শনিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

জীবিত আসামিকে বন্দুকযুদ্ধে নিহত দেখিয়ে চার্জশিট থেকে বাদ

কর্মকর্তার গাফিলতির প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত দল

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

জীবিত আসামিকে বন্দুকযুদ্ধে নিহত দেখিয়ে চার্জশিট থেকে বাদ

জীবিত ব্যক্তিকে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত দেখিয়ে চট্টগ্রামে জয়নাল নামের এক ব্যক্তিকে হত্যা চেষ্টা মামলার চার্জশিট থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল।

‘নামে নামে জমে টানে’ বহুল প্রচলিত এই প্রবাদ থেকে নিজের মতো সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করেছিলেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) বায়েজিদ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) দীপঙ্কর চন্দ্র রায়। তবে বিধিবাম। সিএমপির তদন্ত কমিটি তদন্ত কর্মকর্তার এই অপকর্মের  সত্যতা পাওয়ায় এরই মধ্যে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। প্রস্তুতি চলছে বিভাগীয় মামলা দায়েরের। দু-একদিনের মধ্যেই সিএমপি কমিশনারের তদন্ত প্রতিবেদন আনুষ্ঠানিকভাবে জমা দেওয়া হবে বলে দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিএমপির নবনিযুক্ত কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর বলেন, ‘বায়েজিদ থানার ঘটনার দায়ভার পুরো ইউনিট নেবে না। এ গাফিলতিতে যার ওপর দায় বর্তাবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এরই মধ্যে ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।’ জানা গেছে, ২০১৮ সালে বায়েজিদ থানার রৌফবাদ এলাকার বাসিন্দা শাহ আলম ও তার নাতি নিরবের ওপর হামলা চালায়  মোহাম্মদ জয়নাল ও নাসিমসহ কয়েকজন। এ ঘটনায় হত্যা প্রচেষ্টার অভিযোগে সাতজনকে আসামি করে মামলা করেন শাহ আলম। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে এ মামলার চার্জশিট দেয় পুলিশ। যাতে ঘটনার অন্যতম অভিযুক্ত জয়নাল ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছে- এমন দাবি করে চার্জশিট থেকে নাম বাদ দেওয়া হয়। তবে নিহত হওয়া প্রকৃত ব্যক্তির নাম জয়নাল আবেদীন। বাবার নাম নূরুল ইসলাম। ২০১৯ সালের ৩ সেপ্টেম্বর সন্ত্রাসী কর্মকা-ের জন্য আমিন জুট মিল এলাকায় বায়েজিদ থানা পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন তিনি। সম্প্রতি জয়নাল একটি মামলায় হাজিরা দিতে আদালতে হাজির হলে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। সিএমপির গোয়েন্দা বিভাগকে দেওয়া হয় তদন্তের দায়িত্ব। বেরিয়ে আসে থলের বিড়াল। তবে শুধু দীপঙ্কর নন, থানার ওসি এবং পরিদর্শক তদন্তের গাফিলতির বিষয়টিও উঠে এসেছে তদন্ত প্রতিবেদনে। সিএমপি ডিবির উপ-কমিশনার (উত্তর) মুহাম্মদ আলী হোসেন বলেন, ‘জীবিত ব্যক্তিকে নিহত দেখিয়ে চার্জশিট দেওয়ার ঘটনায় তদন্ত কর্মকর্তার গাফিলতি রয়েছে। বায়েজিদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং ওসি তদন্ত এ ঘটনার দায় এড়াতে পারেন না। এ ঘটনার তদন্ত শেষ। দু-একদিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।’ ভুল চার্জশিট দেওয়া মামলার বাদী শাহ আলম বলেন, ‘মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দীপঙ্কর চন্দ্র রায় আসামিদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে চার্জশিট থেকে ঘটনার অন্যতম আসামি জয়নালকে বাদ দিয়েছে। চার্জশিট দেওয়ার আগে তদন্ত কর্মকর্তা একটি বারের জন্যও আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। মামলার তদন্তের বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করা হলে উল্টো খারাপ আচরণ করতেন।’ চার্জশিট থেকে বাদ পড়া মোহাম্মদ জয়নাল বলেন, ‘পুলিশ কি কারণে আমাকে চার্জশিট থেকে বাদ দিয়েছে জানি না। ক্রসফায়ারে মারা গেছে জয়নাল। আমি এখনো জীবিত আছি।’ সিএমপির উপ-কমিশনার (উত্তর) বিজয় বসাক বলেন, ‘এরই মধ্যে তদন্ত কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। এখানে আর কারও গাফিলতি রয়েছে কিনা তাও তদন্ত করা হচ্ছে।’ ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দীপঙ্কর চন্দ্র রায় বলেন, ‘দুটি নাম একই হওয়ায় ভুলক্রমে জয়নালকে চার্জশিট থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। মামলার আসামি জয়নাল ও বন্দুকযুদ্ধে নিহত জয়নাল পৃথক ব্যক্তি।’

সর্বশেষ খবর