বুধবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতি হিসেবে সঠিক কথাটি বলে আসছিল বাংলাদেশ

জিন্নাতুন নূর

রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতি হিসেবে সঠিক কথাটি বলে আসছিল বাংলাদেশ

হুমায়ুন কবির

মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালানো হয়েছে- আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে যদি এমন সিদ্ধান্ত হয় তাহলে বাংলাদেশিরা দুই-আড়াই বছর ধরে এই ইস্যুতে যা বলে আসছিল তা প্রতিষ্ঠিত হবে। আর তা হলে বাংলাদেশ রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতি হিসেবে যে সঠিক কথাটি বলে আসছিল তা প্রমাণিত হবে। সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন। সাবেক এই রাষ্ট্রদূত বলেন, নেদারল্যান্ডসের হেগে জাতিসংঘের ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে) মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলার যে শুনানি শুরু হয়েছে তা থেকে তিনটি বিষয় তিনি প্রত্যাশা করছেন। তিনি বলেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কয়েক বছর ধরে বিশেষ করে ২০১৭ সালের পর থেকে গণহত্যা, জাতিগত নিধন, অত্যাচার ও নির্যাতন হয়েছে। আর এ অপরাধগুলো যেহেতু এখন আন্তর্জাতিকভাবে আদালতে গেছে সেখানে অপরাধগুলোর দায় মিয়ানমারের ওপর যাক কিংবা মিয়ানমার যে এর সঙ্গে জড়িত সে বিষয়টি প্রতিষ্ঠিত হোক, এটাই আমার প্রথম প্রত্যাশা। দ্বিতীয় প্রত্যাশা হলো, এ ধরনের অপরাধ যাতে ভবিষ্যতে না ঘটে এবং বিভিন্ন দেশের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী যাতে তাদের অধিকার বঞ্চিত হয়ে এ ধরনের নির্যাতনের শিকার না হয় এ জন্য আন্তর্জাতিক আদালত যেন রোহিঙ্গাদের পক্ষে ব্যবস্থা নেয়। যদি তা-ই হয় তাহলে বিশ্বের কাছে একটি সময়োপযোগী ভালো বার্তা পেঁৗঁছাবে। তৃতীয়ত, মিয়ানমারে যারা অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিল তারা কিন্তু এখন পর্যন্ত এ অপরাধে নিজেদের দায় স্বীকার করেনি। তারা হালকাভাবে দু-একবার দু-একটি ঘটনার কথা বলেছে। আমরা মনে করি এই জাতিগত নিধনের যে প্রক্রিয়া এবং এতে একটি জনগোষ্ঠী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আর সে অপরাধের জন্য যে সংস্থা বা যারা ব্যক্তিগতভাবে দায়ী তাদের শাস্তির মুখোমুখি হওয়া উচিত। একই সঙ্গে এই অপরাধের জন্য তাদের দায় স্বীকার করে নেওয়া উচিত। যদি নেয় তাহলে আমার তৃতীয় প্রত্যাশা পূরণ হবে। এ মামলার যে রায় তাতে বাংলাদেশের প্রাপ্তি প্রসঙ্গে হুমায়ুন কবির বলেন, একটি প্রাপ্তি হচ্ছে, বাংলাদেশ দুই বছরের বেশি সময় ধরে অর্থাৎ রোহিঙ্গারা যখন থেকে বাংলাদেশে আসা শুরু করেছে তখন থেকেই আমরা একটি কথা বলছি। সেটি হচ্ছে যে এই মানুষগুলো অত্যাচার, নির্যাতন, গণহত্যা এবং জাতিগত নিধনের মুখে বাধ্য হয়ে তাদের দেশ ছেড়ে বাংলাদেশে এসেছে। একই সঙ্গে সম্মানজনকভাবে এবং নিরাপদে দ্রুত তাদের দেশে ফিরে যাওয়া উচিত। অন্যদিকে আমরা এও শুনেছি যে, রোহিঙ্গারা বিভ্রান্ত হয়ে বাংলাদেশে যাচ্ছে এবং মিয়ানমারের রাখাইনের অবস্থা স্বাভাবিক ইত্যাদি। কিন্তু আন্তর্জাতিক আদালতের চাপের মুখে মিয়ানমার যদি উপলব্ধি করে, এ সমস্যা যতদিন জিইয়ে থাকবে তাদের ভাবমূর্তি তত ক্ষুণœ হবে। একই সঙ্গে অন্যান্য স্বার্থের বিষয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে শাস্তির মুখে পড়তে পারে এ বিষয়গুলো উপলব্ধি করে যদি রোহিঙ্গাদের দ্রুত ও সম্মানজনকভাবে মিয়ানমার ফিরিয়ে নেয় তাহলে বাংলাদেশের তরফ থেকেও আমাদের রোহিঙ্গাদের দ্রুত ফেরত পাঠানোর যে প্রত্যাশা সেটি যথার্থভাবে প্রমাণিত হবে। এ ছাড়া এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দ্ইু দেশের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করে দুই দেশের উন্নয়নের যে লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে, গণতন্ত্রের প্রতি আমাদের যে প্রত্যাশা আছে এবং সকল মানুষের জন্য দেশ গড়ার যে প্রয়াস সেটিরও বাস্তবায়ন হবে বলে মনে করি। সর্বোপরি দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের জন্য বিষয়টি ইতিবাচক প্রভাব বিস্তার করবে বলে আশা করছি।

সর্বশেষ খবর