মঙ্গলবার, ১১ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

বাঁচা-মরার লড়াইয়ে শিল্প খাত

ভ্যাট-করের চাপ ও ব্যাংকগুলোর অসহযোগিতা, বিনিয়োগে অনিশ্চয়তা, হুমকিতে কর্মসংস্থান, দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রে দিশাহারা শিল্পমালিকরা

রুহুল আমিন রাসেল

বাঁচা-মরার লড়াইয়ে দেশের শিল্প খাত। মহামারী করোনাভাইরাসের প্রভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্প খাতে চরম অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। শিল্পোদ্যোক্তারা বলেছেন- একদিকে ভ্যাট-কর আদায়ের অনৈতিক চাপ। অন্যদিকে ব্যাংকগুলো অসহযোগিতা করছে। এতে বিনিয়োগে অনিশ্চয়তার পাশাপাশি হুমকিতে পড়েছে কর্মসংস্থান। এরসঙ্গে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রে শিল্প মালিকরা দিশাহারা বলে সূত্র জানায়। 

দেশের শিল্প খাতের সংকট উত্তরণে সম্প্রতি বাজেট পরামর্শক কমিটির ৪১তম সভায় এনবিআরকে দেওয়া বাজেট প্রস্তাবে এফবিসিসিআই বলেছে- করোনার ধাক্কা যদি আরেক প্রান্তিক অব্যাহত থাকে, তাহলে এ দেশের ছোট-বড় শিল্প মালিকরা বিপাকে পড়তে পারেন। সংগঠনটি করোনার ধাক্কা সামাল দিতে সরকারকে দেওয়া বাজেট প্রস্তাবে বলেছে- বড় শিল্প মালিকদের ছাড় করা প্রণোদনার টাকার পাঁচ শতাংশ এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত অনুদান হিসেবে রূপান্তর করা উচিত। এ ছাড়া কৃষি খাতে যেসব প্রতিষ্ঠান প্রণোদনার অর্থ পেয়েছে, তাদেরও ৫০ শতাংশ অনুদান হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার দাবি করেছে এফবিসিসিআই।

ওই প্রস্তাবে আরও বলা হয়- ব্যাংকের খরচ কমানো উচিত। আগামী দুই বছরের মধ্যে আমদানি পর্যায়ে অগ্রিম আয়কর ও আগাম ভ্যাট প্রত্যাহার করা হোক। এক্ষেত্রে যুক্তি হলো- করোনার সময় ব্যবসা-বাণিজ্য কমে গেছে। আবার সবকিছু বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এই সময় অগ্রিম আয়কর ও আগাম ভ্যাট প্রত্যাহার করা হলে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে নগদ টাকার প্রবাহ বাড়বে। এ ছাড়া স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে করপোরেট কর কমানোর সুপারিশ করেছে এফবিসিসিআই। এ প্রসঙ্গে দেশের প্রাচীন বাণিজ্য সংগঠন মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ-এমসিসিআইর সাবেক সভাপতি ও অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর সম্প্রতি প্রশ্ন উত্থাপন করে বলেছিলেন- ব্যবসায় লোকসান হলে বাড়তি কর কেন দেব। দেশের একজন ব্যবসায়ীও উৎসে কর দিয়ে ফেরত পাননি। তবুও আমার বিশ্বাস ৯০% লোক কর দিয়ে শান্তিতে থাকতে চান। এ জন্য কর প্রশাসনে সংস্কার দরকার। আসছে বাজেটে করের বোঝা কমবে বলেও আশা করছি। তিনি উৎসে কর নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন- আমদানি পর্যায়ে এবং সরবরাহ পর্যায়ে উভয়ক্ষেত্রে উৎস কর কর্তনের ফলে ‘ম্যানুফ্যাকচারিং প্রতিষ্ঠান’সমূহ মারাত্মকভাবে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে, যা অনৈতিক। তিনি করপোরেট কর প্রসঙ্গে বলেছেন- এই কর হার কমিয়ে ক্রমান্বয়ে ২৫ শতাংশে নির্ধারণ করা উচিত। এ লক্ষ্যে একটি রোডম্যাপ তৈরি করে তা সবার জন্য উন্মুক্ত রাখা উচিত। অর্থ আইন ২০২০-এর মাধ্যমে এই হার কমিয়ে ৩৫ শতাংশ থেকে ৩২ দশমিক পাঁচ শতাংশ করা হয়েছে। কিন্তু এই হার এখনো অনেক বেশি। যা বিনিয়োগকারীরা নতুন বিনিয়োগ করতে অনুৎসাহিত হচ্ছে। দেশে বর্তমানে বেসরকারি বিনিয়োগ জিডিপি রেশিও হলো ২৩ শতাংশ। সরকার এই অনুপাত বাড়িয়ে ২৫ দশমিক ১৫ শতাংশে উন্নীতকরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। করপোরেট ট্যাক্স হার কমানো না হলে, সরকারের নির্ধারিত বেসরকারি বিনিয়োগ জিডিপি অনুপাতের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কষ্টকর হয়ে যাবে। শিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ-বিসিআই সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন- আসছে বাজেটে বিনিয়োগের জন্য ১০ বছর মেয়াদি করমুক্ত সুবিধা চাই। বাজেটে করপোরেট কর হার কমপক্ষে ১০ শতাংশ কমানো উচিত। করোনাভাইরাস মহামারীর অর্থনৈতিক প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় বিনিয়োগ ও শিল্পায়নবান্ধব স্থায়ী কর ও শুল্ক ব্যবস্থা প্রবর্তন করা অপরিহার্য। সম্পূরক শুল্ক হার হ্রাস করে বিদ্যমান শিল্প প্রতিরক্ষণ হার কমানো সমীচীন হবে না বলে মত দেন বিজিএমইএ’র সাবেক এই সভাপতি। এদিকে আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে মহামারী করোনাভাইরাসের ধাক্কা মোকাবিলায় স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় বাড়ানো এবং শিক্ষা ও স্থানীয় শিল্পে নজর দিতে সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি-এমসিসিআই সভাপতি নিহাদ কবির। দেশের প্রাচীন এই বাণিজ্য সংগঠনের সভাপতি সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেছেন- বাজেটে শুধু তৈরি পোশাকশিল্প বা ট্রেডিশনাল রপ্তানি খাত নয়, অন্যান্য পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানি, স্থানীয় বাজার ও সেবা খাতে সরকারকে নজর দিতে হবে।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেছেন- আসছে বাজেটে যৌক্তিকভাবে করপোরেট কর কমাতে হবে। কারণ- দেশে কী এমন মধু আছে যে, ৩২ শতাংশ করপোরেট কর দেব। আমাদের মনে রাখতে হবে- চীন, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ড ও মিয়ানমারে করপোরেট কর ২০ শতাংশ। তাই কর না কমালে ইজ অব ডুয়িং বিজনেসে আমাদের উন্নতি হবে না। আমরা এখনো বিট্রিস চিন্তাধারা ও আইন থেকে বের হতে পারিনি। অথচ বড় বড় কথা বলছি।

সর্বশেষ খবর