মঙ্গলবার, ৭ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

বন্দুকযুদ্ধে মলম পার্টির দুই সদস্য নিহত, গ্রেফতার ২

নিজস্ব প্রতিবেদক

ওরা যাত্রীবেশী মলম পার্টির সদস্য। সিএনজি কিংবা মাইক্রোবাসে যাত্রী হিসেবে উঠত। গাড়ির চালকও তাদের চক্রেরই সদস্য। তাই মাঝেমধ্যে সুযোগমতো হামলে পড়ত গাড়িতে থাকা যাত্রীদের ওপর। কেড়ে নিত সর্বস্ব। ইতোমধ্যে ওদের হাতে নৃশংসভাবে প্রাণ হারিয়েছেন নিরপরাধ অনেক যাত্রী। ১৭ জুনও এমনই এক চক্রের হাতে খুন হয়েছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হারুন। তবে এবার আর শেষ রক্ষা হয়নি ভয়ঙ্কর ওই চক্রের সদস্যদের। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি-গুলশান) জালে পড়ে প্রাণ গেছে দুজনের। গ্রেফতার হয়েছে শফিক ও সিদ্দিক নামে চক্রের আরও দুজন। ডিবি বলছে, এরা অবলীলায় স্বীকার করেছে অপকর্মের কথা। গতকালই তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চার দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। ডিবির উপকমিশনার (গুলশান) মশিউর রহমান বলেন, মহাখালী থেকে খিলক্ষেতের কুড়িল বিশ্বরোড ফ্লাইওভারের আশপাশ এলাকা, ফ্লাইওভারের নিচে ও পূর্বাচলগামী ৩০০ ফিট রাস্তায় সিএনজি অটোরিকশা, প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাসে থাকা যাত্রীবেশী দুর্বৃত্তরা মাঝেমধ্যে ছিনতাই, ডাকাতি ও অপহরণের মতো অপরাধ করছিল। এরই মধ্যে একাধিক চক্রকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, গত রবিবার রাতে আমাদের কাছে তথ্য ছিল একটি চক্র টার্গেটের খোঁজে মাঠে রয়েছে। সে অনুযায়ী আমাদের একাধিক টিম রাত ১১টা থেকে ৩০০ ফিট পূর্বাচলগামী রাস্তাসহ খিলক্ষেতের বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান নেয়। রাত আড়াইটার দিকে একটি সিএনজি অটোরিকশা শেওড়া বাসস্ট্যান্ড দিয়ে খুব জোরে খিলক্ষেত ফ্লাইওভারের দিকে যেতে থাকে। আমাদের একটি টিম ওই গাড়িটাকে সিগন্যাল দিয়ে থামতে বললেও উপেক্ষা করে ফ্লাইওভারের ওপর দিয়ে যেতে থাকে। অবশেষে কুড়িল বিশ্বরোড ফ্লাইওভারের নিচে ময়লার ডিপোর পূর্বদিকে সিএনজি অটোরিকশাটি হার্ডব্রেক করলে দুই দুর্বৃত্ত সিএনজি থেকে নেমে পুলিশের দিকে গুলি করে। আত্মরক্ষার্থে পুলিশ পাল্টা গুলি চালালে নান্নু ও মোশাররফ নামে দুজন গুলিবিদ্ধ হয় এবং আমাদের দুই সদস্য আহত হন। তবে ওই চক্রের আরও দুই সদস্য শফিক ও সিদ্দিককে অক্ষত অবস্থায় আমরা গ্রেফতার করতে পেরেছি। ঘটনাস্থল থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন, ২ রাউন্ড গুলি, কাদামাখা একটি চাপাতি, একটি চাকু, সিএনজির সিটের নিচ থেকে ১ কৌটা মলম, একটি পেঁচানো গামছা, দুটি মোবাইল ফোন সেট ও সিএনজি অটোরিকশাটি উদ্ধার করে জব্দ করি। গুলিবিদ্ধ দুজনকে গুরুতর অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে ভোররাত ৫টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। গ্রেফতার শফিক ও সিদ্দিকের কাছ থেকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে তদন্তসংশ্লিষ্টরা জানান, নিহতের একজন নান্নু, অন্যজন মোশাররফ। নান্নু একসময় হলুদ ট্যাক্সি ক্যাব চালাত। এর আগে ট্যাক্সিক্যাবের যাত্রীকে হত্যার দায়ে সে ছয় বছর জেলে ছিল। মোশাররফও একাধিক মামলায় সাজা ভোগ ও হাজতবাস করেছিল। গ্রেফতার শফিক ও সিদ্দিক ইয়াবা, ফেনসিডিলসহ গ্রেফতার হয়ে বিভিন্ন সময় জেল খেটেছে। গত ১৭ জুন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হারুনকে আমতলী থেকে যাত্রীবেশে উঠিয়ে কুর্মিটোলা জেনারেল হসপিটাল অতিক্রম করার পরপরই তাকে কিল ঘুসি মেরে চোখে মলম লাগিয়ে দেয়। হারুন প্রতিরোধ করতে চাইলে একপর্যায়ে তার গলায় গামছা পেঁচিয়ে নান্নু ও মোশাররফ জোরে টানতে থাকে। একপর্যায়ে হারুনের নাক-কান দিয়ে রক্ত বের হয়ে মারা গেলে তাকে ৩০০ ফিট রাস্তার পাশে অস্ট্রেলিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের কাছাকাছি ঘাসের ওপর ফেলে দিয়ে পালিয়ে যায়।

 

সর্বশেষ খবর