বসুন্ধরা কিংসের আর্জেন্টাইন কোচ মারিও গোমেজ। গতকাল ক্লাবটির সভাপতি ইমরুল হাসানের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেন তিনি। নতুন মৌসুমে বসুন্ধরা কিংসের দায়িত্ব কাঁধে নিয়েই জানালেন চ্যাম্পিয়ন হতে চান। সাক্ষাৎকারে তিনি খোলামেলা আলাপ করলেন খেলোয়াড় এবং কোচিং জীবনের নানা দিক নিয়ে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রাশেদুর রহমান
প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের ক্লাব বসুন্ধরা কিংসের দায়িত্ব নিয়েছেন। এ দায়িত্ব নিয়ে আপনি কতটা আনন্দিত।
আমি এখানে এসে আনন্দিত। বসুন্ধরা কিংসে কাজ করতে আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায় আছি। আমি জানি, এ ক্লাবটি বেশ শক্তিশালী। সব সময়ই চ্যাম্পিয়ন হয়। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি এএফসি লেভেলে লড়াই করাও বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
এশিয়ার অনেক ক্লাবেই কাজ করেছেন। এ অভিজ্ঞতা এখানে কতটা কাজে লাগবে বলে মনে করেন?
এশিয়ায় আমি প্রায় নয় বছর কাজ করেছি। এ অভিজ্ঞতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এশিয়া, ইউরোপ এবং দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন ক্লাবে আমি দায়িত্ব পালন করেছি। চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। বসুন্ধরা কিংসেও চ্যাম্পিয়ন কোচ হতে চাই। এ ক্লাবের জন্য এএফসি প্রতিযোগিতা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এটা একটি দারুণ টুর্নামেন্ট। তবে এ প্রতিযোগিতায় লড়াই করা সহজ নয়।
এএফসি কাপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। কিংসে এ অভিজ্ঞতা কীভাবে কাজে লাগাবেন?
এএফসি কাপ ২০১৫ সালে জয় করেছি যোহর দারুল তাজিমের হয়ে। এ ট্রফি জয় করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তবে প্রথমে আমাদের লিগ জয় করতে হবে। এরপর আমরা হয়তো এএফসি কাপও জয় করব। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো অনুশীলনের মাধ্যমে নিজেদের প্রস্তুত করে তোলা। একজন খেলোয়াড়ের জন্য ফিজিক্যালি ফিট থাকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং আমরা যখন লিগের জন্য অনুশীলন করব। সেই সময়টাতেই এএফসি প্রতিযোগিতার জন্যও নিজেদের প্রস্তুত করে তুলব।
৭০ ও ৮০-এর দশকে আপনি ফুটবল খেলেছেন। সেই সময় বিলার্দো এবং মেনত্তির মতো কোচেরা ছিলেন। তাদের কাছ থেকে কী অনুপ্রেরণা পেয়েছেন কোচ হওয়ার জন্য?
আমাকে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রাণিত করেছেন কার্লোস তিমোতিও গ্রিগল। তিনি অনেকটা বিলার্দোর মতোই ফুটবল দর্শনে বিশ্বাসী ছিলেন। ওই সময় তিনজন কোচ ছিলেন অসাধারণ। তিমোতিও, বিলার্দো এবং মেনোত্তি। বিলার্দো আর তিমোতিওর মধ্যে আমি তেমন কোনো পার্থক্য দেখি না। মেনোত্তি ছিলেন আলাদা। তবে আমার শিক্ষক ছিলেন তিমোতিও। আমার কাছে পিতৃতুল্য।
দিয়েগো ম্যারাডোনার সঙ্গে আপনার কোনো অভিজ্ঞতার কথা মনে আছে?
ম্যারাডোনার সঙ্গে আমার দারুণ কিছু স্মৃতি আছে। ১৯৮১ সালের কথা। সে সময় আমি খেলতাম ফেরো ক্যারিলের হয়ে। ম্যারাডোনা খেলতেন বোকা জুনিয়র্সে। আমি তার প্রতিপক্ষ হিসেবে বেশ কয়েকটা ম্যাচ খেলেছি। তিনি কেবল খেলোয়াড় হিসেবেই নন, ব্যক্তি হিসেবেও ছিলেন অসাধারণ। তিনি আর্জেন্টিনা ছেড়ে ইউরোপে চলে যান। এরপর ১৫ দিনের জন্য ফেরোতে আমাদের সঙ্গে অনুশীলন করতে এসেছিলেন। এটা ছিল দারুণ এক অভিজ্ঞতা। তিনি ফুটবল খেলতেন জুতার ফিতা খুলে। আমরা বলতাম, এই ছেলেটা পাগল! তবে তিনি ছিলেন এক অসাধারণ ভালো মানুষ। সাধারণ মানুষের মতোই সবার সঙ্গে খোলামেলা কথা বলতেন তিনি। আমরা সবাই তাকে খুবই ভালোবাসতাম।
বসুন্ধরা কিংসের ফ্যাসিলিটিজ নিয়ে আপনি কতটা সন্তুষ্ট?
আমি এখনো সবকিছু দেখিনি। তবে যতটুকু শুনেছি, আমি খুবই আনন্দিত। বিশেষ করে মাঠের ব্যাপারে। ফুটবলের জন্য মাঠই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
ভ্যালেন্সিয়া এবং ইন্টার মিলানের মতো ক্লাবে সহকারী কোচ হিসেবে কাজ করেছেন। এ অভিজ্ঞতা কীভাবে কাজে লাগাতে চান?
অবশ্যই, এ ধরনের ক্লাবে কাজ করার অভিজ্ঞতা আমাকে অনেক বেশি পরিণত করেছে। এখানে অনেক তারকা থাকে। ধরুন ২০ তারকা ফুটবলার। কিন্তু আপনাকে দল সাজাতে হয় ১১ জন নিয়ে। তবে দলের সবাই সমান গুরুত্বপূর্ণ। তাদের অনুশীলন করানো এবং দলটাকে পরিচালনা করা এক চ্যালেঞ্জিং দায়িত্ব।
বসুন্ধরা কিংসে আপনার লক্ষ্য কী? আপনি জানেন, এ ক্লাব টানা পাঁচবার লিগ জয় করেছে।
আমি এ ক্লাবের ফুটবলারদের সম্পর্কে জানি ভিডিওর মাধ্যমে। আমি তাদের জানতে চাই। এটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তাদের জানতে পারলে আমার লক্ষ্য নির্ধারণ সহজ হবে। আমাদের সামনে অনেক ম্যাচ। লিগ, ফেডারেশন কাপ, চ্যালেঞ্জ লিগসহ আরও অনেক প্রতিযোগিতা আছে। আমাদের সবার-ই কাজ করতে হবে একই উদ্দেশ্য নিয়ে।
বাংলাদেশে অনেক আর্জেন্টাইন সমর্থক রয়েছে। তাদের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন।
আমি জানি বাংলাদেশের আর্জেন্টাইন সমর্থকদের সম্পর্কে। আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ জয় করার পর এখানকার মানুষ অনেক উৎসব করেছিল। আর্জেন্টিনার জয়ে আনন্দিত হয়েছিল।