শনিবার, ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

রাষ্ট্রপতি কোবিন্দর ভাষণে এনআরসি ও বাংলাদেশ না থাকায় জল্পনা

গৌতম লাহিড়ী, নায়াদিল্লি

ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ গতকাল দিল্লিতে সংসদের যৌথ বাজেট অধিবেশনের উদ্বোধনী ভাষণে নাগরিত্ব সংশোধনী আইন (সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট-ক্যা) প্রসঙ্গে নিজের অভিমত ব্যক্ত করলেও বিতর্কিত জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন (ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেন্স-এনআরসি) প্রসঙ্গ এড়িয়ে যান। শুধু তাই নয়, ভাষণে তিনি বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের নামও উল্লেখ করেননি। এর ফলে ব্যাপক জল্পনা চলছে যে, ‘ক্যা’ ও এনআরসি’র বিরুদ্ধে ভারতজুড়ে তুমুল বিক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার হয়তো আইনটি একটু ঘষামাজা ‘করতে আগ্রহী হয়েছে। আবার এটাও বলাবলি হচ্ছে যে, ঝামেলা এড়ানোর কৌশল হিসেবেই রাষ্ট্রপতির এই নীরবতা। গত ডিসেম্বরে            পাস হওয়া ‘ক্যা’তে বলা হয় বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ও পাকিস্তান থেকে আসা ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা ভারতের নাগরিকত্ব পাবেন। কিন্তু শুক্রবার রাষ্ট্রপতির ভাষণে শুধু পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ধর্মীয় নিপীড়নের উল্লেখ করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি কোবিন্দ সংসদে দাঁড়িয়ে ক্যা-র প্রশংসা করায় একদিকে সরকার পক্ষ যেমন হাততালিতে ভরিয়ে দেয়, তেমন বিরোধী আসন থেকে ওঠে ‘শেম শেম’ স্লোগান। তার ভাষণে প্রতিবাদ আন্দোলনের মধ্যে হিংসারও সমালোচনা করেন তিনি। ক্যা প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপতি কোবিন্দ বলেন, ‘জাতির জনক মহাত্মা গান্ধী দেশভাগের পর বলেছিলেন, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ (পূর্ব পাকিস্তান) থেকে হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন এবং অন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা এ দেশে এলে তাদের ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়া উচিত। আমাদের জাতির জনকের ইচ্ছেকে শ্রদ্ধা জানানো উচিত। সংসদের দুই কক্ষেই এ আইন পাস হয়ে যাওয়ায় আমি অত্যন্ত খুশি।’ সংসদের যৌথ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির বক্তব্যের প্রতিবাদ জানান বিরোধীরা। পাল্টা টেবিল বাজিয়ে তাকে অভিবাদন জানায় সরকারপক্ষ। রাষ্ট্রপতির ভাষণের প্রতিবাদ জানিয়ে সংসদে পেছনের সারিতে গিয়ে বসেন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী। এ সরকার নতুন ভারতর গঠনের জন্য জনাদেশ পেয়েছে বলেও জানান রাষ্ট্রপতি। জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার এবং জম্মু-কাশ্মীরকে লাদাখ থেকে আলাদা করে পৃথক দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠনের জন্যও অভিনন্দন জানান রাষ্ট্রপতি। গত বছর ২০ জুন সপ্তদশ লোকসভার প্রথম ভাষণে রামনাথ কোবিন্দ তার ভাষণে দেশজোড়া এনআরসি প্রক্রিয়া অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে শুরুর কথা বলেছিলেন। সেদিক থেকে দেখলে এবার তার এ প্রসঙ্গে নীরবতা অতীব তাৎপর্যপূর্ণ। গত বছর ২০ জুন সপ্তদশ লোকসভার প্রথম ভাষণে রামনাথ কোবিন্দ তার ভাষণে ভারতজুড়ে এনআরসি প্রক্রিয়া অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শুরু করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছিলেন। সেদিক থেকে দেখলে গতকালের ভাষণে ওই প্রসঙ্গে তার নীরবতা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। গত ২০ জুন নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের উদ্দেশ্যের কথা ঘোষণা করে রাষ্ট্রপতি কোবিন্দ বলেছিলেন, ‘বেআইনি অনুপ্রবেশকারীরা আমাদের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বড় ঝুঁকি। এর ফলে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সামাজিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে, আমাদের সীমিত জীবনধারণের উপাদানের ওপর চাপ পড়ছে। আমার সরকার স্থির করেছে, যেসব জায়গা অনুপ্রবেশ অধ্যুষিত, সেখানে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে এনআরসি করা হবে। অনুপ্রবেশ আটকাতে সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার করা হবে।’ নাগরিকত্ব আইন সংশোধনী নিয়ে বিতর্কের সময়ে দেশজোড়া এনআরসি প্রয়োগ করতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জোর দেওয়ার পরেই ভারতজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। ‘আমার সরকার এ পদ্ধতি ফের স্পষ্ট করতে চায়। যে কোনো বিশ্বাসের মানুষ, তারা যদি ভারতে বিশ্বাস করেন ও ভারতীয় নাগরিকত্ব নিতে চান তাদের জন্য যে পদ্ধতি চালু রয়েছে, তার পরিবর্তন ঘটেনি। যে কোনো বিশ্বাসের মানুষ নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে ভারতের নাগরিক হতে পারেন। সরকার ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হওয়া সবাইকে, যদি তারা কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলের, বিশেষ করে উত্তর-পূর্বের সংস্কৃতিতে কুপ্রভাব না ফেলেন, তাদের নাগরিকত্ব দেওয়ার ব্যাপারে সরকার বেশ কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে।

সর্বশেষ খবর