শনিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

আগ্রহ বাড়ছে ড্রাগন চাষে

শেখ আহসানুল করিম, বাগেরহাট

আগ্রহ বাড়ছে ড্রাগন চাষে

ভিয়েতনামের জাতীয় ফল ড্রাগন। মিষ্টি ও টক-মিষ্টি স্বাদের এ ফল চাষে বাগেরহাটে বিপ্লব ঘটিয়েছেন সদর উপজেলার উৎকুল গ্রামের খামারি ফজলুল করিম। নিজে ২০ একর জমির ওপর বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগনের বিশাল খামার গড়ে তোলার পাশাপাশি জেলাজুড়ে খামারিদের মাঝে ড্রাগন চাষ ছড়িয়েও দিয়েছেন। প্রতি ড্রাগন গাছ থেকে খামারিরা এক মৌসুমে ৫ বার করে ফল তুলছেন। খামারি ফজলুল করিম জানান, ২০১৫ সালে ড্রাগন বাগানের সূচনা করেন মাত্র ১৬০টি চারা দিয়ে। ২০ একর জমির ওপর বাণিজ্যিকভাবে গড়া তার ড্রাগন খামারে এখন গাছের সংখ্যা ৮ হাজার ছাড়িয়েছে। তার কাছ থেকে জানা গেছে ড্রাগন চাষের নানা তথ্য।

দূর থেকে এই ড্রাগন খামার দেখলে মনে হয় স্বযতেœ ক্যাকটাস  লাগিয়েছে কেউ। একটু পাশে যেতেই চোখ ধাঁধিয়ে যায় ফুল ও লাল ফলে ভরা খামার দেখে। প্রতি গাছে রয়েছে ফুল, মুকুল এবং পাকা ড্রাগন। এ দেশের আবহাওয়া লাল, হলুদ এবং সাদা ড্রাগন ফল চাষের জন্য বেশ উপযোগী হওয়ায় ফজলুল করিম গড়ে তুলেছেন লাল ড্রাগনের খামার। ড্রাগন লতানো কাটাযুক্ত গাছ, যদিও এর কোনো পাতা নেই। গাছ দেখতে অনেকটা সবুজ ক্যাকটাসের মতো। গাছে শুধু রাতে স্বপরাগায়িত ফুল ফোটে। ফুল লম্বাটে সাদা ও হলুদ রঙের হয়। তবে মাছি, মৌমাছি ও পোকা-মাকড় পরাগায়ন ত্বরান্বিত করে। কৃত্রিম পরাগায়নও করা যায়। এ গাছকে ওপরের দিকে ধরে রাখার জন্য সিমেন্ট/বাঁশের খুঁটির সঙ্গে ওপরের দিকে তুলে দেওয়া হয়। ড্রাগনের চারা বা কাটিং রোপণের ১০ থেকে ১৫ মাসের মধ্যেই ফল সংগ্রহ করা যায়। এপ্রিল থেকে মে মাসে ফুল আসে আর শেষ হয় নভেম্বর মাসে। ফুল আসার ৩০ থেকে ৪০ দিনের মধ্যে ফল সংগ্রহ করা যায়। নভেম্বর মাস পর্যন্ত ফুল ফোটা এবং ফল ধরা অব্যাহত থাকে। একেকটি ফলের ওজন ২৫০ গ্রাম  থেকে এক কেজিরও বেশি হয়ে থাকে। একটি পূর্ণাঙ্গ গাছ  থেকে ১০০ থেকে ১৩০টি পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। সঠিক পরিচর্যা করতে পারলে একটি গাছ থেকে ৪০ বছর বয়স পর্যন্ত ফলন পাওয়া সম্ভব। ফজলুল করিম জানান, এবার খামারে ড্রাগনের বাম্পার ফলন হয়েছে। এখন প্রতি সপ্তাহে ফল বিক্রি হচ্ছে চার থেকে পাঁচ মণ করে। যা বাজারে পাইকারি কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা দরে। প্রতিদিন খামার থেকে বিক্রি হচ্ছে ড্রাগন গাছের চারাও। প্রতিটি চারা বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা দরে। কোনো বেকার যুবক বা সরকারি অফিসগুলোতে বিনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে ড্রাগনের চারা। তিনি বলেন, এ বছর করোনার মধ্যে এত বেশি চাহিদা যে, ক্রেতাদের আমরা সে পরিমাণ সরবরাহই করতে পারছি না। অনেকেই আমার কাছ থেকে চারা কিনছেন, ছোট-বড় খামার করছেন। ড্রাগন চাষ বিশেষ করে করোনাকালে বিদেশ ফেরতদের কর্মসংস্থানের সুযোগও তৈরি করেছে। বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক রঘুনাথ কর বলেন, ফজলুল করিমের ড্রাগন চাষের সফলতা দেখে জেলায় অনেকেই এখন ড্রাগন ফলের চাষ করছেন। প্রতি মাসেই বাড়ছে ড্রাগন চাষের জমি। অধিক পুষ্টিগুণসম্পন্ন এ ফল চোখ সুস্থ রাখে, শরীরের চর্বি কমায়, রক্তের কোলেস্টেরল কমায়, উচ্চ রক্তচাপ কমানোসহ রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। করোনার কারণে স্থানীয় বাজার সৃষ্টি হওয়ায় এ ফল চাষে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর