বুধবার, ৩০ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

সড়কজুড়েই বিকল্প পরিবহন

অফিসগামী যাত্রীদের দুর্ভোগ বাড়তি ভাড়ায় নাভিশ্বাস

নিজস্ব প্রতিবেদক

সড়কজুড়েই বিকল্প পরিবহন

গণপরিবহন বন্ধ থাকায় রিকশা ছিল সাধারণ মানুষের ভরসার বাহন -বাংলাদেশ প্রতিদিন

দেশজুড়ে গণপরিবহন বন্ধের দ্বিতীয় দিন চরম ভোগান্তিতে ছিলেন রাজধানীবাসী। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় পায়ে হেঁটে গন্তব্যে যান অনেকে। কেউ কেউ দ্বিগুণ, তিন গুণ টাকা দিয়ে কর্মস্থলে যান। নতুন নিয়মে শুধু রিকশা চলার কথা থাকলেও প্রাইভেট কার আটকানোর বিষয়ে প্রশাসনের কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি। অনেক প্রাইভেট কারকে চুক্তির বিনিময়ে যাত্রী তুলতে দেখা যায়। বাড়তি ভাড়ার অভিযোগও ছিল যাত্রীদের। করোনায় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে বাড়তি ভাড়ায় নাভিশ্বাস উঠেছে সাধারণ মানুষের। তারা অফিস খোলা রেখে গণপরিবহন বন্ধ করায় তীব্র ক্ষোভ জানিয়েছেন।

রাজধানীর বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তার স্থানে স্থানে অফিসগামী যাত্রী ভিড় করেছেন। কিন্তু কোথাও বাস নেই, মিনিবাস নেই। অটোরিকশাও কম। যে রিকশাগুলো চলছে সেগুলোর ভাড়াও বেশি। অনেকে বেশি ভাড়ায় রাইড শেয়ারিং মোটরসাইকেলে গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন। রাজধানীর বাড্ডা, রামপুরা, মৌচাক, মিরপুর, খিলক্ষেতসহ বিভিন্ন এলাকায় অফিসগামী মানুষের ভোগান্তির এমন চিত্র দেখা গেছে। নাহিদ শারমিন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা। মিরপুর ১০ নম্বর থেকে যাবেন আগারগাঁও। দীর্ঘ এক ঘণ্টা অপেক্ষার পর কোনো পরিবহন না পেয়ে রিকশায় যাত্রা করেন আগারগাঁওয়ের উদ্দেশে। তিনি বলেন, ‘সীমিত পরিসরে “লকডাউন” ঘোষণা করা হয়েছে। অফিস খোলা আছে। অফিসে তো যেতেই হবে। চাকরি বাঁচাতে হবে। চাকরি চলে গেলে পরিবার নিয়ে বিপদে পড়ে যাব। যত কষ্ট পোহাতে হয় আমাদের মতো সাধারণ মানুষের। ৮০ টাকার ভাড়া রিকশাচালক নিচ্ছে ১৩০ টাকা। যে যেভাবে পারছে ভাড়া চাইছে, বাড়তি ভাড়া নিচ্ছে। কে দেখবে এসব অসংগতি আর সমস্যা!’ খিলক্ষেত বাসস্ট্যান্ডে অপেক্ষমাণ একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, ‘অফিস খোলা রাখা হয়েছে। রাস্তায় যানবাহন নেই। আমার অফিস মহাখালী। এখন কীভাবে যাব বুঝতে পারছি না। এভাবে কি সাধারণ মানুষকে করোনাভাইরাস সম্পর্কে সচেতন করা যাবে? মানুষ যদি নিজে থেকে সচেতন না হয়!’ একই চিত্র ছিল রাজধানীর শাহবাগ, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে, কারওয়ান বাজার, নীলক্ষেত, গুলিস্তান, যাত্রাবাড়ী, রামপুরা, শ্যামলী, মোহাম্মদপুর, আসাদ গেটসহ বিভিন্ন স্থানে। গণপরিবহনের অভাবে অনেকে হেঁটেই অফিসে রওনা হয়েছেন। রবিবার (২৭ জুন) প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এতে বলা হয়, সারা দেশে পণ্যবাহী যানবাহন ও রিকশা ছাড়া সব গণপরিবহন বন্ধ থাকবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নিয়মিত টহলের মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর- নারায়ণগঞ্জ : সীমিত পরিসরের লকডাউন গতকাল নারায়ণগঞ্জে ছিল অনেকটা ঢিলেঢালা। সড়ক-মহাসড়কে ছিল জনতার স্রোত। প্রশাসন কঠোর অবস্থানে থাকলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বৃহস্পতিবার (আগামীকাল) থেকে সারা দেশে শাটডাউন ঘোষণা ও সেনাবাহিনী নামার খবরে গ্রামের বাড়ি ফিরছে সাধারণ মানুষ। প্রধান প্রধান রাস্তায় প্রবেশ গমন ঠেকাতে পারলেও অলিগলির রাস্তা ব্যবহার করছে তারা। হাজারো অজুহাত আর নানা কৌশলে লকডাউনে চলাফেরা করছে মানুষ। অনেকেই কয়েকবার যানবাহন পাল্টে গ্রামের বাড়িতে যান। বাণিজ্যিক নগর নারায়ণগঞ্জে কোনো মার্কেট, শপিং মল, বিপণিবিতান খোলা হয়নি। তবে কিছু দোকান খোলার চেষ্টা করা হলেও জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে জরিমানার পাশাপাশি সেগুলো বন্ধ করে দিচ্ছে। জেলা প্রশাসনের ২০টি মোবাইল কোর্ট ও পুলিশ প্রশাসনের ৩০টি টিম গুরুত্বপূর্ণ সড়কে কাজ করছে। খেয়াঘাট এলাকায় নদী পারাপার বিড়ম্বনায় পাড়ে জড়ো হয়েছে কয়েক হাজার যাত্রী। সেখানে ছিল না স্বাস্থ্যবিধির কোনো বালাই। জীবনের ঝুঁকি নিয়েই অতিরিক্ত যাত্রীবোঝাই নৌকায় পার হয়েছেন গার্মেন্টের নারী শ্রমিকসহ হাজার হাজার সাধারণ যাত্রী। মানিকগঞ্জ : ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে লোকজনের চাপ ছিল না। যাত্রীবাহী পরিবহন বন্ধ থাকায় মহাসড়ক ও বাসস্ট্যান্ডগুলো ছিল একেবারেই ফাঁকা। তবে যাত্রী পরিবহনের জন্য প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেল, ভ্যান, রিকশা, হ্যালোবাইকসহ ছোট যানবাহন চলতে দেখা যায়। গতকাল দুপুরে মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে যাত্রীর জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে দেখা যায় বিভিন্ন যানবাহনের চালকদের। এ ছাড়া বৃষ্টির কারণে স্থানীয় লোকজনও রাস্তায় কম বের হয়েছে। তবে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক ও হেমায়েতপুর-সিংগাইর-মানিকগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কে বিপুলসংখ্যক পণ্যবাহী ট্রাক চলতে দেখা গেছে।

কঠোর বিধিনিষেধের কারণে শহরের বড় মার্কেট ও বিপণিবিতানগুলো বন্ধ রয়েছে। তবে ছোট ছোট দোকানপাট খোলা রয়েছে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী লকডাউন বাস্তবায়নে কাজ করছে। পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে প্রয়োজনীয় ফেরি দিয়ে পণ্যবাহী ট্রাক, অ্যাম্বুলেন্স, জরুরি কাজে ব্যবহৃত যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে। যাত্রী পরিবহন না থাকায় ঘাটে কোনো চাপ ছিল না। এ নৌরুটে লঞ্চ বন্ধ রয়েছে। বিআইডব্লিউটিসির সহকারী মহাব্যবস্থাপক জিল্লুর রহমান জানান, যাত্রী পরিবহন না থাকায় ঘাটে কোনো চাপ নেই। অনেক সময় যানবাহনের জন্য ফেরি পাড়ে অপেক্ষা করে। গাজীপুর : লকডাউনে ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক দিয়ে গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও লোকজনকে লেগুনা, পিকআপ ভ্যান ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় চলাচল করতে দেখা গেছে। অধিকাংশ লোক মানছে না স্বাস্থ্যবিধি। কিছু কাভার্ড ভ্যানে লোকজনকে স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে বাড়ি ফিরতে দেখা গেছে। শুধু মহাসড়কে নয়, চান্দনা চৌরাস্তা থেকে রাজবাড়ী ও শিমুলতলী সড়কে গণপরিবহন বন্ধ থাকা এবং বিভিন্ন স্থানে পুলিশের চেকপোস্ট থাকায় যানবাহন সংকট এবং বৃষ্টির কারণে মানুষকে চরম ভোগান্তিতে পড়তে দেখা গেছে। রিকশা কিংবা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা দিয়ে ভেঙে ভেঙে অতিরিক্ত ভাড়ায় গন্তব্যে যেতে হয়েছে। বিভিন্ন আঞ্চলিক সড়কেও গণপরিবহন চলতে দেওয়া হয়নি। প্রজ্ঞাপনের নির্দেশনা অনুযায়ী গতকাল গাজীপুরে গণপরিবহন চলাচলে পুলিশকে কঠোর অবস্থানে দেখা গেছে। জরুরি সেবাদানকারী পরিবহন ছাড়া অন্য যানবাহন চলাচলে বাধা দিতে দেখা গেছে। মুন্সীগঞ্জ : দেশের দক্ষিণবঙ্গের ঘরমুখো মানুষের ভিড় দেখা গেছে মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটে। গতকাল সীমিত পরিসরে লকডাউনের দ্বিতীয় দিন দক্ষিণবঙ্গমুখী যাত্রীদের ঘাটে আসতে দেখা যায়। বেলা বাড়ার সঙ্গে বাড়তে থাকে চাপ। বিআইডব্লিউটিসির শিমুলিয়া ঘাটের সহকারী ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) ফয়সাল আহমেদ বলেন, ‘লকডাউনকে কেন্দ্র করে ঘাটে মানুষ আসছে। শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুটে ১৪টি ফেরি সচল রয়েছে। ঘাট এলাকায় পারাপারের জন্য অপেক্ষায় ছিল ২ শতাধিক গাড়ি। সিরিয়াল অনুযায়ী সব গাড়ি পার হচ্ছে। যাত্রী পারাপারের বিষয়ে আমাদের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা নেই। যারা ঘাটে আসছেন তারা পার হতে পারছেন।’

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর