বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

গুজবের শঙ্কা, ফেসবুক নিয়ন্ত্রণের পরামর্শ

গোলাম রাব্বানী

ঢাকার দুই সিটিতে ভোটের পরিবেশ শান্তিপূর্ণ থাকলেও আওয়ামী লীগ-বিএনপির বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থী সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা।

একই সঙ্গে  ফেসবুকসহ সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজব ছড়ানোর শঙ্কাও রয়েছে। গতকাল ঢাকার দুই সিটি নির্বাচন নিয়ে ইসি আয়োজিত আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত বৈঠকে এ বক্তব্য উঠে আসে। বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা বলেছেন, কিছু ওয়ার্ডে বিদ্রোহী প্রার্থীদের কারণে সহিংসতা হতে পারে। এ ছাড়া ফেসবুকসহ সামাজিক নানা যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব রটিয়ে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা হতে পারে। একই সঙ্গে ভোটের দিন ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচলে নিষেধজ্ঞা জারির দাবিও জানিয়েছেন তারা। বৈঠকে প্রতিটি সাধারণ কেন্দ্রের পাহারায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১৬ জন ও গুরুত্বপূর্ণ (ঝুঁকিপূর্ণ) কেন্দ্রে ১৮ জন সদস্য রাখতে ইসির প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়।

বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, দুই সিটিতে ৫৩ জন কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে ১৫-২০টি পর্যন্ত মামলা রয়েছে। তারাও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য হুমকিস্বরূপ। তবে কমিশন ভোটের আগে কাউকে গ্রেফতার না করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশনা দেয়। নির্বাচনে প্রার্থীদের এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে যাতে বের করে দেওয়া না হয় সে নির্দেশনাও দেওয়া হয়। বৈঠকে অংশ নেওয়া কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করে এসব তথ্য জানা গেছে। এ ছাড়া আগামীতে হত্যা ও মাদক মামলার আসামিরা যাতে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে সে জন্য আইন সংশোধনের প্রস্তাব দেন একজন কর্মকর্তা। একই সঙ্গে এসব প্রার্থীর অনেকের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট রয়েছে জানিয়ে কমিশনের নির্দেশনা চান। এর জবাবে একজন নির্বাচন কমিশনার বলেন, আইন অনুযায়ী ওয়ারেন্টেড একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া। এটি অনুসরণ করতে হবে। আরেক নির্বাচন কমিশনার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্দেশে বলেন, আইনের বাইরে বলার কিছু নেই। ইভিএমের জানাজা নয় : নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের পক্ষে অবস্থান নিয়ে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বিরোধিতাকারীদের উদ্দেশে বলেছেন, ইভিএমের জানাজা না পড়ে জন্মোৎসব করা উচিত। একই সঙ্গে ইভিএমে ৫০ শতাংশ ভোট না পড়লে ব্যালট পেপারে পুনরায় ভোট গ্রহণের জন্য নির্বাচন কমিশনকে সুপারিশ করেছেন তিনি।

মাহবুব তালুকদার লিখিত বক্তব্যে বলেন, চট্টগ্রাম-৮ আসনের সাম্প্রতিক উপনির্বাচনে সবগুলো কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার করা হয়। এতে ভোট পড়েছে ২২ দশমিক ৯৪ শতাংশ। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএমবিহীন ব্যালট পেপারে যে ২৯৪টি আসনে ভোট হয়েছে, ভোটের হার যেখানে ছিল ৮০ শতাংশ, সেখানে ইভিএম ব্যবহারে ২৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ কম ভোট পড়েছে। এর কারণ ভোটারদের মনে আছে ইভিএমভীতি। তিনি বলেন, আমার মতে যে কোনো নির্বাচনে ৫০ শতাংশ ভোট না পড়লে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। এজন্য বিশ্বের অনেক দেশে ৫০ শতাংশের কম ভোট পড়লে পুনরায় ভোট গ্রহণ করা হয়। ইভিএম সম্পর্কে আমার বক্তব্যের বটম লাইন হলো, ইভিএম-এ যদি ৫০ শতাংশ ভোট না পড়ে, তাহলে ব্যালট পেপারে পুনরায় ভোট গ্রহণ হওয়া উচিত। এজন্য নির্বাচনী বিধিবিধান পরিবর্তন প্রয়োজন হতে পারে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উদ্দেশে তিনি বলেন, নির্বাচন সংশ্লিষ্ট পুলিশ আইনানুগভাবে নির্বাচন কমিশনের কাছে ন্যস্ত, কিন্তু মানসিকভাবেও নির্বাচন কমিশনের অধীনে ন্যস্ত না হলে কোনো ফল লাভ হবে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতি উৎসাহী কোনো কোনো সদস্যকে আইন ও শৃঙ্খলা ভঙ্গ করতে কিংবা প্রয়োজনের সময় নিষ্ক্রিয় থাকতে দেখা যায়। তিনি বলেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর ওয়ারেন্ট ছাড়া কিংবা নতুন ওয়ারেন্ট বা আগের ওয়ারেন্ট দিয়ে যেসব গ্রেফতার করা হয়, তা অনেক ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশের বরখেলাপ। এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হলে তার দায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর এসে পড়বে। আর আপনারা প্রশ্নবিদ্ধ হলে তার দায় আমাদের ওপর বর্তাবে। আমরা প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন করে কলঙ্কিত হতে চাই না।

চমৎকার পরিবেশ বজায় থাকবে : বৈঠক শেষে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজি) ড. জাবেদ পাটোয়ারী বলেছেন, ঢাকার সিটি করপোরেশন নির্বাচনের এখন পর্যন্ত চমৎকার, সুন্দর পরিবেশ বজায় রয়েছে। ভোটে উৎসবমুখর, সুন্দর ও চমৎকার একটি পরিবেশ থাকবে। তিনি বলেন, তিন ঘণ্টা কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করেছি। এ পর্যন্ত আপনারা দেখেছেন উৎসবমুখর এবং সুন্দর একটি পরিবেশ রয়েছে। প্রার্থীরা তাদের প্রচারণা চালাচ্ছেন। আশা করছি ভোটের আর যে কয়দিন আছে এই কদিন উৎসবমুখর, সুন্দর ও চমৎকার একটি পরিবেশ বজায় থাকবে। আমাদের সবার প্রয়োজনীয় যে ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনা রয়েছে মেট্রোপলিটন পুলিশসহ যারা এর সঙ্গে সম্পর্কিত আছে র‌্যাব এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সমন্বিতভাবে কাজ করছে। আমরা আশা করছি সুন্দর ও চমৎকার একটি পরিবেশ বজায় থাকবে। ইভিএম নিয়ে প্রেজেন্টেশন : ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে এ প্রযুক্তির আদ্যোপান্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সামনে তুলে ধরা হয়েছে। গতকাল বিকালে আইনশৃঙ্খলা সভায় সংশ্লিষ্টদের উপস্থিতি ইভিএম নিয়ে বিশেষ উপস্থাপনা তুলে ধরেন ইসির এনআইডি উইং মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম। তিনি বলেন, নির্ধারিত সময়ের আগে মেশিনটি খোলা সম্ভব নয়। কারণ এটি পাসওয়ার্ড প্রোটেকটেড। আর ভোটের দিন সকাল ৭টার আগে খোলা যাবে না। অনুমোদিত কর্মকর্তা ছাড়া এটি খোলা সম্ভব নয়।

সর্বশেষ খবর