শনিবার, ২৫ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

দুর্যোগে পাশে দাঁড়াতে যুক্তরাষ্ট্র অঙ্গীকারবদ্ধ

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

দুর্যোগে পাশে দাঁড়াতে যুক্তরাষ্ট্র অঙ্গীকারবদ্ধ

আর্ল মিলার

উত্তরবঙ্গের বন্যাকবলিত অঞ্চলে ঘর-বাড়ি বা জীবিকা হারানো পরিবারগুলোর জন্য যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সহায়তা ঘোষণা করেছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলার। রংপুর বিভাগের গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রাম জেলার দুটি ইউনিয়নের সবচেয়ে বিপন্ন মানুষ যারা ঘর-বাড়ি হারা, ক্ষুধার্ত, আশ্রয়হীন এবং অন্য কোনো সহায়তা পাচ্ছে না তাদের এই সহায়তা দেওয়া হবে। যুক্তরাষ্ট্র, বাংলাদেশ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং জাতিসংঘের চলমান সহযোগিতার অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (ইউএসএআইডি)’র মাধ্যমে এ সহায়তা দেওয়া হবে। রাষ্ট্রদূত মিলার বলেন, প্রবল বন্যায় তাৎক্ষণিক সহায়তা প্রদান জরুরি।         

বভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে অসহায় মানুষকে সহায়তা দিতে বাংলাদেশের জনগণের পাশে দাঁড়াতে এবং বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করতে যুক্তরাষ্ট্র সরকার বিগত বহু দশকের ন্যায় অঙ্গীকারাবদ্ধ। গতকাল ঢাকার মার্কিন দূতাবাস জানায়, যেসব এলাকায় এই সহায়তা দেওয়া হবে সেগুলো হলো কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়ন এবং গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি উপজেলার ফজলুপুর ইউনিয়ন। ইউনিয়নগুলোর মধ্যে বন্যায় এ দুটি এলাকার মানুষই সবার আগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই সহায়তার মধ্যে রয়েছে উপযুক্ত মানুষের জন্য বহুমুখী নগদ অর্থ সহায়তা। তা ছাড়া এই পরিবারগুলোকে জরুরি পানি, পয়ঃনিষ্কাশন ও স্বাস্থ্যবিধি বিষয়ে সহায়তা দেওয়া হবে যা রোগ-জীবাণু প্রতিরোধ বিশেষত কভিড-১৯ এর বিস্তার প্রতিরোধে অত্যাবশ্যক। নগদ অনুদান গ্রহীতারা এই অর্থ দিয়ে তাদের তাৎক্ষণিক চাহিদা পূরণে জরুরি উপকরণ কিনতে পারবে। এর ফলে দুর্যোগের মধ্যেও স্থানীয় অর্থনীতি সবল থাকবে। এর আগে, গৃহস্থালি ও সামাজিক পর্যায়ে দুর্যোগ মোকাবিলায় মানুষকে আরও সক্ষম করে তুলতে এবং দুর্যোগ মোকাবিলার প্রস্তুতি জোরদার করতে ইউএসএআইডি কয়েকটি কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছে। কেয়ার বাংলাদেশের সঙ্গে ইউএসএআইডির সৌহার্দ্য-৩ প্রকল্পের আওতায় ২০১৯ সালে বাংলাদেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলের বন্যাকবলিত নাজুক পরিবারগুলোকে তাদের ১,৭৪৪টি বসত ভিটাকে বন্যা সমতল থেকে উঁচু করে তৈরি করতে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। উঁচু করা এই বাড়ি-ঘরের কারণে পরিবারগুলো এবং তাদের গবাদি পশু ও বাগানগুলো নিরাপদ থাকে। এখন এসব উঁচু ভিটায় বসবাসকারী অনেক মালিক তাদের বন্যাকবলিত প্রতিবেশীদের আশ্রয় দিয়েছে। তাছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফেয়ারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এবং ওয়ার্ল্ড মেটিওরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশনের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে ইউএসএআইডি বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা পেশাজীবীদের দক্ষিণ এশিয়ার আকস্মিক বন্যা নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। এই দক্ষতা বৃদ্ধি কার্যক্রমে আকস্মিক বন্যা নিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন নির্দেশনাকে প্রায়োগিক পূর্বাভাসে রূপ দেওয়া হয়। এগুলো ব্যবহার করে স্থানীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তাগণ বন্যাপ্রবণ এলাকার অধিবাসীদের পূর্ব সতর্কতা প্রদান করতে পারেন। বন্যার পূর্ব সতর্কতা জানিয়ে খুদেবার্তা প্রেরণ করলে পরিবারগুলোর জন্য মানুষজন, গবাদিপশু, দ্রব্যসামগ্রী ও জীবিকা সরঞ্জামগুলো উঁচু জায়গায় সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া সহজ হয়। ইউএসএআইডির সৌহার্দ্য ৩ প্রকল্পের আওতায় স্থানীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি ও স্বেচ্ছাসেবীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় যাতে তারা পূর্ব সতর্কতা প্রদান ব্যবস্থার ব্যবহারপূর্বক জনসমাজকে বন্যা মোকাবিলার প্রস্তুতি গ্রহণে সহায়তা করতে পারেন। যুক্তরাষ্ট্র সরকার শুধু ইউএসএআইডির মাধ্যমে ১৯৭১ সাল থেকে বাংলাদেশে উন্নয়ন সহায়তা হিসাবে ৭ বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ প্রদান করেছে। খাদ্য নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সুযোগ সম্প্রসারণ, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা উন্নতকরণ, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও চর্চা উৎসাহিতকরণ, পরিবেশ সুরক্ষা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলার সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কার্যক্রম সম্প্রসারণের মাধ্যমে বাংলাদেশের জনসাধারণের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে ইউএসএআইডি ২০১৯ সালে ২০০ মিলিয়ন ডলারের অধিক অর্থ সহায়তা প্রদান করেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর