সোমবার, ৪ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

হে আল্লাহ, আমরা জালেম ছিলাম ক্ষমা করুন

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

হে আল্লাহ, আমরা জালেম ছিলাম ক্ষমা করুন

হে পাঠক! আজ আমরা মাহে রমজানের প্রথম দশকের শেষ দিনের রোজা পালন করছি। অঝোর ধারায় রহমত বর্ষণ হয়েছে এ দশ দিন ধরে। জানি না আমাদের ভাগ্যে কয় ফোঁটা রহমত জুটেছে। পৃথিবী এখন করোনাভাইরাসের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত। স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত। এমন অবস্থায় আমাদের কর্তব্য হলো মহান প্রভুর কদমে সেজদায়  পড়ে কান্নাকাটি করা। আফসোস! এ সময় বেশির ভাগ মানুষই অনলাইনে অযথা সময় নষ্ট করছে। বিশেষ করে তরুণ-তরুণীরা দিনের পর দিন অনলাইনে ভালোমন্দ সাইটে পড়ে রয়েছে। বৃদ্ধরাও এখন অনলাইন, ফেসবুক, ইউটিউবের নেশায় ডুবে আছে। নারীরা তো সিরিয়ালের জগতে মিশে গেছেন অনেক আগে থেকেই। আল্লাহপাক আজাব দেন মানুষ যেন তার পথে ফিরে আসে এ জন্য। কিন্তু যে জাতির কপাল পোড়ে, তারা আজাব দেখেও সতর্ক হয় না। নিজেদের মতো করে বিপথে-কুপথে চলতেই থাকে। তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে চূড়ান্ত আজাব আসে। আর তারা চিরতরে ধ্বংস হয়ে যায়। আল্লাহ বলেন, ওয়াকাম মিন কারয়াতিন আহলাকনাহা ফাজাআহা বাসুনা বায়তান আও হুম কাইলুন। অর্থ : আমি কত জনপদকেই না আজাব দিয়ে ধ্বংস করে ফেলেছি। তাদেরকে বহুবার সতর্ক করেছি। কিন্তু তারা ছিল গাফেল। যখন আমার আজাব তাদেরকে পাকড়াও করেছে, তারা গভীর রাতে ঘুমে আচ্ছন্ন ছিল কিংবা বিশ্রামরত ছিল। (সূরা আরাফ, আয়াত ৪)। যখন ছোট ছোট আজাবেও মানুষ বেহুঁশ থাকে, প্রভুর পথে ফিরে আসে না, তখনই আল্লাহ বড় আজাব দেন। আর যখন বড় আজাব আসে তখন মানুষের কী অবস্থা হয় শুনুন। ফামা কানা দাওয়াহুম ইজ জা আহুম বাসুনা ইল্লা আন কালু ইন্না কুন্না জালিমিন। যখন প্রভুর শাস্তি মানুষকে ঘিরে ফেলে তখন মানুষের মুখে শুধু একটি কথাই বের হয়, হে আল্লাহ! আমরা সত্যিই জালেম ছিলাম। (সূরা আরাফ, আয়াত ৫)। বলছিলাম, আল্লাহতায়ালা রমজান দিয়েছেন আমরা যেন ক্ষমা অর্জন করতে পারি। আমরা যেন রহমতের বৃষ্টিতে ভিজতে পারি। কিন্তু আমরা না ক্ষমার কাজ করছি, না রহমত ভিক্ষে করছি। বরং আমরা প্রভুকে ভুলে অযথা অনর্থক কাজে সময় নষ্ট করছি। এতে করে আমরা ধীরে ধীরে প্রভুর চূড়ান্ত আজাবের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছি। এখন যদি আমরা সতর্ক না হই, সচেতন না হই তাহলে আমাদের বাঁচার আর কোনো উপায় থাকবে না। হে পাঠক! রহমতের বৃষ্টি শেষ হয়ে আজ সন্ধ্যা থেকে মাগফিরাতের বৃষ্টি ঝরতে শুরু করবে। যারা এখনো প্রভুর রহমত কামাই করতে পারেননি, ভাগ্যের ঝুলিতে এক-দুই ফোঁটা রহমত খুঁজে পাননি, তাদের জন্য হতাশ হওয়ার কিছু নেই। মাহে রমজানের আরও দুটি মূল্যবান দশক আমাদের জন্য রয়েছে। আমরা যদি মাগফিরাতের দশক কাজে লাগিয়ে প্রভুর ক্ষমা পেতে পারি, তারপর নাজাতের দশকে প্রভুর সন্তুষ্টি অর্জন করে জাহান্নাম থেকে মুক্তি অর্জন করতে পারি, তাহলে আশা করা যায়, দুনিয়ার আজাব থেকেও আল্লাহপাক আমাদের রেহাই দেবেন। তাই আবারও বলছি, মাহে রমজানের বাকি দুটো দশক যেন আমাদের হাতছাড়া না হয়ে যায়। হে আল্লাহ! আপনি আমাদের রমজানের বরকত ও রুহানিয়াত অর্জনের তাওফিক দিয়ে বাকি রোজাগুলো যথাযথ পালন করার সুযোগ দিন। প্রিয় পাঠক আপনারা ভালো থাকুন। সবাই ঘরে থাকুন, নিজে সুস্থ থেকে অন্যকে সুস্থ রাখুন। সবার জন্য দোয়া রইল। লেখক : বিশিষ্ট মুফাসসিরে  কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব। চেয়ারম্যান : বাংলাদেশ মুফাসসির  সোসাইটি, www.selimazadi.com

সর্বশেষ খবর