কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বলেছেন, সরকার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের যে তালিকা করে দিয়েছে সেটার ভিত্তিতে লটারির মাধ্যমে সরকারিভাবে ধান ক্রয় করা হবে। সরকারের কাছে ধান বিক্রয়ের ক্ষেত্রে মধ্যস্বত্বভোগী দালাল কিংবা সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের কোনো সুযোগ থাকবে না। কৃষকের কাছ থেকে ধান ক্রয়ে কোনো প্রকার অনিয়ম বরদাশত করা হবে না। ২২টি জেলায় কম্পিউটারের মাধ্যমে তালিকা করা হয়েছে। সেই তালিকা থেকে কম্পিউটারাইজড পদ্ধতিতে বিক্রেতা নির্বাচিত হবেন। আমি আপনাদের প্রতিশ্রুতি দিতে চাই, সত্যিকারের কৃষকরাই এবার খাদ্য মন্ত্রণালয়ে ধান সরবরাহ করতে পারবেন।
গতকাল দুপুরে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার লালপুর গ্রামে সরকারিভাবে কৃষকের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বোরো ধান ক্রয় করার সময় এসব কথা বলেন তিনি। এ সময় সুনামগঞ্জ সদর আসনের সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, হাওর অঞ্চলে এ মৌসুমে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষক যেন ধানের ন্যায্যমূল্য পায় সে ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি জেলা থেকে যেন ৫০ হাজার টন ধান কেনা হয়। জবাবে কৃষিমন্ত্রী বলেন, কোনো কোনো জেলায় যেখানে তিনটি ফসল হয় সেখানে হাওরাঞ্চলের মানুষ বছরে একটি ফলস আবাদ করেন। সেটার ওপর ভিত্তি করে তাদের সারা বছর চলতে হয়। তিনি আজকের (বৃহস্পতিবার) কথা উল্লেখ করে বলেন, ধান ক্রয় কমিটির সভা রয়েছে। আমি হাওরবাসীর যুক্তিসঙ্গত দাবিটি সভায় উত্থাপন করব, যাতে হাওর এলাকা থেকে আরও বেশি ধান ক্রয় করা হয়। আমার দৃষ্টিতে এটা বাস্তবায়ন করা সম্ভব। কৃষিমন্ত্রী আরও বলেন, চলতি বোরো মৌসুমে কৃষকের কাছ থেকে ছয় লাখ মেট্রিক টন ধান কেনার কথা ছিল, কিন্তু সেটা বাড়িয়ে আট লাখ মেট্রিক টন করা হয়েছে।
গত বছর বোরো চাষিরা উৎপাদিত ধানের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। তারা খুবই ক্ষুব্ধ ছিলেন, আমরা খুবই বিব্রতকর অবস্থায় ছিলাম। ধানের দাম অস্বাভাবিকভাবে কম ছিল। মানুষ উৎপাদিত ধান বিক্রি করে উৎপাদন খরচ ওঠাতে পারেননি। এবার আমরা চেষ্টা করছি ধানের দামটা যাতে ভালো থাকে। আর আমরা বেশি পরিমাণ যদি কিনি তবে সেটা বাজারের ওপর প্রভাব ফেলবে। কাজেই ধান, চাল, গম মিলিয়ে এবার সরকারিভাবে ২১ লাখ মেট্রিক টন কেনা হচ্ছে। যে কারণে এরই মধ্যে ভালো দামে ধান বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন, জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থা বলেছে, করোনার প্রভাবে পৃথিবীর অনেক দেশে খাদ্য উৎপাদন হ্রাস পাবে। সে কারণে খাদ্য সংকট তৈরির পাশাপাশি কোনো কোনো দেশে দুর্ভিক্ষও দেখা দিতে পারে। এটি বিবেচনায় নিয়ে সরকার কৃষিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। কৃষি খাতে সর্বোচ্চ প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। কৃষি ঋণের সুদের হার শতকরা ৯ ভাগ থেকে ৪ ভাগে নিয়ে আসা হয়েছে। করোনার প্রভাবটা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন, বাংলাদেশের এক ইঞ্চি জমি যেন পতিত না থাকে। আমরা ধান-চালে উদ্বৃত্ত রয়েছি, সংকটকালে সে উদ্বৃত্ত খাবার পৃথিবীর অনাহারি মানুষের মুখে তুলে দিতে চাই।এর আগে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার সংগাইর হাওরে ধান কাটা পরিদর্শন করেন কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। এ সময় তারা হাওরে ধান কাটায় অংশ নিয়ে কৃষকদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন। পাশাপাশি কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার দিয়ে ধান কাটা প্রত্যক্ষ করেন।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ, মুহিবুর রহমান মানিক, মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, শামীমা শাহরিয়ার, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবদুল আহাদ, পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান, পৌর মেয়র নাদের বখত, উপজেলা চেয়ারম্যান খায়রুল হুদা চপল, করুণাসিন্ধু চৌধুরী বাবুল প্রমুখ।