাপারে বিবৃতি দিক।’

এ সময় লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার আবেদন জানালে কংগ্রেস, এনসি ও ডিএমকে সাংসদরাও স্লোগান তুলতে থাকেন ‘বিরোধীদের ওপর হামলা বন্ধ করতে হবে, ফারুক আবদুল্লাকে মুক্তি দিতে হবে।’ স্পিকার বলেন ‘আমি সব বিষয় নিয়েই আলোচনা করতে রাজি। আপনারা আপনাদের আসনে যান...। এটা সংসদ, স্লোগানের জায়গা নয়। এটা বিতর্ক, আলোচনার জায়গা।’ 

ফারুক আবদুল্লাকে গৃহবন্দী করে রাখার ঘটনাকে ‘অবৈধ’ আখ্যায়িত করে লোকসভার স্পিকারকে উদ্দেশ্য করে ডিএমকে সাংসদ টি আর বালু জানান, ‘এই ঘটনায় আপনার হস্তক্ষেপ জরুরি।’

বিরোধীদের হট্টগোল, স্লোগানের মধ্যেই তৃণমূল ফারুকের মুক্তির দাবিতে মুলতবি প্রস্তাব আনে। এদিকে সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপের পর থেকে প্রায় ১০০ দিনের বেশি সময় ধরে কাশ্মীরে অচলাবস্থা জারির জন্য সংসদের ওয়েলে নেমে কংগ্রেস, ডিএমকে, ন্যাশনাল কনফারেন্স সাংসদের হট্টগোলের কারণে বিকাল ৩টা পর্যন্ত লোকসভার অধিবেশন মুলতবি হয়ে যায়।

সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভার ২৫০তম অধিবেশন উপলক্ষে এদিন দুপুরে রাজ্যসভায় বক্তব্য রাখতে প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, ‘রাজ্যসভা হলো সংসদের দ্বিতীয় কক্ষ, কিন্তু গৌণ নয়। এই হাউসের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটা ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় অবকাঠামোর আত্মা- একে কোনো মতেই নষ্ট করা যাবে না।’ লোকসভার শীতকালীন অধিবেশন চলবে ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত।

সর্বশেষ খবর