ক্যাসিনো ব্রাদার্স এনামুল হক এনু ও রূপন ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে করা মানি লন্ডারিং মামলাগুলোর ৪টির চার্জশিট প্রস্তুত করেছে অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এক সপ্তাহের মধ্যেই আদালতে তা দাখিল করা হবে। এসব মামলায় অভিযুক্ত হয়েছে ৫১ জন। ওই দুই ভাইয়ের জব্দ হওয়া ৯১টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে গত ৫ বছরে ২০০ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে বলে সংস্থাটির তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। দেশের বাইরেও তাদের টাকা পাচারের বিষয়ে তদন্ত চলছে। এ ছাড়াও এনু-রূপনের আরেক সহযোগী ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ফুটবলার জয় গোপাল সরকারকে সোমবার পুরান ঢাকার তাঁতীবাজার থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গতকাল দুপুরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব জানান সিআইডির স্পেশাল ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন বিভাগের ডিআইজি ইমতিয়াজ আহমেদ। তিনি জানান, তারা এনু-রূপনের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের মোট ৫টি মামলার তদন্ত করছেন। এর মধ্যে ৪টির চার্জশিট প্রস্তুত হয়েছে। চার্জশিট প্রস্তুত করতে বাকি আছে ওয়ারী থানায় করা আরও একটি মামলার। গেন্ডারিয়া থানার একটি মামলায় অভিযুক্ত হয়েছে ১৬ জন। সূত্রাপুর থানার এক মামলায় অভিযুক্ত হয়েছে ১৪ জন এবং আরেক মামলায় অভিযুক্ত হয়েছে ১০ জন। ওয়ারী থানার একটি মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে ১০ জনকে। এনু-রূপনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন জয় গোপাল সরকার। তিনি ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের হয়ে ফুটবল খেলেছেন। খেলা থেকে অবসর নিয়ে ওই ক্লাবের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য পদ নেন। দুই বছর পর ক্লাবের ক্যাশিয়ারের দায়িত্ব নেন। ২০১৪ সালে সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর ক্যাসিনো ব্রাদার্স এনু-রূপনের সঙ্গে তার সখ্যতা গড়ে ওঠে। ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে ক্যাসিনো পরিচালনায় তিনি ছিলেন অন্যতম হোতা। ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে জড়িত কয়েকজন এজেন্টকে সিআইডি গ্রেফতার করে। আদালতে তারা ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। তাদের জবানবন্দিতেই উঠে আসে জয় গোপালের নাম। ক্যাসিনোর সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার তথ্য আসায় ৯ মাস আগেই আত্মগোপনে যান তিনি।
ডিআইজি ইমতিয়াজ আহমেদ জানান, তদন্তে এনু-রূপনের ৯১টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য পাওয়া গেছে। ক্যাসিনো ব্যবসায় গত ৫ বছরে এসব অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে ২০৮ কোটি ৪৪ লাখ ১১ হাজার ৬৫০ টাকা। তোলা হয়েছে ২০৫ কোটি ৮৪ লাখ ৮১ হাজার ৮৪ টাকা। এখন রয়েছে ১৯ কোটি ১১ লাখ ৩৬ হাজার ৩৯৪ টাকা। আদালতের আদেশে এসব টাকাও জব্দ করা হয়েছে। পুরান ঢাকার বংশাল, ইংলিশ রোড, নয়াবাজার, মতিঝিল, শান্তিনগর, গুলশান, ধোলাইখাল, নবাবপুর এলাকায় ৭টি বেসরকারি ব্যাংকে এসব টাকা জমা রাখেন। ঢাকা ও তার আশপাশে তাদের ২০টি বাড়ি, ২৫ কাঠা জমি এবং ১২৮টি ফ্ল্যাটের সন্ধান পাওয়া গেছে। কেরানীগঞ্জে পাওয়া গেছে ১৫ কাঠা জমি, মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে পাওয়া গেছে ১০ কাঠা জমি, শরীয়তপুরের নড়িয়া থানায় পাওয়া গেছে ১২ শতাংশ জমি, পালং থানায় পৃথকভাবে পাওয়া গেছে ২০ শতাংশ এবং ১৪ শতাংশ জমি। এসব সম্পদের বেশির ভাগই গত ৫ বছরে গড়ে তুলেছেন তারা। এনু-রূপনের উত্থানের বিষয়ে তিনি বলেন, তাদের উত্থান পারিবারিকভাবে। তাদের বাবা জুয়াড়ি ছিলেন। সদরঘাটে তাদের জুয়ার আড্ডা ছিল। সেখানেই এনু-রূপনের পেশাদারি জুয়া কার্যক্রমের শুরু। ২০০৭ সাল থেকে ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে ওয়ানটেন খেলা হতো। ২০১৪ সাল থেকে ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জয় গোপালের হাত ধরেই বড় পরিসরে ইউরোপীয় আদলে তাদের ক্যাসিনো ব্যবসার উত্থান হয়। ওই বছর ক্যাসিনোর জিনিসপত্র তারা জাহাজে করে ঢাকায় আনেন। আর তাদের ক্যাসিনোতে অর্জিত অর্থ তারা বাড়ি, ফ্ল্যাট, অলঙ্কারের পেছনে ব্যয় করেছেন। তিনি বলেন, প্রতি রাতে বিপুল অঙ্কের লেনদেন হতো। গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর এনু ও রূপনের পুরান ঢাকার বাসায় এবং তাদের দুই কর্মচারীর বাসায় অভিযান চালায় র্যাব। সেখান থেকে ৫ কোটি টাকা এবং সাড়ে ৭ কেজি সোনা জব্দ করা হয়। পরে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি এনু-রূপনের লালমোহন সাহা স্ট্রিটের বাসায় অভিযান চালায় র্যাব। ওই বাড়ি থেকে ২৬ কোটি টাকা জব্দ করা হয়। আর ৫ কোটি ১৫ লাখ টাকার এফডিআরের কাগজ এবং এক কেজি সোনা জব্দ করা হয়।