মহামারী করোনাভাইরাসে নাকাল বিশ্ব। বিগত ১০০ বছরের মধ্যে বিশ্ব এমন পরিস্থিতি দেখেনি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রতিবেশী ভারতের অবস্থা লন্ডভন্ড। করোনা ভ্যাকসিন সংকটের পাশাপাশি অর্থনীতিরও অবস্থা নাজুক। সেখানে বাংলাদেশে এখনো সবকিছু নিয়ন্ত্রণের মধ্যে। ভ্যাকসিন সংকট নিরসনের উদ্যোগ, অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষ নেতৃত্বে জীবন-জীবিকার চাকা সচল রেখে চলেছেন। সবার আগে ‘মানুষের জীবন’ সেজন্য যা যা পদক্ষেপ দরকার তা-ই নিচ্ছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, ঘনবসতিপূর্ণ ১৬ কোটি জনসংখ্যার বাংলাদেশে করোনাভাইরাস মোকাবিলা করা অন্যান্য দেশের চেয়ে ভিন্নতর। অর্থনৈতিকভাবে অসচ্ছল মানুষের কাছে একদিকে যেমন ত্রাণ পৌঁছে দিতে হচ্ছে, অন্যদিকে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে হচ্ছে। পাশাপাশি পণ্য পরিবহন ও সরবরাহ শৃঙ্খল রাখতে হচ্ছে স্বাভাবিক। আবার শিল্পোদ্যোক্তা, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, গার্মেন্ট কর্মী, পরিবহন শ্রমিক, দিনমজুর, কৃষিশ্রমিক, রিকশাচালকসহ সবাই যেন তাদের ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারে সেজন্য সরকারকে খাতভিত্তিক প্রণোদনা প্যাকেজ এবং আর্থিক সহায়তা দিতে হচ্ছে। এখানেই শেষ নয়, পেশাজীবীদেরও দেওয়া হয় আর্থিক প্রণোদনা। যার ফলে জীবন ও জীবিকা সচল থাকায় করোনার নানা সংকটেও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা সম্ভব হয়েছে। আক্রান্তদের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার পাশাপাশি ত্রাণ বিতরণ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা এবং স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী মানুষের সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাকে নিশ্চিত করতে হচ্ছে। এজন্য দেশের প্রতিটি ওয়ার্ড থেকে শুরু করে রাজধানী পর্যন্ত বহুমাত্রিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে সরকার। এ বিশাল কর্মযজ্ঞের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একজন দক্ষ রাষ্ট্রনায়কের মতো বঙ্গবন্ধুকন্যা দৃঢ় মনোবল নিয়ে প্রতিনিয়ত সার্বিক কার্যক্রমও সমন্বয় করে চলেছেন। সূত্রমতে, ভারত করোনা টিকা রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় ভ্যাকসিন নিয়ে বাংলাদেশে সংকট তৈরি হয়েছিল। দেশের মানুষকে সুরক্ষিত রাখতে নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে ও অধিদফতরে দিয়েছেন প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা। ফলে ভ্যাকসিন সংকট কেটে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে রাশিয়ার তৈরি করোনাভাইরাস টিকা ‘স্পুটনিক-ভি’ আমদানি ও জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আগামী মাসেই রাশিয়া থেকে আসছে ৪০ লাখ ডোজ টিকা। এদিকে রাশিয়ার টিকা কেনার পাশাপাশি তাদের প্রযুক্তি এনে দেশে সে টিকা উৎপাদনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে চীন উপহার হিসেবে দেবে ৬ লাখ ডোজ টিকা। কোভ্যাক্স থেকে আসবে ফাইজারের ১ লাখ ডোজ টিকা। এ ছাড়া ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে চুক্তির বাকি টিকার চালান থেকে ২০ লাখ ডোজ আনার চেষ্টা চলছে। সংকট সমাধানে এক উৎসে নির্ভর না থেকে বিকল্প ব্যবস্থা করছে সরকার। গতকাল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন নিয়ে কারও সঙ্গে বিশেষ কোনো সম্পর্কের দরকার নেই, জনগণকে বাঁচাতে যেখান থেকেই পারে ভ্যাকসিন সংগ্রহ করবে সরকার।’
গত বছর কয়েক ধাপে শিল্পোদ্যোক্তা, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, গার্মেন্ট কর্মী, পরিবহনশ্রমিক, দিনমজুর, কৃষিশ্রমিক, রিকশাচালকসহ বিভিন্ন পেশাজীবীর জন্য খাতভিত্তিক আর্থিক প্রণোদনা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর্থিক প্রণোদনার ফলে সব সেক্টর ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছিল। এবার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ার পর ক্ষতিগ্রস্ত সাড়ে ১০ লাখ দুস্থ পরিবারকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আর্থিক অনুদান পৌঁছে দেওয়া হবে। জীবিকার উপায় হারানো দুস্থ পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়াতে প্রধানমন্ত্রীর অনন্য উদ্যোগে গত বছরের মতো এবারও ঈদের সময় প্রতিটি পরিবারের জন্য ২ হাজার ৫০০ টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ২ হাজার ৫০০ টাকা করে ৩৫ লাখ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের কাছে আর্থিক সহায়তা বিতরণ কার্যক্রম পরিচলনা করা হচ্ছে। অন্যদিকে ১ লাখ ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক পরিবারে ৫ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে বেকার ও ক্ষতিগ্রস্ত গণমাধ্যমকর্মীদের সহায়তা দিতে ১০ কোটি টাকা কল্যাণ ট্রাস্টে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। করোনা মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশেষ কিছু কর্মপন্থা ও কৌশল অবলম্বন করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে- কর্মসৃজনকে প্রাধান্য দেওয়া ও বিলাসী ব্যয় নিরুৎসাহকরণ এবং কম গুরুত্বপূর্ণ ব্যয় পিছিয়ে দেওয়া। আর্থিক সহায়তার প্যাকেজ প্রণয়ন। বাজেট বরাদ্দ এবং ব্যাংকব্যবস্থার মাধ্যমে বিনা ও স্বল্প সুদে কতিপয় ঋণ সুবিধা প্রবর্তন করা যাতে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড পুনরুজ্জীবিত হয়, কর্মসংস্থান ঠিক থাকে এবং উদ্যোক্তাদের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। হতদরিদ্র, কর্মহীন হয়ে পড়া নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠী এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক কর্মকান্ডে নিয়োজিত জনগণকে সুরক্ষা দিতে সরকারের সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা বৃদ্ধি করা। অর্থনৈতিক কর্মকাবন্ড দ্রুত পুনরুজ্জীবিত করা, একই সঙ্গে মূল্যস্ফীতি যাতে না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা। ফলত নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও বাংলাদেশে সঠিকভাবে করোনা সংকট মোকাবিলা সম্ভব হচ্ছে।করোনাভাইরাস মোকাবিলায় ব্রিটেনের সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থার ভঙ্গুর চিত্র নিয়ে সেখানকার গণমাধ্যম নিয়মিত সমালোচনা করছে। প্রবল প্রতাপশালী যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিলসহ অনেক দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান এ ভাইরাস মোকাবিলায় সমালোচিত হচ্ছেন। প্রতিবেশী ভারতও করোনায় মৃত্যুর মিছিল ঠেকাতে পারছে না। ঠিক সেই সময় জনবহুল বাংলাদেশের সরকারপ্রধান হিসেবে এককভাবে করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রশংসিত হচ্ছেন শেখ হাসিনা। করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যোগ্য নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়টি অন্যান্য আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও ইতিবাচকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এসব গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা নিয়মিত দাফতরিক কাজের পাশাপাশি নিজেই দুর্গত মানুষকে খাদ্য ও আর্থিক সহায়তা প্রদানের বিষয়টি সরাসরি মনিটর করছেন। ৬৪ জেলার ত্রাণ কার্যক্রমের সমন্বয় সাধনের জন্য দায়িত্ব দিয়েছেন ৬৪ জন সচিবকে। সভা করছেন, ভিডিও কনফারেন্সে নিচ্ছেন মাঠ পর্যায়ের খোঁজ, দিচ্ছেন নানা নির্দেশনা। থেমে নেই তাঁর কোনো কাজ। গণভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সূত্র জানিয়েছেন, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুরু থেকেই সুনির্দিষ্ট কৌশল গ্রহণ করেন এবং সে অনুযায়ী দিকনির্দেশনা দিতে থাকেন। তিনি কারও জন্য অপেক্ষা না করে নিজেই সবকিছুর নির্দেশনা দিয়ে আসছেন। যখন যেখানে যে প্রয়োজন দেখা দেয় তা মেটাতে সরাসরি হস্তক্ষেপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।