বৃহস্পতিবার, ৭ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

মৃত্যুতে ইতালিকে ছাপিয়ে ইউরোপে শীর্ষে ব্রিটেন

প্রতিদিন ডেস্ক

মৃত্যুতে ইতালিকে ছাপিয়ে ইউরোপে শীর্ষে ব্রিটেন

বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে (কভিড-১৯) আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুতে এখন ইতালিকে ছাপিয়ে ইউরোপের শীর্ষে উঠে এসেছে ব্রিটেন। বিশ্বে মৃতের সংখ্যা গত মঙ্গলবার ২৪ ঘণ্টায় পাঁচ হাজার ৩০০ বেড়ে দুই লাখ ৫৯ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। মোট আক্রান্তের সংখ্যাও এখন ৩৮ লাখ ছাড়িয়েছে।  সূত্র : আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম।

এক হিসাবে দেখা গেছে, বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর হার কিছুটা কমে এলেও সংক্রমণ কিছুতেই কমছে না। এক মাসের বেশি সময় ধরে প্রতিদিনই গড়ে ৮০ হাজার রোগী শনাক্ত হচ্ছে। একই সময়ে দৈনিক মৃত্যু হচ্ছে ছয় হাজারের মতো। তবে সপ্তাহখানেক ধরে মৃত্যুর সংখ্যা বেশ কমে এসেছে। ওয়ার্ল্ডোমিটারসের তথ্য অনুযায়ী, দৈনিক সংক্রমণ ৮০ হাজার ছাড়িয়েছিল গত ২ এপ্রিল। সেখান থেকে গত ৪ মে পর্যন্ত ৩৩ দিনে দৈনিক শনাক্ত হওয়া সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা ৮০ হাজারের ওপরে ছিল ২১ দিনই। ৮০ হাজারের কম ছিল মাত্র ১২ দিন। এই ১২ দিনের মধ্যে এক দিন বাদে সব দিনই এ সংখ্যা ছিল ৭০ হাজারের ওপরে।

মৃত্যুতে ইতালিকে ছাপিয়ে ইউরোপের শীর্ষে ব্রিটেন : করোনাভাইরাসের হামলায় মৃত্যুর সংখ্যায় ইতালিকে ছাপিয়ে গেল ব্রিটেন। কভিড-১৯ সংক্রমণে মৃত্যুর নিরিখে এত দিন ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষে ছিল ইতালি। ইতালিকে টপকে সেই স্থান নিয়েছে ব্রিটেন। ব্রিটেনের পররাষ্ট্র সচিব ডমিনিক রব একে ‘ম্যাসিভ ট্র্যাজেডি’ বলে উল্লেখ করেছেন। জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটি অ্যান্ড মেডিসিনের দেওয়া তথ্য অনুসারে, করোনার থাবায় ইতালিতে মঙ্গলবার পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৩১৫ জনের। ব্রিটেনে সেই সংখ্যা ২৯ হাজার ৫০১। এর পরেই ছিল স্পেন ও ফ্রান্স। কভিড-১৯ সংক্রমণে স্পেনে মৃত্যু হয় ২৫ হাজার ৬১৩ জনের। ফ্রান্সে ২৫ হাজার ৫৩৭ জনের। যদিও করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের নিরিখে ইউরোপের শীর্ষে আছে স্পেন। সেখানে ওই দিন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হন দুই লাখ ১৯ হাজার ৩২৯ জন। তার পরই ইতালি। সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা দুই লাখ ১৩ হাজার ১৩। মৃত্যুর নিরিখে ইউরোপে সর্বোচ্চ হলেও ব্রিটেনে আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ ৯৬ হাজার ২৪৩। মঙ্গলবার সংবাদিক সম্মেলনে ডমিনিক রব বলেছেন, ‘মহামারীকে কোন দেশ কেমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করল তা নির্ণয় করার সময় এখনো আসেনি। মহামারীর কবল থেকে পুরোপুরি মুক্ত হওয়ার পরই বিষয়টি বোঝা যাবে।’ করোনার জেরে ব্রিটেনে যে বিশাল সংখ্যক মৃত্যু হলো তা আগে কোনো দিন হয়নি বলে দাবি করেছেন তিনি। ব্রিটেনে ১৩ লাখ ৮০ হাজার মানুষের করোনা টেস্ট করা হয়েছে বলে জানান রব। সোমবারেই টেস্ট হয় ৮৪ হাজার ৮০০ জনের। তাদের মধ্যে চার হাজার ৪০৬ জনের কভিড-১৯ পজিটিভ ধরা পড়ে।

ডিসেম্বরেই সংক্রমণ ছড়িয়েছিল ফ্রান্সে : গত ডিসেম্বরেই মারণ করোনার সংক্রমণ ছড়িয়েছিল ফ্রান্সে। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত এক রোগীর স্বাস্থ্য পরীক্ষার স্যাম্পল ফের পরীক্ষা করার পর এ চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। মাইক্রোবিয়াল এজেন্টের একটি আন্তর্জাতিক জার্নালে বিষয়টি প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, প্যারিসের উত্তরভাগের একটি হাসপাতালে গত বছরের ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের জানুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত নিউমোনিয়া নিয়ে বেশ কিছু রোগী ভর্তি হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে ১৪ জনের স্বাস্থ্য পরীক্ষার পুরনো নমুনা আবার পরীক্ষা করা হয়েছিল। এর মধ্যে আলজেরিয়ার ৪২ বছর বয়েসী এক মাছ ব্যবসায়ীর করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। ২৭ ডিসেম্বর ওই ব্যক্তির থেকে যে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল, তাতেই মারণ ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। তার বিদেশে যাওয়ারও কোনো রেকর্ড ছিল না। বিষয়টি সামনে আসতেই তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। কারণ, সরকারিভাবে ইউরোপের প্রথম করোনা আক্রান্তের কথা জানুয়ারির শেষ দিকে জানানো হয়েছিল। সেক্ষেত্রে নতুন এ তথ্যে অনেক হিসাব-নিকাশ বদলে যেতে পারে। বিষয়টি সামনে এনে হইচই ফেলে দিয়েছেন ফরাসি গবেষক ডা. ওয়াইভেস কোহেন ও তার সহযোগীরা। যদিও একাধিক বিজ্ঞানী বিষয়টি নিয়ে দ্বিমত পোষণ করেছেন। নটিংহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মলিকিউলার ভাইরোলজির অধ্যাপক জোনাথন বল জানিয়েছেন, পরীক্ষাগারে সংক্রমণের কারণেও স্যাম্পলটি সংক্রমিত হতে পারে। তাই হয়তো ফলাফল পজিটিভ এসেছে। তিনি আরও বলেন, ডিসেম্বর থেকেই ফ্রান্সে করোনার সংক্রমণ ছড়ালে আরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হওয়ার কথা ছিল। আরও কয়েকজন বিজ্ঞানীও প্রায় একই মতামত প্রকাশ করেছেন। উল্লেখ্য, ইতালির চিকিৎসকরাও একইভাবে পুরনো স্যাম্পলের মধ্যে করোনার অস্তিত্বের প্রমাণ পেয়েছিলেন।

সিঙ্গাপুরে নতুন করে ভাইরাসের বিস্তার : সিঙ্গাপুর সরকার কভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে সফলতা পেয়ে বিধিনিষেধ শিথিল করে দিয়েছিল। এর পর হঠাৎ করে দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় বিদেশি শ্রমিকদের বাসস্থান বা ডর্ম হয়ে উঠেছে সরকারের লক্ষ্যবস্তু। এসব ডর্মে ঠাসাঠাসি করে বসবাস করেন বিশেষত বাংলাদেশ ও ফিলিপাইনের শ্রমিকরা। ডর্মে দ্বিতীয় দফা সংক্রমণ সরকারকে বাধ্য করেছে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে, যার কারণে ম্লান হয়ে গেছে কষ্টার্জিত সফলতা। সিঙ্গাপুরের স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, ১৮ হাজার ৭৭৮টি নতুন সংক্রমণের মধ্যে ১৬ হাজার ৩৯৩টি সংক্রমণ ধরা পড়েছে ডর্মভিত্তিক শ্রমিকদের মধ্যে।

ভারতে প্রতিদিনই আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে : ভারতে যত দিন যাচ্ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ততই বাড়ছে। মোট আক্রান্তের সংখ্যা তো বাড়ছেই, সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তের সংখ্যাও। নতুন আক্রান্তের সংখ্যায় প্রতিদিন রেকর্ড তৈরি হচ্ছে। এরই মধ্যে দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৪৬ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। গত মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৪৬ হাজার ৪৩৩ জন। ২৪ ঘণ্টায় নতুন আক্রান্তের সংখ্যাটা এক লাফে তিন হাজার ৯০০-তে দাঁড়িয়েছে। যা আগের সব রেকর্ডকে ছাপিয়ে গেছে। সোমবারই এ সংখ্যাটা ছিল দুই হাজার ৫৫৩ জন। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে মৃত্যু হয়েছে ১৯৫ জনের। এক দিনে মৃত্যুর হিসাবে এটাও সর্বোচ্চ। ফলে দেশে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৫৬৮ জন।

ঝুঁকিকে হালকা করে দেখেছিল ট্রাম্প প্রশাসন : কভিড-১৯ এর বিপদ নিয়ে আগে থেকে সতর্ক করার পরও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন তা হালকা করে দেখেছিল বলে অভিযোগ করেছেন প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস মোকাবিলায় প্রতিষেধক প্রস্তুতের দায়িত্বে থাকা একটি সংস্থার সাবেক কর্মকর্তা রিক ব্রাইট। তার দাবি, করোনাভাইরাস নিয়ে সতর্ক করার পর তাতে গা না করে কর্তাব্যক্তিরা উল্টো তার বিরুদ্ধেই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছেন। বায়োমেডিকেল অ্যাডভান্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের পদচ্যুত এ পরিচালক যুক্তরাষ্ট্রের স্পেশাল কাউন্সিলের দফতরে এ সংক্রান্ত্র অভিযোগও দিয়েছেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। ব্রাইটের দাবি, জানুয়ারিতে তিনি প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করে স্বাস্থ্য ও মানবসেবা মন্ত্রী অ্যালেক্স আজার ও অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের চক্ষুশূল হয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে কভিড-১৯ এ আক্রান্ত-মৃত্যুর সংখ্যা ও ব্যাপকভিত্তিক সংক্রমণের জন্য ডেমোক্রেটদের পাশাপাশি অনেক রিপাবলিকান রাজনীতিকও ট্রাম্প প্রশাসনকে দোষারোপ করছেন। তাদের ভাষ্য, প্রশাসন কেবল করোনাভাইরাসকে হালকা করেই দেখেনি, করোনাভাইরাস শনাক্তে পর্যাপ্ত পরীক্ষা কিট ও সুরক্ষা উপকরণ সংগ্রহেও দেরি করেছে। এর আগে গত মাসে এক বিবৃতিতে ব্রাইট বলেছিলেন, করোনাভাইরাসের ওষুধ হিসেবে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ও অন্যান্য ক্লোরোকুইনের ব্যবহার নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের অবস্থানের বিরোধিতা করায় তাকে নিচের পদে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিজ্ঞানভিত্তিক কোনো প্রমাণ না থাকা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের সরকার ওই ওষুধগুলোকে ‘মহৌষধ’ হিসেবে হাজির করতে চেষ্টা করেছিল, অভিযোগ করেছিলেন তিনি।

সর্বশেষ খবর