দেশব্যাপী চলমান মব সংস্কৃতির অবসান ঘটানোর ওপর জোর দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেছেন, নতুনভাবে আবির্ভূত এ মব সংস্কৃতির অবসান ঘটাতেই হবে। কারণ এটি আইনবহির্ভূত একটি হিংসাত্মক আচরণ, যা জনমনে ভীতি ও আতঙ্ক তৈরি করে। বেআইনি এ মব সংস্কৃতি যে কোনো উপায়ে বন্ধ করতে হবে। বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মী, শুভানুধ্যায়ী ও দেশবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে রবিবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে পোস্টে তিনি এ আহ্বান জানান। তারেক রহমান বলেন, ‘দেড় যুগব্যাপী গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে শহীদদের আত্মদান সার্থক হবে, যদি আমরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন, সুশাসন ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে পারি। এটিই হোক বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শুভলগ্নে আমাদের অঙ্গীকার। দেশজুড়ে যেন আর কখনোই গুম, গুপ্তহত্যা, বিচারবহির্ভূত হত্যা, নারী ও শিশুদের ওপর পৈশাচিকতা, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দুর্নীতি, টাকা পাচারের মতো ঘৃণ্য বিভীষিকার পুনরাবৃত্তি না হয়। জনগণের অধিকার আদায়ে তাদের দুঃখকষ্ট লাঘব করাসহ দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও বহুদলীয় গণতন্ত্রের ধারা আবারও পুনঃপ্রতিষ্ঠা করাই এখন বিএনপির মূল লক্ষ্য।’
তিনি বলেন, ‘দেশে এখনো প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়নি। আইনের শাসন, স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশ, সংবাদপত্র ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে পারলেই জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। আর এজন্য জনগণের নির্বাচিত জবাবদিহিমূলক সরকার অতীব জরুরি। জন্মলগ্ন থেকে এ পর্যন্ত দলের যেসব নেতা-কর্মী মৃত্যুবরণ করেছেন ও দেড় দশকের আওয়ামী ফ্যাসিবাদের করাল গ্রাস এবং গত বছর ছাত্র-জনতার রক্তঝরা আন্দোলনে যারা প্রাণ হারিয়েছেন, আমি তাদের প্রতিও জানাচ্ছি গভীর শ্রদ্ধা।’ তারেক রহমান লিখেছেন, জাতীয়তাবাদী আদর্শের সঙ্গে জনগণকে একত্র করার লক্ষ্যে মহান স্বাধীনতার ঘোষক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) প্রতিষ্ঠা করেন। আজকের দিনটি দেশের মানুষের জন্য আনন্দ, উদ্দীপনা ও প্রেরণার। দলটি বাংলাদেশি ভূখণ্ডের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা এবং শক্তিশালী সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা ও বহুদলীয় গণতন্ত্রকে স্থায়ী রূপ দেওয়ার নীতিতে অঙ্গীকারবদ্ধ। তিনি বলেন, স্বাধীনতার অব্যবহিত পরেই ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার জন্য একদলীয় বাকশালী ব্যবস্থা কায়েমের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়। স্বাধীনতাত্তর আওয়ামী দুঃশাসনে বিশৃঙ্খলা, সহিংসতা ও রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড সাধারণ বিষয় হয়ে ওঠে। যার অনিবার্য পরিণতি হয় ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ, আর এই দুর্ভিক্ষে ১০ লাখ মানুষ মারা যায়। তৎকালীন আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী বাকশাল কায়েম করে স্বৈরশাসনকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের মাধ্যমে বিচার বিভাগ ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা খর্ব করে। বিএনপির এই শীর্ষনেতা বলেন, শহীদ জিয়াউর রহমান ক্ষমতাসীন হয়ে পুনরায় বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রকে পুনরুজ্জীবিত করে জনগণের নাগরিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করেন। শহীদ জিয়ার সৃষ্টি বিএনপি বিগত ৪৭ বছরে কয়েকবার সুষ্ঠু নির্বাচনে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন হয়ে দেশ, জনগণের সমৃদ্ধি ও কল্যাণে ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেছে। আমি স্বাধীনতার মহান ঘোষক, সফল রাষ্ট্রনায়ক ও আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার শহীদ জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের প্রতি জানাচ্ছি গভীর শ্রদ্ধা।
তিনি বলেন, নানামুখী সুদূরপ্রসারী চক্রান্তের মধ্যেও দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব সুরক্ষায় চির উন্নত শীর বিএনপি অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। নির্বাসিত গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে নির্দ্বিধায় জীবন উৎসর্গ করেছে অসংখ্য নেতা-কর্মী। ৮০-এর দশকে ৯ বছরের সামরিক স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপির রাজপথে আপসহীন ভূমিকা ইতিহাসের উজ্জ্বল অধ্যায়। তাঁর সেই অগ্রণী ভূমিকার জন্য গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হয়।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার অবদানের কথা উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে শক্তিশালী ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার লক্ষ্যে বিএনপি ১৯৯১ সালে নির্বাচিত হয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পালনকালে সাংবিধানিক সংশোধনীর মাধ্যমে সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রবর্তন করেছে। এতে নেতৃত্ব দিয়েছেন গণতন্ত্রের প্রতীক বেগম খালেদা জিয়া। সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশে বারবার গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করে এর চর্চা ও বিকাশসহ দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় অগ্রণী ভূমিকা পালনের জন্য বিএনপি আজ সমধিক জনপ্রিয় রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে। জাতির সব সংকটময় সময়ে বিএনপি জীবনযুদ্ধে টিকে থাকার কারণেই ঐতিহাসিক সাফল্যগুলো অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
তিনি বলেন, বিএনপির আদর্শিক ভিত্তি উদারনীতি। দলের সামাজিক অঙ্গীকার ও অর্থনৈতিক নীতি উদারপন্থি রাজনীতিতে বিশ্বাসী। বিএনপি যতবারই ক্ষমতায় এসেছে ততবারই সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী প্রসারিত করেছে। দেশের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী ও নারীর ক্ষমতায়নসহ তাদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করার ব্যাপক উদ্যোগ নেওয়া হয়। সে ক্ষেত্রে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, শিল্প বাণিজ্য সেক্টরসহ ব্যাংকঋণ, বৈদেশিক কর্মসংস্থান, রেমিট্যান্সপ্রবাহ ইত্যাদিতে যুগান্তকারী অগ্রগতি লাভ করে। দেশীয় অর্থনীতি শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়াতে শুরু করে।
তিনি আরও বলেন, গণতন্ত্র সমুন্নত ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য বিএনপি সরকারের উদ্যম ও উদ্যোগের ফলে দেশে আর দুর্ভিক্ষ স্পর্শ করেনি। মানুষ আর্থিক দুরবস্থা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হতে থাকে। জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অক্ষুণ্ন রেখে দেশমাতৃকার সেবায় নিজেদের নিবেদন করে বিএনপি আগামী দিনগুলোতেও বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবে।