রবিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

নজরদারিতে হেফাজতের ২৫০ নেতা-কর্মী

নায়েবে আমির গ্রেফতার

সাখাওয়াত কাওসার

ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে হেফাজতের নেতা-কর্মীদের ওপর নজরদারির তালিকা। শুরুর দিকের তালিকায় ৩০ জনের নাম উঠলেও হালনাগাদ তালিকায় নাম উঠেছে ১৯৪ জনের। সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে এই তালিকা ধরেই শুরু হয়েছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর জোরালো অভিযান।

এরই মধ্যে ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে তালিকা ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। জেলা পুলিশের সহায়তা নিয়ে ডিবি এই অভিযান চালাবে। পাশাপাশি এলিট ফোর্স র‌্যাবও ঢাকার বাইরের শীর্ষ হেফাজত নেতাদের গ্রেফতারের অভিযান শুরু করেছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেছেন, এই তালিকা ২৫০ এ গিয়ে ঠেকতে পারে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত থাকবে। অন্যদিকে, গতকাল ব্রাহ্মণবাড়িয়া, মুন্সীগঞ্জ এবং বাগেরহাটে ১২ জন হেফাজত কর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, রাজধানী ঢাকাসহ ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রামে তান্ডব চালানোর অভিযোগে প্রথমে হেফাজতের শীর্ষ ৩০ জন নেতার একটি তালিকা করা হয়েছিল। ওই তালিকায় বেশির ভাগই ছিল ঢাকায় অবস্থান করা শীর্ষ হেফাজত নেতাদের নাম। প্রথম তালিকার ১৪ জনকে এরই মধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে নানা গুজব প্রচার এবং নতুন করে দেশের পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করার তৎপরতা চালাতে পারেন এমন আশঙ্কায় তালিকা হালনাগাদ করা হয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি সূত্র জানায়, নতুন করে তৈরি করা এই তালিকায় মোট ১৯৪ জনের নাম রয়েছে। এর মধ্যে অর্ধ শতাধিক নেতা চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলার। এ ছাড়া এর মধ্যে কেবল ব্রাহ্মণবাড়িয়ারই অন্তত এক ডজন নেতার নাম ওই তালিকায় রয়েছে। এর বাইরে কক্সবাজার, ফরিদপুর, নারায়ণগঞ্জ, হবিগঞ্জ, সিলেট, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, কুমিল্লা, নোয়খালী ও মুন্সীগঞ্জের একাধিক হেফাজত নেতার নাম রয়েছে। তবে এ পর্যন্ত মধ্যম থেকে শীর্ষ পর্যায়ের শতাধিক নেতা গ্রেফতার হয়েছেন। এদের অনেকেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতেন। পরিস্থিতি ঘোলাটে করে দেওয়ার জন্য তাদের সক্ষমতা ছিল। তালিকায় থাকা হেফাজতের শীর্ষ নেতাদের ধরতে র‌্যাব এবং গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক দল অভিযান শুরু করেছে। ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে প্রয়োজনীয় সবকিছুই করা হবে। ডিএমপি-তে দায়ের হওয়া তান্ডবের মামলার অনেকে আসামি ঢাকার বাইরে। তাদের গ্রেফতারে জেলা পুলিশের কাছে আমরা রিকুইজিশন পাঠিয়েছি। তারা চাইলে ডিএমপির টিম অভিযানে তাদের সঙ্গে যোগ দেবে। এর বাইরেও আমাদের গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রয়েছে।

গোয়েন্দা সূত্র বলছে, হালনাগাদ তালিকার বেশির ভাগই কোনো না কোনো মামলার আসামি। হেফাজতের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির নেপথ্যে তাদের উসকানি রয়েছে। তালিকায় থাকা একটি অংশ মামলার আসামি না হলেও তাদের নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে। তারা কোথায় কোথায় যাচ্ছেন এবং কার সঙ্গে বৈঠক করছেন সেসব বিষয়ে খবর নেওয়া হচ্ছে। গত বছরের শেষের দিকে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপন নিয়ে বিরোধিতা থেকে শুরু করে স¤প্রতি মোদি বিরোধী আন্দোলনে তারা সক্রিয় ছিলেন। তালিকার প্রথমেই হেফাজতের বর্তমান আমির আল্লামা জোনায়েদ বাবুনগরী এবং মহাসচিব মাওলানা নুরুল ইসলাম জিহাদির নাম রয়েছে। তবে তারা অত্যন্ত বয়োজ্যেষ্ঠ হওয়ায় তাদের ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

এলিট ফোর্স র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক লে. কর্নেল খায়রুল ইসলাম বলেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে প্রয়োজনীয় সবকিছুই করা হবে। এ জন্য র‌্যাবের প্রতিটি সদস্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। এক অনুসন্ধানে জানা গেছে, সম্প্রতি সরকারের সঙ্গে কয়েক দফা সমঝোতার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হওয়ায় দারুণ বিপাকে পড়েছেন সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। গ্রেফতার আতঙ্কে রয়েছেন হাজার হাজার নেতা-কর্মী। বাধ্য হয়েই অনেকেই পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। বন্ধ রেখেছেন তাদের মোবাইল ফোন। নামে প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক হেফাজত নেতা বলছেন, সরকার এত কঠোর অবস্থানে চলে যাবে তারা তা কল্পনাই করতে পারেননি। এখন দলের শীর্ষ কমান্ড পুরোটাই ভেঙে পড়েছে। সবাই নিজেরা গ্রেফতার এড়ানোর চেষ্টা করছে। হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় মহাসচিব আল্লাম নুরুল ইসলাম জিহাদি বলেন, ‘লকডাউনের কারণে আমরা সবার সঙ্গে সশরীরে দেখা করতে পারছি না। আগামী রবিবার যাত্রাবাড়ী মাদরাসায় আমাদের হাইয়্যাতুল ওলিয়া’-এর বৈঠক আছে। ওই বৈঠকে দেশের কয়েকজন শীর্ষ আলেম উপস্থিত থাকবেন। সেখানে পরবর্তী করণীয় হিসেবে সিদ্ধান্ত আসবে ইনশা আল্লাহ। সিদ্ধান্ত সরকারকে জানানো হবে। আমরা বিশ্বাস করি শিগগিরই সুষ্ঠু সমাধানা আসবে।’

হেফাজত নেতা আবদুল কাদের গ্রেফতার : হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির অধ্যাপক আহমদ আবদুল কাদেরকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর আগারগাঁও থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয় বলে জানিয়েছেন ডিবির তেজগাঁও বিভাগের ডিসি ওয়াহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ২০১৩ সালে শাপলা চত্বরে অগ্নিসংযোগ-ভাঙচুরের ঘটনার মামলা ও সম্প্রতি মোদিবিরোধী সহিংসতার মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। প্রসঙ্গত, আবুদল কাদের ২০ দলীয় জোটের শরিক খেলাফত মজলিসের মহাসচিব।

সর্বশেষ খবর