বহুল প্রত্যাশিত স্বপ্নের পদ্মা সেতুর কাজ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। এই প্রকল্পের কাজ ইতিমধ্যে প্রায় ৮৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। খরচ হয়েছে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা। আর এ প্রকল্পে মোট ব্যয় হবে ৩০ হাজার কোটি টাকারও বেশি। কিন্তু সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হবে এমন সিদ্ধান্তের পর ২০১২ সালের ৭ আগস্ট নিবাসী ও অনিবাসী বাংলাদেশিদের অনুদানের জন্য সোনালী ব্যাংক লোকাল অফিসে দুটি পৃথক হিসাব খোলা হয়। গত আট বছরে এ দুটি হিসাবের বিপরীতে একটিতে (নিবাসী) জমা হয়েছে মাত্র ৭ লাখ ৭২ হাজার টাকা। অন্যটিতে (অনিবাসী) জমা হয়েছে ৩০ লাখ টাকার কিছু বেশি।
ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কথিত দুর্নীতির অভিযোগের ভিত্তিতে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব সৃষ্টি হলে ২০১২ সালের শুরুতে সরকার সিদ্ধান্ত নেয় এ প্রকল্পটি নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করা হবে। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী বৃহৎ এ প্রকল্প বাস্তবায়নে সর্বসাধারণের সহযোগিতা চান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই বছরের ৭ আগস্ট সোনালী ব্যাংকের লোকাল অফিসে দুটি আলাদা হিসাব খোলা হয়। একটির শিরোনাম ‘পদ্মা সেতু নির্মাণে স্বেচ্ছা অনুদান সহায়তা (নিবাসী)’। অন্যটির নাম ‘পদ্মা সেতু নির্মাণে স্বেচ্ছা অনুদান সহায়তা (অনিবাসী)’। সোনালী ব্যাংকের স্থানীয় কার্যালয় (লোকাল অফিস) হিসাব দুটি মেইনটেন করছে। তবে হিসাব দুটি থেকে সরকার এখনো কোনো অর্থ উত্তোলন করেনি। সরকারের বার্ষিক বাজেট থেকেই পদ্মা সেতু নির্মাণের প্রয়োজীয় অর্থের জোগান দেওয়া হচ্ছে।
সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানায়, সরকার জনগণের কাছে অনুদান চাইলেও পরে নীতিগতভাবে সে সিদ্ধান্ত থেকে কিছুটা সরে আসে। ফলে তা নিয়ে প্রচার-প্রচারণা বন্ধ করে দেয়। কিন্তু নির্দেশনা দিয়ে হিসাব খোলা হলেও তা আর অফিশিয়ালি বন্ধ করা হয়নি। ফলে দাফতরিকভাবে হিসাব দুটি এখনো কার্যকর রয়েছে। কিন্তু সেখানে অনুদান দিতে জনগণের তেমন সাড়া নেই। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সরকারের সক্ষমতা বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে হিসাব খোলার দুই বছরের মধ্যে সে সিদ্ধান্ত থেকে নীতিগতভাবে সরে দাঁড়ায় সরকার। ফলে হিসাব দুটি থেকে কোনো অর্থ উত্তোলন করা হয়নি। নতুন করে সেখানে অনুদানের অর্থ দিতেও আর আহ্বান জানানো হয়নি। হিসাব দুটি বন্ধ করা হবে কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সেটা সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের সিদ্ধান্ত। তবে হিসাব দুটির সঙ্গে এখন পদ্মা সেতুর কোনো সম্পর্ক নেই। এদিকে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটারের দৈর্ঘ্যরে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার ইতিমধ্যে দৃশ্যমান হয়েছে।পুরো প্রকল্পের কাজ এগিয়েছে প্রায় ৮৫ শতাংশ। জানা গেছে, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হওয়ার পর পদ্মায় সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সেতু নির্মাণের জন্য প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাই শুরু হয় ১৯৯৮ সালে। ২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত জাপানি অর্থ সহায়ক সংস্থা (জাইকা) সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ করে। ওই সময়ই ২০০১ সালের ৪ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর ওপর সেতু নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। আর এর মধ্য দিয়ে সেতু নির্মাণের বীজ বপন করা হয়। মাঝের আট বছর খুব একটা অগ্রগতি না হলেও ২০০৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত হয় নকশা চূড়ান্তকরণের কাজ। দীর্ঘ পথপরিক্রমায় ২০১৪ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেতু নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন। ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে নিজস্ব অর্থায়নে পুরোদমে শুরু হয় সোয়া ছয় কিলোমিটারের স্বপ্ন বাস্তবায়নের কাজ। মাঝে ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে কথিত দুর্নীতির অভিযোগ এনে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন থেকে সরে দাঁড়ালে নানা বিতর্কে কেটে যায় প্রায় দুই বছর।