সোমবার, ২৮ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

সারা দেশে সীমিত লকডাউন শুরু

পণ্যবাহী গাড়ি ও রিকশা ছাড়া সারা দেশে সব গণপরিবহন বন্ধ, শপিং মল মার্কেট পর্যটন কেন্দ্র রিসোর্ট কমিউনিটি সেন্টারসহ সব ধরনের বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ, সরকারি-বেসরকারি অফিস খোলা থাকবে সীমিত জনবল নিয়ে

নিজস্ব প্রতিবেদক

সারা দেশে সীমিত লকডাউন শুরু

করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আজ সকাল ৬টা থেকে সারা দেশে গণপরিবহন বন্ধ থাকবে। বন্ধ থাকবে সব ধরনের শপিং মল, মার্কেট, পর্যটন কেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদন কেন্দ্র। তবে পণ্যবাহী যানবাহন এবং রিকশা চলাচল করবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়মিত টহলের মাধ্যমে গণপরিবহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করবে। আগামী বৃহস্পতিবার ১ জুলাই সকাল ৬টা পর্যন্ত এই বিধিনিষেধ বহাল থাকবে। গতকাল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে দেওয়া এক প্রজ্ঞাপনে এসব বিধিনিষেধের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কঠোর লকডাউন শুরুর আগে আগামী তিন দিনের বিধিনিষেধে কী কী খোলা থাকবে, কী কী বন্ধ থাকবে প্রজ্ঞাপনে তা জানিয়েছে সরকার। এই বিধিনিষেধের মেয়াদ শেষে ১ জুলাই থেকে কঠোর লকডাউনের ঘোষণা রয়েছে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় আগের সব বিধিনিষেধ ও কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় এসব বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, খাবারের দোকান, হোটেল- রেস্তোরাঁ, সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খাবার বিক্রি করতে পারবে। সরকারি-বেসরকারি অফিস বা প্রতিষ্ঠান শুধু প্রয়োজনীয়সংখ্যক কর্মীর উপস্থিতি নিশ্চিত করতে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় কর্মীদের আনা-নেওয়া করতে পারবে। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

ফেরি পারাপারে মানুষের ভিড় : বৃহস্পতিবার থেকে সারা দেশে কঠোর লকডাউন শুরু হওয়ার খবরে ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ। অন্যদিকে জীবিকার জন্য এখনো ঢাকামুখীও হচ্ছেন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ। এ কারণে গতকাল সকাল থেকে মাদারীপুরের বাংলাবাজার ও মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটে দেখা গেছে মানুষের ভিড়। তবে ঢাকা থেকে আসা যাত্রীদের চাপই বেশি এই নৌপথে। দেখা যায়, শিমুলিয়া থেকে ছেড়ে আসা প্রতিটি ফেরিতে মানুষের ভিড়। পণ্যবাহী ট্রাক ও ব্যক্তিগত যানবাহনের তুলনায় যাত্রীর সংখ্যাই বেশি ফেরিতে। ঢাকা থেকে আসা এসব যাত্রী ভিড় করছেন ঘাটের টার্মিনাল ও সংযোগ সড়কে গিয়ে। তাদের মধ্যে কেউ মাইক্রোবাস, কেউবা সিএনজি মাহিন্দ্র বা ইজিবাইক আবার কেউ কেউ মোটরসাইকেলে করে যাচ্ছেন দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায়। যানবাহনে যাত্রীদের গুনতেও হচ্ছে দ্বিগুণের বেশি ভাড়া। এসব যানবাহনে যাত্রীদের গাদাগাদি করে তোলা হচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি কোনো বালাই নেই চালক কিংবা যাত্রীদের মধ্যে। এদিকে যাত্রীর চাপ বাড়তে থাকায় ফেরিতে চাহিদার তুলনায় যানবাহন লোড নিতে পারছে না। ফলে উভয় ঘাটে পণ্যবাহী ট্রাক ও ছোট গাড়ির সংখ্যাও ধীরে ধীরে বাড়ছে।

শিমুলিয়া ঘাটে মানুষের ঢল : মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের শিমুলিয়া ফেরিঘাটে দক্ষিণ বঙ্গের মানুষের ঢল নেমেছে। লকডাউনের পর শাটডাউনের শঙ্কায় এবং ঈদকে সামনে রেখে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুটে দক্ষিণবঙ্গগামী যাত্রীদের প্রচ- চাপ দেখা গেছে। গতকাল সকাল থেকে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে বিচ্ছিন্নভাবে লোকজন ছুটছে দক্ষিণবঙ্গের উদ্দেশে। সড়কে যানবাহনের সংকট থাকায় ভেঙে ভেঙে বিভিন্ন ছোট যানবাহন ও মোটরসাইকেলে তারা যাচ্ছে শিমুলিয়া ঘাটের উদ্দেশে। লৌহজং ও শ্রীনগরের কয়েকটি স্পট থেকে যাত্রীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পদ্মা নদী পার হচ্ছে ট্রলারে করে। বাস বন্ধ থাকায় ভেঙে ভেঙে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া দিয়ে গন্তব্যে ছুটছেন বাড়ি ফেরা মানুষ। এদিকে মুন্সীগঞ্জ জেলায় চলছে লকডাউনের ষষ্ঠ দিন। লকডাউন বাস্তবায়নে কঠোর অবস্থানে রয়েছে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন। জেলা প্রশাসন এবং ৬টি উপজেলার প্রতিটি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চলছে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান। গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বসানো হয়েছে পুলিশি চৌকি। প্রতিটি গাড়ি চেক পোস্টের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।

গ্রামের বাড়িতে ফিরতে মানুষের ঢল : যেভাবেই হোক বাড়িতে যেতে হবে। এ যেন ঈদের ছুটি পড়েছে। দূরপাল্লার বাস বন্ধ। ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কে সাইনবোর্ড, শিমরাইল চিটাগাং রোডে নেমেছে যেন মানুষের ঢল। পায়ে হেঁটে কোলে শিশু বাচ্চা হাতে ব্যাগ নিয়ে ছুটছে মানুষ গ্রামের বাড়িতে। কখনো অটোরিকশায় কখনো সিএনজি আবার কখনো বাসে। যেখানে যখন যা পাচ্ছে তা দিয়ে ভেঙে ভেঙে বাড়ি ফিরছে মানুষ।

গাজীপুর : গাজীপুরে লকডাউন চললেও মানুষের চলাচল থেমে নেই। সড়ক পথে এ জেলার বাসিন্দারা ঢাকায় যাচ্ছেন, আবার ঢাকা থেকেও লোকজন গাজীপুরে ঢুকছেন। ছোট ছোট যানে গাদাগাদি করে চলাচল করছেন। সড়কপথে নানাভাবে মানুষের চলাফেরা ঠেকানোর চেষ্টা করা হলেও মানছে না কেউ। শুধু বড় গাড়িই নয়, বেবিট্যাক্সি, ইজিবাইক, রিকশার মতো ছোট গাড়ি দিয়েও গাজীপুরের সীমানা পার হচ্ছে ঘরমুখো মানুষ। প্রয়োজনে, অপ্রয়োজনে ঘর থেকে বের হচ্ছে মানুষ।

মানিকগঞ্জ : কঠোর লকডাউন ঘোষণার পর শহর ছেড়ে বাড়ি ফিরছেন লোকজন। যাত্রীবাহী পরিবহন বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়ছেন যাত্রীরা। ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক ও হেমায়েতপুর সিংগাইর- মানিকগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কে কোনো পরিবহন চলাচল করছে না। তবে পণ্যবাহী ট্রাকসহ প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল, ভ্যান, রিকশা হ্যালোবাইক ছোট যানবাহন চলাচল করছে।

রাজবাড়ী : কঠোর লকডাউনের সময়সূচি পিছিয়ে বৃহস্পতিবার হওয়ার কারণে স্বাভাবিক রয়েছে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট। দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকার কারণে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চরের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা যাত্রী ও যানবাহন কোনো ভোগান্তি ছাড়াই নৌরুট পাড়ি দিচ্ছে।

খুলনা : খুলনায় করোনা শনাক্ত ও মৃত্যু হার বাড়লেও লকডাউন উপেক্ষা করে জীবিকার প্রয়োজনে পথেঘাটে নামছে সাধারণ মানুষ। গতকাল নগরীর বড়বাজার, ডাকবাংলা ক্লেরোডসহ বাজারকেন্দ্রিক এলাকায় ছিল উপচে পড়া ভিড়। ইজিবাইক, রিকশা ভ্যানসহ স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল করেছে স্বাভাবিকভাবে। কয়েকটি প্রধান সড়কে বাঁশ দিয়ে প্রতিবন্ধকতা দেওয়া হলেও সেখানে পুলিশের উপস্থিতি ছিল না।

বরিশাল : লকডাউনের খবরে বরিশালের বাজারঘাটে হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন মানুষ। এ কারণে প্রচুর ভিড় দেখা গেছে মুদি বাজার, কাঁচা বাজার এবং মাছের বাজারে। লকডাউন দীর্ঘায়িত অতিরিক্ত কেনাকাটা করছেন তারা। হঠাৎ চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বেড়েছে বিভিন্ন পণ্যের দাম।

গোপালগঞ্জ : কঠোর লকডাউনের ষষ্ঠ দিনে এসে কোনো বিধিনিষেধ মানছেন না সাধারণ মানুষ। তবে লকডাউন কার্যকর করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন।

 

বাগেরহাট : করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় বাগেরহাটে চলছে লকডাউনের চতুর্থ দিন। শুরু হওয়া এই লকডাউন ৩০ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত চলবে। লকডাউনের ফলে বাগেরহাটে দূরপাল্লার পরিবহনসহ সব গণপরিবহন বন্ধ রয়েছে। এক উপজেলা থেকে অন্য উপজেলায় লোকজনের চলাচল বন্ধ আছে।

ঠাকুরগাঁও : করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ঠাকুরগাঁও জেলায় সাত দিনের কঠোর লকডাউন দিয়েছে জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটি। কিন্তু লকডাউনে বেশিরভাগ মানুষই মাস্ক পরছেন না। দোকানপাট, কাঁচাবাজারে স্বাস্থ্যবিধি মানছে না কেউই। কাঁচাবাজারে মানুষের ভিড় চোখে পড়ার মতো। শহরে ঢিলেঢালাভাবেই পার হচ্ছে সাত দিনের লকডাউনের চতুর্থ দিন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর