রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

সংকটে ডলারের দাম বেড়েই চলেছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশে ডলার সংকট কাটছেই না। বছরের শুরুতেও ডলারের বাজার ছিল টালমাটাল। মাঝামাঝিতে কিছুটা স্থিতিশীল হলেও বছরের শেষে টাকার বিপরীতে আবারও ডলারের দাম অব্যাহতভাবে বাড়ছে। সেই সঙ্গে ডলারের সংকটও বাড়ছে। ফলে ডলারের বিপরীতে মান হারাচ্ছে বাংলাদেশি টাকা। সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার ডলারের দাম ৮৮ টাকার কাছাকাছি উঠেছিল। আর এইদিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে প্রতি ডলার বিক্রি করেছে প্রায় ৮৫ টাকায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রপ্তানি আয়ে হঠাৎ ভাটার টান লাগায় এবং আমদানি বেড়ে যাওয়ায় এ সংকট ঘনীভূত হয়েছে। আমদানি-রপ্তানির মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে না পারলে এ সংকট আরও বাড়বে বলে তাদের আশঙ্কা। সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে খাদ্যপণ্য আমদানির ব্যয় অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। টানা প্রায় তিন মাস ধরে পিয়াজ আমদানিতেও বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। যার আমদানি দায় পরিশোধ করতে হচ্ছে ডলারে। এর প্রভাবেও ডলারের বাজারে সংকট বাড়ছে। এ ছাড়া এ সময়টা পর্যটক বা ভ্রমণপিপাসুদের জন্য খুবই পছন্দের। ফলে অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে দেশের অনেক নাগরিক বিদেশে ভ্রমণ করেন। অনেকে পরিবার পরিজন নিয়েও বেড়াতে যান। ফলে অতিরিক্ত ডলার দেশের বাইরে চলে যায়। এতে বাজারে একটা প্রভাব পড়ে বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।  বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ডলারের দাম বাড়ালে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন আমদানিকারক ও সাধারণ ভোক্তারা। কারণ তখন পণ্য আমদানির ব্যয় বেড়ে যায়। বিশেষ করে আমদানি নির্ভর খাদ্যপণ্যের দাম আরও বেড়ে যায়। তবে লাভবান হন রপ্তানিকারক ও রেমিট্যান্স প্রেরকরা। তাই তারা এ দুইয়ের মধ্যে একটা ভারসাম্য থাকা অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করেন।  বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ গেল মাসের ২৮ নভেম্বর থেকে আমদানি দায় মেটাতে ব্যবসায়ীদের থেকে দেশি ও বিদেশি খাতের বেশিরভাগ ব্যাংক ডলারের দাম ধরে ৮৪ টাকা ৯০ পয়সা। আর আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার বিক্রি হয়েছে ৮৭ টাকার ওপরে। খোলা বাজারের ডলারের এই দাম আরও চড়া বলে জানা গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, রপ্তানি আয়ের নিম্নগতির প্রভাবে বৈদেশিক বাণিজ্যে ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম চার মাস (জুলাই-অক্টোবর) বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৫৬২ কোটি ডলারে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ৪৭ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। পাশাপাশি বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের চলতি হিসাবেও ঘাটতি দেখা দিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে ইপিজেডসহ রপ্তানি খাতে বাংলাদেশ আয় করেছে এক হাজার ২৫১ কোটি ৭০ লাখ ডলার। এর বিপরীতে আমদানি বাবদ ব্যয় করেছে এক হাজার ৮১৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার। সেই হিসাবে অক্টোবর শেষে দেশে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৫৬২ কোটি ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় (বিনিময় হার ৮৫ টাকা) দাঁড়ায় প্রায় ৪৭ হাজার ৭৭ কোটি টাকা। ঘাটতির এ অঙ্ক ২০১৮-১৯ অর্থবছরের একই সময় ছিল ৫৩২ কোটি ডলার। অর্থাৎ গত অর্থবছরের একই সময়ে তুলনায় এবার ঘাটতি বেড়েছে ২৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা।  জানতে চাইলে রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গার্মেন্ট খাতে আমাদের প্রায় ৮ থেকে ১০ শতাংশ রপ্তানি প্রবৃদ্ধি কমেছে। ফলে ডলার অনেক কম এসেছে। যদিও  রেমিটেন্সে দুই শতাংশ ইনটেনসিভ ডলার কিছুটা বেশি এসেছে। এর বাইরে বড় প্রকল্পগুলোতে প্রচুর ডলার খরচ হচ্ছে। এর চাপ ডলার বাজারে পড়ছে। গার্মেন্ট খাতে যদি প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা না যায় ভবিষ্যতে আরও চাপ বাড়বে। চীন বাংলাদেশে এসেও আফ্রিকা ভিয়েতনাম চলে গেছে। তাই আমরা ভালো করতে পারছি না গার্মেন্ট রপ্তানিতে।

সর্বশেষ খবর