রবিবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

ওয়াসা এমডি তাকসিমের মেয়াদ ষষ্ঠবারের মতো বৃদ্ধির প্রস্তাব

---- টিআইবির প্রতিবাদ

নিজস্ব প্রতিবেদক

ওয়াসা এমডি তাকসিমের মেয়াদ ষষ্ঠবারের মতো বৃদ্ধির প্রস্তাব

ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী তাকসিম এ খানের মেয়াদ ষষ্ঠবারের মতো তিন বছর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। গতকাল বিকালে অনলাইনের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত সংস্থার বিশেষ বোর্ডসভায় এ প্রস্তাব করা হয়। সভায় উপস্থিত নয়জন সদস্যের মধ্যে একজন তাৎক্ষণিক এ প্রস্তাব নাকচ করেন। এদিকে এক বিবৃতিতে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, ঢাকা ওয়াসার বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (এমডি) পুনর্নিয়োগ দেওয়ার উদ্যোগ অনৈতিক ও বিধিবহির্ভূত।

বৃহস্পতিবার ঢাকা ওয়াসার সচিব প্রকৌশলী শারমিন হক আমীর স্বাক্ষরিত নোটিসে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ছুটির দিনে ডাকা ওয়াসা বোর্ডের ৯৭তম বিশেষ এ সভার একমাত্র আলোচ্যসূচি ছিল, ‘ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে প্রকৌশলী তাকসিম এ খানকে তিন বছরের জন্য নিয়োগের প্রস্তাব স্থানীয় সরকার বিভাগে প্রেরণ।’ ১৪ অক্টোবর এমডি তাকসিম এ খানের পঞ্চম দফা মেয়াদ শেষ হবে।

বোর্ডসভা সূত্রে জানা যায়, সভায় সভাপতিত্ব করেন চিকিৎসক প্রতিনিধি বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন। সভায় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব শাবান মাহমুদ, বিএসসিসি ইঞ্জিনিয়ারদের প্রতিনিধি ওয়ালিউল্লাহ শিকদার, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর হাসিবুর রহমান মানিক, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব বেগম সেলিনা আখতার, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার প্রতিনিধি আবদুল হামিদ, চার্টার্ড অ্যাকাউটেন্ট প্রতিনিধি কামরুল হাসান, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সাবেক প্যানেল মেয়র আলেয়া সারোয়ার ডেইজি, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পানি সরবরাহ অনুবিভাগ) মুহম্মদ ইবরাহিম ও চেম্বার অব কমার্সের প্রতিনিধি মাহমুদ হোসাইন। সভার শুরুতে বেগম সেলিনা আখতার বলেন, ওয়াসার অনেক সাফল্য রয়েছে। এমডি তাকসিম এ খান অনেক কাজ করেছেন। তার মেয়াদ বৃদ্ধি করা যেতে পারে। তবে তিন বছরের পরিবর্তে মেয়াদ ছয় মাস কিংবা সর্বোচ্চ এক বছর বাড়ানো যেতে পারে। কাউন্সিলর হাসিবুর রহমান মানিক বলেন, ওয়াসা এমডির মেয়াদ বাড়ানোর এ প্রক্রিয়া সঠিক কি না তা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় যাচাই করে দেখতে পারে। তার কথার প্রত্যুত্তরে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মুহম্মদ ইবরাহিম বলেন, নতুন এমডি নিয়োগের ক্ষেত্রে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে হয়। কিন্তু চলমান এমডির মেয়াদ বাড়ানোর জন্য বোর্ডসভার প্রস্তাবই যথেষ্ট। এমডির এই মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাবকে সরাসরি নাকচ করেন বিএসসিসি ইঞ্জিনিয়ারদের প্রতিনিধি ওয়ালিউল্লাহ শিকদার। তিনি বলেন, এভাবে ছুটির দিনে তড়িঘড়ি মিটিং ডেকে আলোচ্যসূচি নির্ধারণ করে মেয়াদ বাড়ানো কোনো বৈধ প্রক্রিয়া নয়। মেয়াদ না বাড়িয়ে ওয়াসা এমডি তাকসিম এ খানের দুর্নীতির বিষয়ে গণমাধ্যমে উঠে আসা সংবাদগুলো তদন্ত করে দেখার দাবি জানান তিনি। বাকি সব সদস্য এমডির মেয়াদ বাড়ানোর পক্ষে মত দিয়েছেন। প্রস্তাবটি আজ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে লিখিত আকারে পাঠানো হবে বলে জানা গেছে।

ওয়াসার এমডির পুনর্নিয়োগ অনৈতিক, বিধিবহির্ভূত- টিআইবি : ঢাকা ওয়াসার বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (এমডি) পুনর্নিয়োগ দেওয়ার উদ্যোগ অনৈতিক ও বিধিবহির্ভূত বলে মন্তব্য করেছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। তিনি এর তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, ধারাবাহিক ব্যর্থতা ও অনিয়মের গুরুতর সব অভিযোগ থাকার পরও এই পদে প্রশ্নবিদ্ধ নিয়োগ এবং অব্যাহত পুনর্নিয়োগ দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠার রাষ্ট্রীয় অঙ্গীকারকে প্রহসনে পরিণত করেছে। এটা স্পষ্ট যে বরাবরের মতো এবারও নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই ঢাকা ওয়াসার শীর্ষ ব্যবস্থাপনায় একই ব্যক্তির অনৈতিক ও অবৈধ বহাল অব্যাহত রেখে দীর্ঘকালের লালিত এককেন্দ্রিক আধিপত্যবাদ অপরিবর্তিত রাখার সব ব্যবস্থা করে ফেলা হয়েছে।

গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা বলেছে টিআইবি। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, নিয়ম অনুযায়ী এই পদে দরখাস্ত আহ্বান করা হয়েছিল কিনা, কারা আবেদন করেছিলেন, কেন তারা যোগ্য বিবেচিত হলেন না, বা কেন বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালকই একমাত্র উপযুক্ত প্রার্থী, কেন সংশ্লিষ্ট বিধি অবমাননা করে মেয়াদের পর মেয়াদ একই ব্যক্তিকে নবায়ন দান অপরিহার্য, এসব প্রক্রিয়াগত প্রশ্নের উত্তর যাচাই করা হয়েছে কিনা, এর কোনো উল্লেখ নেই। পক্ষান্তরে বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালকের প্রায় দশকব্যাপী দায়িত্বকালে জনদুর্ভোগের বিষয়টি কারও অজানা নয়।

তিনি বলেন, ওয়াসার ছোট-বড় অনেক প্রকল্প বাস্তবায়ন ও সেবা পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতির অভূতপূর্ব বিস্তারের অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে এবং তার কোনো কোনো বিষয় তদন্তাধীন রয়েছে। আমরা আশা করেছিলাম, সরকারপ্রধান যেখানে বারংবার দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘শূন্য সহনশীলতার’ কথা বলছেন, জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল বাস্তবায়ন করে সুশাসন প্রতিষ্ঠার কথা বলছেন, তখন এর একটা সুরাহা হবে। আমরা এখন ওয়াসায় শুদ্ধাচার বা সুশাসনের সম্ভাবনার কথা বলতেও লজ্জা পাচ্ছি।

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিতর্কিত নিয়োগের পর প্রশ্নবিদ্ধ প্রক্রিয়ায় টানা পাঁচ মেয়াদে ১১ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করছেন। প্রতিবারই তার নিয়োগ নবায়নের ক্ষেত্রে কোনো না কোনোভাবে আইন ও নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেছে। এমনকি প্রথমবার নিয়োগের সময়ই অনিয়মের অভিযোগে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে পরবর্তী নিয়োগে সতর্কতা অবলম্বনের জন্য দালিলিক নির্দেশ দেওয়া হয়। এর পরও কখনো বয়সসীমা বাড়িয়ে, আবার কখনোবা বোর্ডের সাম্প্রতিক সভার সুপারিশ পাশ কাটিয়ে পুরনো সভার তামাদি সুপারিশ ব্যবহার করে, এমনকি বোর্ডের মতামত গ্রহণেরই তোয়াক্কা না করে প্রভাবশালী মহলের যোগসাজশে তার পুনর্নিয়োগ নিশ্চিত করা হয়, যা শুধু আইনেরই সুস্পষ্ট ব্যত্যয় নয়, বরং ক্ষমতার অপব্যবহার ও যোগসাজশের সংস্কৃতির নির্লজ্জ প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের দৃষ্টান্ত।

সর্বশেষ খবর