শিরোনাম
সোমবার, ৬ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা
পুলিশ সপ্তাহ উদ্বোধনে প্রধানমন্ত্রী

জনগণের আস্থায় সহজ হয় অপরাধ দমন

প্রতিদিন ডেস্ক

জনগণের আস্থায় সহজ হয় অপরাধ দমন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইন প্যারেড গ্রাউন্ডে ‘পুলিশ সপ্তাহ-২০২০’ উপলক্ষে আয়োজিত প্যারেড পরিদর্শন করেন -বাংলাদেশ প্রতিদিন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পুলিশ বাহিনীকে জনগণের পুলিশ হিসেবেই নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জনের মধ্য দিয়ে যে কোনো ধরনের অপরাধ দমন করা সহজ এবং সেই দৃষ্টিকোণ থেকে আপনারা কাজ করবেন সেটাই আমি আশা করি।

গতকাল সকালে রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইন প্যারেড গ্রাউন্ডে ‘পুলিশ সপ্তাহ-২০২০’ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।

শেখ হাসিনা পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে সারা দেশের বিভিন্ন পুলিশ ইউনিটের সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত নয়নাভিরাম প্যারেড পরিদর্শন ও অভিবাদন গ্রহণ করেন। তিনি অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ পুলিশ পদক ও পুলিশ পদক সেবা এবং রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক এবং রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক সেবায় ভূষিতদের মাঝে পদক বিতরণ করেন। পুলিশ বাহিনীর সদস্যগণের অসীম সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৪ জনকে ‘বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম)’, ২০ জনকে ‘রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (পিপিএম)’ এবং গুরুত্বপূর্ণ মামলার রহস্য উদ্ঘাটন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, দক্ষতা, কর্তব্যনিষ্ঠা, সততা ও শৃঙ্খলামূলক আচরণের মাধ্যমে প্রশংসনীয় অবদানের জন্য ২৮ জনকে ‘বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম)- সেবা’ এবং ৫৬ জনকে ‘রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (পিপিএম)- সেবা’ প্রদান করা হয়। বিপিএম মরহুম মো. আকতার হোসেনের (মরণোত্তর) পক্ষে তার সহধর্মিণী এবং দায়িত্ব পালনকালে দুর্বৃত্তদের গুলিতে আহত এএসআই নান্নœু মিয়া হুইল চেয়ারে বসে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক গ্রহণ করেন। ‘মুজিববর্ষের অঙ্গীকার পুলিশ হবে জনতার’- এ প্রতিপাদ্য নিয়ে প্রতিবারের মতো এবারও বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা এবং আনন্দমুখর পরিবেশে পাঁচ দিনব্যাপী পুলিশ সপ্তাহ-২০২০ উদযাপিত হচ্ছে। চলবে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং পুলিশের আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাভেদ পাটোয়ারী ও অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন) মো. মইনুর রহমান চৌধুরী এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের কাক্সিক্ষত সেবা নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশ পুলিশকে আধুনিক এবং জনবান্ধব হিসেবে গড়ে তুলতে তাঁর সরকার বিভিন্ন সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা খাতে বরাদ্দকৃত অর্থকে আমরা ব্যয় হিসেবে নিই না। আমরা মনে করি জনগণের স্বার্থে জনগণের কল্যাণে এটা আমাদের এক ধরনের বিনিয়োগ। কাজেই সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা এই পুলিশ বাহিনীকে আধুনিক সাজে সজ্জিত এবং আধুনিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে জনগণের সেবা যাতে নিশ্চিত করতে পারি তার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নিয়ে যাচ্ছি। যার ফলে আমরা দেখতে পাচ্ছি, পুলিশের মাঝেও গুণগত বিরাট পরিবর্তন এসেছে। মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে কোনো দুর্যোগে জনগণের পাশে দাঁড়ায় পুলিশ। কাজেই যে কোনো প্রয়োজনে পুলিশ বাহিনীর পাশে দাঁড়ানোটা আমি কর্তব্য বলে মনে করি। তিনি বলেন, গণতন্ত্র ও উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখতে বাংলাদেশ পুলিশ অত্যন্ত দক্ষতা, পেশাদারিত্ব ও সাহসিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে আসছে। ২০১৩, ’১৪ ও ’১৫ সালে আন্দোলনের নামে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা এবং নৈরাজ্য মোকাবিলায় পুলিশ সদস্যদের ভূমিকার প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি বাংলাদেশ পুলিশে অত্যন্ত স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় প্রায় ১০ হাজার কনস্টেবল নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নিয়োগ প্রক্রিয়াটি সফলভাবে সম্পন্ন করে বাংলাদেশ পুলিশ অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিতে সম্প্রতি আর্মড পুলিশের দুটি এবং র‌্যাবের একটি ব্যাটালিয়ন গঠনপূর্বক কক্সবাজারে মোতায়েন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ পুলিশের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় জাতীয় জরুরি সেবা-‘৯৯৯’ ইতিমধ্যেই ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। জনগণ ‘৯৯৯’ ব্যবহার করে এখন খুব সহজেই ফায়ার সার্ভিস, অ্যাম্বুলেন্স ও পুলিশের সেবা পাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী এ সময় সোশ্যাল মিডিয়াসহ অন্যান্য প্রযুক্তির অপব্যবহার করে দেশে গুজব রটনাকারীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতেও পুলিশ বাহিনীর ভূমিকার প্রশংসা করেন।

 তিনি বলেন, আমরা পুলিশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতি প্রাপ্তির জটিলতা নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। পুলিশ বাহিনীতে গ্রেড-১ ও গ্রেড-২ পদের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে বিশেষায়িত ইউনিট-পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), ট্যুরিস্ট পুলিশ, নৌ পুলিশ, স্পেশাল সিকিউরিটি অ্যান্ড প্রটেকশন ব্যাটালিয়ন ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ গঠন করা হয়েছে। জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে পুলিশ এন্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ) এবং কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) গঠন, পুলিশ স্টাফ কলেজ ও বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিসহ পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারগুলোতে আধুনিক প্রশিক্ষণ প্রদানের উদ্যোগসহ বাংলাদেশ পুলিশে সাইবার পুলিশ সেন্টার, ডিএনএ ল্যাব, আধুনিক ফরেনসিক ল্যাব এবং হাসপাতাল স্থাপনের উল্লেখ করেন তিনি। তিনি বলেন, তাঁর সরকার থানা, ফাঁড়ি, তদন্ত কেন্দ্র, ব্যারাক, আবাসিক ভবন নির্মাণের জন্য জমি বরাদ্দসহ বিদেশে পাঠিয়ে পুলিশ সদস্যদের প্রশিক্ষণ প্রদান এবং যানবাহন সমস্যার সমাধানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক যানবাহন সরবরাহ করেছে। আধুনিক যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যেন পুলিশ বাহিনী চলতে পারে সে ব্যবস্থাও তাঁর সরকার নিচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামীতে নারী পুলিশের জন্য একটি স্বতন্ত্র ট্রেনিং সেন্টার স্থাপনের পরিকল্পনাও সরকারের রয়েছে। তিনি বলেন, ‘অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্যদের জন্য আজীবন রেশন প্রদানের বিষয়টিও আমাদের সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে। আমরা সেটারও ব্যবস্থা করে দেব।’

২০২০ সালকে দেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সময় আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৭ মার্চ জাতির পিতা জন্মগ্রহণ করেছেন। আর ২০২১ সালের ২৬ মার্চ আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। আমরা ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত সময়কে মুজিববর্ষ ঘোষণা করেছি।’ তিনি বলেন, জাতির পিতা আমাদের এই দেশকে স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। বাংলাদেশ এবং দেশের জনগণ সারা বিশ্বে মর্যাদা নিয়ে চলবে, উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতিমধ্যে আমরা উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে মর্যাদা পেয়েছি, আমাদের তা ধরে রেখে আরও সামনে এগিয়ে যেতে হবে। যাতে আমাদের দেশের জনগণ এবং প্রজন্মের পর প্রজন্ম সুন্দর এবং উন্নত জীবন পেতে পারে।

সর্বশেষ খবর