কমিটিতে পদোন্নতি দিয়ে নানাভাবে বুঝিয়েও বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থীদের বসাতে পারছে না বিএনপি। ঢাকা উত্তর সিটি ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এখনো বিএনপিতে অন্তত ৩৪ জন বিদ্রোহী প্রার্থী। দলের গলার কাঁটা এসব বিদ্রোহী প্রার্থী। দলের নীতিনির্ধারকরা বলছেন, তারা বিদ্রোহীদের নিবৃত্ত করতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। শেষ পর্যন্ত এ চেষ্টা চলবে। তারপরও কেউ থাকলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এরই মধ্যে দলের প্রাথমিক সদস্য পদসহ সকল পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে নারী সংরক্ষিত আসন-১৭ (ওয়ার্ড নম্বর-৪৯, ৫০ ও ৫১) এর বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী জাকিয়া সুলতানা পান্নাকে। তার বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজে লিপ্ত থাকার অভিযোগ আনা হয়। বিদ্রোহীদের মাঠে অবস্থানকে দুই সিটিতে দল মনোনীত ধানের শীষের মেয়র প্রার্থীর জন্যও হুমকি হিসেবে দেখছেন বিএনপির হাইকমান্ড।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও উত্তর সিটির সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর বাছাই কমিটির সমন্বয়কারী মো. শাহজাহান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময়সীমা পার হওয়ার পর এখনো কিছু কিছু ওয়ার্ডে বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থী রয়ে গেছেন। দলের স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে তাদের নির্বাচনে নিবৃত্ত করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। আশা করছি, শেষ পর্যন্ত প্রতিটি ওয়ার্ডেই আমাদের একজন করে কাউন্সিলর প্রার্থী থাকবেন। বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হাবিব-উন নবী খান সোহেল বলেন, দক্ষিণ সিটির কয়েকটি ওয়ার্ডে আমাদের বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। তাদের বুঝিয়ে নিষ্ক্রিয় করার চেষ্টা করছি। আশা করি আমরা সফল হব। এক প্রশ্নের জবাবে দক্ষিণ সিটির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির এ সদস্য বলেন, দল থেকে বহিষ্কারের মতো কোনো সিদ্ধান্ত এখনো নেওয়া হয়নি।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা উত্তরের ৫৪টি সাধারণ ওয়ার্ডের মধ্যে ১৭ জন বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। এর মধ্যে ৩ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী হাজী আবু তৈয়বের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে আছেন জামাল হোসেন বাপ্পী। ৫ নম্বর ওয়ার্ডে বুলবুল মল্লিক, ৬ নম্বর ওয়ার্ডে হাবিবুর রহমান ও মোহাম্মদ রিপন বিদ্রোহী প্রার্থী। ৭ নম্বর ওয়ার্ডে দল সমর্থিত প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন দুলুর বিরুদ্ধে গোলাম রাব্বানী, ১৬ নম্বরে সৈয়দ ইকরাম বাবুল, ২৩ নম্বরে কামাল আহমেদ দুলু, ২৫ নম্বরে এসএম হাসেম, ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে জাভেদ আলী, ৩০ নম্বরে আবুল হাসেম, ৩১ নম্বরে হাসিনা মোর্শেদ কাকলী ও ফরিদউদ্দিন ফরহাদ, ৩৮ নম্বরে আলী হোসেন, ৪০ নম্বরে আতাউর রহমান, ৪৩ নম্বরে রেজাউল করিম, ৪৭ নম্বর ওয়ার্ডে হেলাল তালুকদার, ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডে হারুনুর রশিদ খোকন বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন। ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বিদ্রোহী প্রার্থী জামাল হোসেন বাপ্পী বলেন, বিএনপির রাজনীতি করি। আমি শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকব। স্থানীয় নেতা-কর্মীরা আমার সঙ্গে রয়েছেন। দল যাকে সমর্থন দিয়েছে তার সঙ্গে নেতা-কর্মীদের কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি জানান, দল তাকে বহিষ্কার করলেও তিনি নির্বাচন থেকে পিছু হটবেন না। ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন দুলু বলেন, প্রত্যাহারের শেষ দিনেও তার ওয়ার্ডে বিএনপির একজন নেতা প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন। তবে তার সঙ্গে আমার ইতিমধ্যে সমঝোতা হয়েছে। তিনি কোনো প্রচার চালাবেন না। ফলে তার কোনো সমস্যাও হবে না।
দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৭৫টি সাধারণ ওয়ার্ডের মধ্যে অন্তত ১৫টিতে রয়েছেন বিদ্রোহী প্রার্থী। এর মধ্যে ১ নম্বর ওয়ার্ডে নজরুল ইসলাম জুয়েল, ১০ নম্বর ওয়ার্ডে আনোয়ার হোসেন লিপু, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে নজরুল ইসলাম জুয়েল, ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে আবু নাছের লিটন, ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডে সুমন ভূঁইয়া, ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডে মোজাম্মেল হক মুক্তা, ৪৬ নম্বর ওয়ার্ডে মো. সোহেল ও ঢালী মামুনুর রশীদ, ৫০ নম্বর ওয়ার্ডে আনোয়ার হোসেন স্বাধীন, ৫১ নম্বর ওয়ার্ডে কবির আহম্মেদ, ৫২ নম্বর ওয়ার্ডে বাদল রানা, ৫৫ নম্বর ওয়ার্ডে শহিদুল হক, ৫৯ নম্বর ওয়ার্ডে খোরশেদ আলম খোকন, ৬১ নম্বর ওয়ার্ডে শাহ আলম, ৬৬ নম্বর ওয়ার্ডে সাবেক কাউন্সিলর নুরুদ্দিন মিয়া বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন। এদিকে একাধিক প্রার্থী থাকায় দুই সিটির তিনটি ওয়ার্ড উন্মুক্ত রেখেছে বিএনপি। ডিএনসিসির ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন মাসুদ খান রাজেশ ও ওসমান গণি শাহজাহান। এ ছাড়া দক্ষিণের ১৯ ও ২০ নম্বর ওয়ার্ডও উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। ১৯ নম্বরে প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছেন আবদুল মোতাবেল রুবেল, নাদিম চৌধুরী ও আশরাফউদ্দিন এবং ২০ নম্বর ওয়ার্ডে রফিকুল ইসলাম, এম এ হান্নান ও জাহিদ হোসেন। এদিকে ডিএসসিসির দুটি ওয়ার্ডে কোনো কাউন্সিলর প্রার্থী নেই বিএনপির। এর মধ্যে ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে হাজী আলতাফ হোসেনকে দলীয় সমর্থন দেওয়া হয়। কিন্তু পরে আলতাফ হোসেনই মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন। ফলে ওয়ার্ডটিতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এ ছাড়া ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপি থেকে সমর্থন দেওয়া হয়েছিল মোস্তাফিজুর রহমান ফয়েজকে। পরে তার মনোনয়ন বাতিল হয়। আপিলের শুনানিতে অংশ নিতে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে যাওয়ার পথে তাকে অপহরণ করা হয়। এই ওয়ার্ডেও অন্য কোনো প্রার্থী না থাকায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
ড. মোশাররফের অনুরোধ : দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন সরে দাঁড়ানোর জন্য বিদ্রোহী প্রার্থীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। গতকাল দুপুরে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, ঢাকা সিটি নির্বাচনে বিভিন্ন ওয়ার্ডে আমাদের সমর্থিত নয়, কিন্তু দলের অনেক নেতা সেখানে কাউন্সিলর নির্বাচন করছেন। আমরা দলের পক্ষ থেকে তাদের অনুরোধ করছি, তারা যেন সরে দাঁড়িয়ে দল সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেন। ধানের শীষের মেয়র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেন। কারণ এই ভোট ধানের শীষের ভোট, ধানের শীষের ভোট হচ্ছে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মার্কা, বেগম খালেদা জিয়ার মার্কা। বেগম জিয়া অন্যায়ভাবে কারাগারে। আজ আপনাদের এই মূল্যবান ভোটে দেশনেত্রীর মুক্তি হতে পারে। এ দেশের রাজনীতির প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে। জনগণ পরিবর্তন চায়। এই ভোটটি অত্যন্ত মূল্যবান।
ঢাকা সিটি মেয়র পদে ধানের শীষের প্রার্থী দক্ষিণে ইশরাক হোসেন ও উত্তরে তাবিথ আউয়ালসহ কাউন্সিলররা বিজয়ী হবেন বলে আশাবাদী ড. মোশাররফ। তিনি বলেন, আমাদের প্রার্থীরা যখন যেখানে জনসংযোগ করতে যাচ্ছেন, জনস্রোত বিশাল মিছিলে পরিণত হয়েছে। জনজোয়ার ধানের শীষের পক্ষে।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের মাওলানা আকরম খাঁ হলে জিয়া সাংস্কৃতিক সংগঠনের (জিসাস) উদ্যোগে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৮৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এ আলোচনা সভা হয়। সংগঠনের সভাপতি আবুল হাশেম রানার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় জিসাসের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট সিমকী ইমাম খান ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব রিনা খান প্রমুখ বক্তব্য দেন।