মঙ্গলবার, ৭ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

কিংবদন্তি শিল্পী এন্ড্রু কিশোর আর নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকা ও রাজশাহী

কিংবদন্তি শিল্পী এন্ড্রু কিশোর আর নেই

ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে/ রইবোনা আর বেশি দিন তোদের মাঝারে/ কিংবা হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস দম ফুরাইলে ঠুস। মৃত্যু চেতনার এমন সুরে অগণিত ভক্তের হৃদয়ে অনুরণন তুলেছিলেন এন্ড্রু কিশোর। সুরের স্রোতে নয়, এবার তিনি সত্যিই চলে গেলেন অনন্ত পথের দেশে। গতকাল সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিটে নিজ জেলা রাজশাহীতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত কিংবদন্তি শিল্পী এন্ড্রু কিশোর (৬৫)। স্ত্রী, দুই ছেলেসহ অগণিত গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তার মৃত্যুতে দেশের সংগীতাঙ্গনে নেমে আসে শোকের ছায়া। এন্ড্রু কিশোরের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

পৃথক শোকবার্তায় রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এন্ড্রু কিশোর তার গানের মাধ্যমে মানুষের হৃদয়ে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তারা প্রয়াতের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। দুই ছেলে আজ মঙ্গলবার অস্ট্রেলিয়া থেকে দেশে ফিরে আসবে। এরপর পারিবারিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রাজশাহী শহরের খ্রিস্টান কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হবে বলে জানিয়েছে এন্ড্রু কিশোরের পরিবার। সিঙ্গাপুরে দীর্ঘদিন ক্যান্সারের চিকিৎসা শেষে গত ১১ জুন দেশে ফেরেন এন্ড্রু কিশোর। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি রাজশাহী মহানগরীর মহিষবাথান এলাকায় বোন ডা. শিখা বিশ্বাস ও বোনজামাই ডা. প্যাট্রিক বিপুল বিশ্বাসের বাড়িতেই ছিলেন। ডা. প্যাট্রিক বিপুল বিশ্বাস জানান, রবিবার এন্ড্রু কিশোরের শারীরিক অবস্থা কিছুটা খারাপ হয়। সোমবার আরও অবনতি হলে বিকাল ৪টার দিকে তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। রাজশাহীতে জন্ম এন্ড্রু কিশোরের। তিনি ১৯৭৭ সালে ‘মেইল ট্রেন’ চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্রের গায়ক হিসেবে যাত্রা শুরু করেন। চলচ্চিত্রের গানে তিনি আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। গায়কির অনন্যশৈলীতে এন্ড্রু কিশোর নিজেকে উন্নীত করেছেন জনপ্রিয়তার শীর্ষে। ‘জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প’, ‘হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস’, ‘ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে’, ‘আমার সারা দেহ খেও গো মাটি’, ‘আমার বুকের মধ্যে খানে’ ‘ভেঙেছে পিঞ্জর মেলেছে ডানা’, ‘সবাই তো ভালোবাসা চায়’, ‘পড়ে না চোখের পলক’, ‘পদ্মপাতার পানি’, ‘ওগো বিদেশিনী’, ‘তুমি মোর জীবনের ভাবনা’, ‘আমি চিরকাল প্রেমের কাঙ্গাল’সহ অসংখ্য জনপ্রিয় বাংলা গান উপহার দিয়েছেন শ্রোতাদের। তিনি সবসময় সাদামাটা জীবনযাপন করেছেন। কখনো তাকে নিয়ে কোনো বিতর্ক ওঠেনি। তার শরীরে ক্যান্সার ধরা পড়ার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ  হাসিনা তাকে চিকিৎসার জন্য ১০ লাখ টাকা সহায়তা করেছিলেন। পাশাপাশি ‘গো ফান্ড মি’ নামে এক ওয়েবসাইটের মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহ করা হয়। সহশিল্পীদের মধ্যেও অনেকে তার পাশে দাঁড়ান। কিন্তু চিকিৎসায় তার সুস্থতা আসেনি। কিংবদন্তি এই শিল্পীর মৃত্যুতে আরও শোক জানিয়েছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ হুমায়ুন, কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, পরিবেশ ও বনমন্ত্রী শাহাব উদ্দিন, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ড. এনামুর রহমান, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম। এ ছাড়াও শোক জানিয়েছেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম, ময়মনসিংহ সিটি মেয়র ইকরামুল হক টিটু ও রাজশাহী সদর আসনের এমপি ফজলে হোসেন বাদশা। এছাড়া শোক জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সর্বশেষ খবর