মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

সিপিবির সমাবেশে বোমা হামলায় ১০ জনের ফাঁসি

আদালত প্রতিবেদক

রাজধানীর পল্টন ময়দানে ১৯ বছর আগে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সমাবেশে বোমা হামলায় ৫ জনকে হত্যার মামলায় নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজি) ১০ সদস্যের মৃত্যুদন্ড দিয়েছে আদালত। মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামি প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় দুজনকে খালাস দেওয়া হয়েছে। গতকাল ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক রবিউল আলম এ রায় ঘোষণা করেন। 

মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- মুফতি মাঈনুদ্দিন শেখ, মাওলানা সাব্বির আহমেদ, শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, আরিফ হাসান সুমন, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মহিবুল মুস্তাকিম, আনিসুল মুরসালিন, মুফতি আবদুল হাই, মুফতি শফিকুর রহমান ও নুরুল ইসলাম। এদের মধ্যে আসামি মাঈনুদ্দিন, আরিফ, সাব্বির ও শওকত কারাগারে। বাকিরা পলাতক। খালাস পাওয়া দুজন হলেন মশিউর রহমান ও রফিকুল ইসলাম মেরাজ। তারাও রায় ঘোষণার সময় পলাতক ছিলেন। ২০০১ সালের ২০ জানুয়ারি সিপিবির সমাবেশে বোমা হামলায় ৫ জন নিহত হন। আহত হন ২০ জন। নিহতরা হলেন- খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার সিপিবি নেতা হিমাংশু মন্ডল, খুলনার রূপসা উপজেলার সিপিবি নেতা ও দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরির শ্রমিক নেতা আবদুল মজিদ, ঢাকার ডেমরার লতিফ বাওয়ানি জুটমিলের শ্রমিক নেতা আবুল হাসেম ও মাদারীপুরের মুক্তার হোসেন, খুলনার বিএল কলেজের ছাত্র ইউনিয়ন নেতা বিপ্রদাস।

ওই ঘটনায় সিপিবির তৎকালীন সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান খান বাদী হয়ে মতিঝিল থানায় মামলা করেন। পরে ২০০৩ সালের ডিসেম্বরে আসামিদের বিরুদ্ধে নির্ভরযোগ্য তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি মর্মে তদন্ত শেষে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছিল। এরপর ২০০৪ সালে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা ও ২০০৫ সালের আগস্টে দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলা হয়। এসব ঘটনায় জঙ্গিরা জড়িত বলে প্রমাণ পাওয়ার পর ২০০৫ সালে এই মামলাটি আবার পুনঃতদন্তের আদেশ দেয় আদালত। পুনঃতদন্তের পর ২০১৩ সালের ২৭ নভেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে আলাদা চার্জশিট দাখিল করেন সিআইডি পুলিশের ইন্সপেক্টর মৃণাল কান্তি সাহা। পরের বছর ২১ আগস্ট আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদালত। এ মামলার মোট ১০৬ জন সাক্ষীর মধ্যে ৩৮ জন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছে। তবে আসামিপক্ষে কেউ সাফাই সাক্ষ্য দেননি। গত বছরের ১ ডিসেম্বর উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে এ মামলার রায়ের জন্য দিন ধার্য করেন বিচারক।

পর্যবেক্ষণ : ১০৪ পৃষ্ঠার রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, সিপিবিকে নিশ্চিহ্ন করতে জঙ্গিরা ওই হামলা চালিয়েছিল। আসামিরা হুজির সদস্য এবং তাদের ধারণা, সিপিবির লোকেরা ‘কাফের, বিধর্মী, নাস্তিক, ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী নয়’। সে কারণে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিকে ‘নিশ্চিহ্ন করার উদ্দেশ্যে’ তারা ওই বোমা হামলা ঘটায়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখার জন্য হরকাতুল জিহাদের এই জঙ্গিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত বলে এই আদালত মনে করে। বিচারক বলেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম। কোনো জঙ্গি সংগঠনকে বা কোনো দলকে ধর্মের নামে নিরীহ ও নির্দোষ মানুষকে হত্যা করার অধিকার আল্লাহ দেননি। পবিত্র কোরআনের সূরা আল মায়েদা-এর ৩২ নম্বর আয়াত থেকে উদ্ধৃত করে বিচারক বলেন, নরহত্যা অথবা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করা ছাড়া অন্য কোনো কারণে যে ব্যক্তি কাউকে হত্যা করল, সে যেন দুনিয়ার সমস্ত মানুষকে হত্যা করল।

খুশি হতাহতদের পরিবার : খুলনা থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানিয়েছেন, ১৯ বছর পর হলেও মামলার রায়ে খুশি হতাহতদের পরিবার। তারা দ্রুত এই রায় কার্যকরের দাবি জানিয়েছেন। ওই বোমা হামলায় নিহত ৫ জনের মধ্যে সিপিবি নেতা হিমাংশু মন্ডলের ছেলে কল্লোল মন্ডল জানান, মামলার রায়ে আমরা খুশি। তবে শুধু রায় দিলেই হবে না, এ রায় দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। আহত অমর মন্ডল বলেন, রায় হয়েছে এতে আমার মনটা খুশি। তবে বাস্তবে আমি এই ফাঁসির রায় কার্যকর দেখে যেতে চাই। সিপিবি, খুলনা জেলা সভাপতি ডা. মনোজ দাস বলেন, এই রায়ে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে খুুশি। কিন্তু তখনই আমরা খুশি হব যখন এই রায়টা কার্যকর হবে। বিচারের রায় দ্রুত বাস্তবায়ন চেয়েছে সিপিবি। গতকাল রায়ের পর প্রতিক্রিয়ায় পার্টি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহ আলম বিবৃতিতে তারা এই দাবি জানান।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর