সোমবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

১০,৭৮৯ রাজাকারের তালিকা প্রকাশ

মুক্তিযোদ্ধাদের চূড়ান্ত তালিকা ২৬ মার্চ

বিশেষ প্রতিনিধি

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হেফাজতে থাকা নথির তথ্য-উপাত্তের দালিলিক প্রমাণের ভিত্তিতে একাত্তরে রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনীর বেতনভোগী ১০ হাজার ৭৮৯ জন স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকারের প্রথম ধাপে একটি তালিকা প্রকাশ করেছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ২ লাখ ১০-১২ হাজারের বেশি হবে না। আগামী ২৬ মার্চ মুক্তিযোদ্ধাদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে বলে জানান মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। গতকাল দুপুরে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এস এম আরিফ-উর-রহমান, অতিরিক্ত সচিব শহিদুল হক ভুইয়া, মো. জহুরুল ইসলাম রোহেলসহ অন্য কর্মকর্তারা। আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, যারা ১৯৭১ সালে রাজাকার, আলবদর, আলশামস বা স্বাধীনতাবিরোধী হিসেবে পাকিস্তান সরকার কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছিলেন এবং যেসব পুরনো নথি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সংরক্ষিত ছিল, সেটুকু প্রকাশ করা হয়েছে। কোনো তালিকা শতভাগ নিশ্চিত না হয়ে প্রকাশ করা হবে না। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে যত গেজেট হয়েছিল, সেগুলো উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। ১৯৭১ সালে একটি তথাকথিত উপনির্বাচন হয়েছিল। সে নির্বাচনে কারা বিজয়ী হয়েছেন, নির্বাচন কমিশনের কাছে সে তালিকা চাওয়া হয়েছে। কমিশন এখনো সেটি সরবরাহ করতে পারেনি। তালিকায় যাদের নাম রয়েছে তা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে কি না- জানতে চাইলে মোজাম্মেল হক বলেন, ‘কোনো গেজেট প্রকাশ করা হবে না। তবে জাতি প্রত্যাশা করলে এবং সরকার মনে করলে গেজেট করবে। আমরা তালিকা প্রকাশ করলাম, আগে রিঅ্যাকশনটা দেখব, জাতি চাইলে এটা হবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে মোজাম্মেল হক বলেন, তালিকাভুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যদি কোনো মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ থেকে থাকে, তাহলে এ তালিকা প্রকাশের মধ্য দিয়ে তাদের বিচারের দ্বার উন্মোচিত হবে। তবে কারও বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য এ তালিকা নয়। তালিকাভুক্ত হলে মামলা করা যাবে বা তালিকাভুক্ত না হলে মামলা করা যাবে না এমন নয়। বাদী অভিযোগ আনলে মামলা হবে। এ তালিকা করা হয়েছে, কারণ একাত্তরে কার কী ভূমিকা ছিল, জাতির তা জানা প্রয়োজন। মন্ত্রী বলেন, প্রথম ধাপের তালিকায় যাদের নাম রয়েছে তাদের রাজনৈতিক পরিচয় চিহ্নিত করা হয়নি। তবে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে স্বেচ্ছায় যারা ক্যান্টনমেন্টে ছিলেন তারাও স্বাধীনতাবিরোধী। বিজয় দিবসের আগের দিন ৬৫৯ পৃষ্ঠার প্রথম তালিকা প্রকাশ করতে এসে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় অনেক নথি সুকৌশলে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। ফলে পরিপূর্ণ তালিকা পাওয়া কঠিন হচ্ছে। তৎকালীন ১৯ জেলার রেকর্ড রুমে যেসব দালিলিক প্রমাণ ছিল, সেগুলো দিতে বলা হয়েছিল। আশানুরূপ তালিকা পাইনি। তাই জানুয়ারি মাসের মধ্যে রেকর্ড পাঠানোর জন্য বলেছি।’ বিভিন্ন জেলার রেকর্ড রুম এবং ওই সময় বিজি প্রেসে ছাপানো তালিকাও সংগ্রহ করার চেষ্টা চলছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, যাচাই-বাছাই করে ধাপে ধাপে আরও তালিকা প্রকাশ করা হবে। তিনি বলেন, ‘একটি বিষয় স্পষ্ট করতে চাই, আমরা কোনো তালিকা তৈরি করছি না। যারা একাত্তরে রাজাকার, আলবদর, আলশামস বা স্বাধীনতাবিরোধী হিসেবে পাকিস্তান সরকার কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছিলেন এবং যেসব পুরনো নথি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সংরক্ষিত ছিল, সেটুকু প্রকাশ করছি। এ তালিকা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে (https://molwa.gov.bd/) পাওয়া যাবে।

তালিকাভুক্ত রাজাকারদের বিচার হবে : আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, তদন্তে প্রমাণিত হলে তালিকাভুক্ত রাজাকারদের বিচার হবে। সেক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের তদন্ত সংস্থা তদন্ত করে    দেখবে যে কার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। গতকাল সচিবালয়ে নিজ দফতরে নেপালের উপ-প্রধানমন্ত্রী এবং আইনমন্ত্রী উপেন্দ্র ইয়াদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।

সর্বশেষ খবর