বুধবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

অভিভাবকহীন অবস্থায় চলছে

-------- কর্নেল (অব.) অলি আহমদ

অভিভাবকহীন অবস্থায় চলছে

জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর বেগম খালেদা জিয়া দিন-রাত অমানবিক পরিশ্রম করে ছোট ছোট সন্তানদের সঙ্গ ত্যাগ করে- জিয়ার আদর্শ নিয়ে জনগণের পাশে দাঁড়ান। মাসের পর মাস, বছরের পর বছর তিনি আমাদের সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে           চষে বেড়িয়েছেন। তার পেছনে মূল লক্ষ্য ছিল দুইটি। এক. নিজেকে নেত্রী হিসেবে জনগণের সামনে তুলে ধরা। দুই. বিএনপিকে জনগণের দল হিসেবে গড়ে তোলা। আমাদের স্পষ্ট স্মরণ আছে- ১৯৭৫ সালের পর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নতুন করে জন্ম হয়। ১৯৭৫ সালে দেশে কোনো আওয়ামী লীগ ছিল না। আওয়ামী লীগের নাম পরিবর্তন করে রাতারাতি বাকশাল করা হয়েছিল। তাদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিএনপিকে মাঠের রাজনীতিতে দাঁড় করানোটা বেগম খালেদা জিয়ার কাছে ছিল বিরাট এক চ্যালেঞ্জ। আমরা কজন যুবক তখন তাঁর পাশে থেকে কাজ করেছি। এরশাদবিরোধী আন্দোলনে তিনিও মাঠে ছিলেন। আমরাও নেতৃত্ব দিয়েছি। আমাদের মাঝে ছিল সততা, নিষ্ঠা, দল ও জনগণের প্রতি দায়িত্ববোধ। যার ফলে বেগম খালেদা জিয়া আপসহীন নেত্রী হিসেবে আখ্যায়িত হন। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে সরকার গঠন করে। বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে তখন এটা খুব সহজ কাজ ছিল না। প্রথমদিকে- প্রায় সব সাবেক মন্ত্রী ও সিনিয়র নেতারা বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধাচরণ করেছিলেন। এতদসত্ত্বেও দলের কর্মকান্ডকে আমরা তড়িদ্গতিতে এগিয়ে নিয়ে যাই। আন্দোলনের সময় মাঠে ছিল আমাদের সরব উপস্থিতি। বক্তব্য-বিবৃতির রাজনীতির চেয়ে মাঠে-ময়দানের রাজনীতিকে অধিক প্রাধান্য দিয়েছিলাম। বর্তমানের চিত্র সম্পূর্ণ বিপরীত। রাজনীতি এখন আওয়ামী লীগ ঘরে ঢুকিয়ে দিয়েছে। প্রতিনিয়ত মিথ্যার ওপর ভিত্তি করে নেতারা বিবৃতি-যুদ্ধে অবতীর্ণ হচ্ছেন। অনেকে দুর্নীতির কারণে সরকারের সঙ্গে আঁতাতের কারণে হিসাবনিকাশ করে বক্তব্য রাখেন। ২০০০ সালে আমি এবং আমার স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সেনানিবাসের বাসভবনে গিয়েছিলাম। তাঁকে অনুরোধ করেছিলাম- তারেক রহমানকে সরাসরি দলের নেতৃত্বে না আনার জন্য। এটিও বলেছিলাম যে, প্রথমে তাকে দলের একজন কর্মী হিসেবে কাজ করতে দেন। সবার সঙ্গে মেলামেশার সুযোগটা করে দিন। কারণ রাজনীতির ‘মারপ্যাঁচ’ শিখার প্রয়োজন আছে তার। এর মাধ্যমে অভিজ্ঞতা অর্জন হবে। দলের নেতা-কর্মীদের চিনতে হবে। আর তখন কারও সুপারিশের প্রয়োজন হবে না। তার নিজের গুণ ও দক্ষতার কারণে, সর্বোপরি সাবেক রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সন্তান হিসেবে বিএনপির নেতৃত্ব তার হাতেই আসবে। এ জন্য ধৈর্য ধারণ করতে হবে এবং আমাদের বিদায় না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এ কথা বলার পর তিনি আমার সঙ্গে অত্যন্ত রাগান্বিত হয়ে বলেন, ‘মনে হয়- আপনি চান না, তারেক রহমান রাজনীতিতে আসুক।’ তার উত্তরে আমি সেদিন বলেছিলাম- ‘আমি আপনাদের প্রকৃত বন্ধু ও শুভাকাক্সক্ষী। আমি চাই- সে যখন রাজনীতিতে আসবে- এরপর তাকে যেন আর জটিল কোনো সমস্যার সম্মুখীন হতে না হয়।’ আপনি (খালেদা জিয়া) এখন দুর্নীতিগ্রস্ত ও চাটুকার ব্যক্তিদের হাতে বন্দী। তাদের কথা এখন আপনার খুব পছন্দ হচ্ছে। এর শেষ পরিণাম কিন্তু জেলখানা। অতঃপর আমি রাগ করে আমার স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে তাঁর বাসা থেকে বের হয়ে আসি। বিএনপি ছিল জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী জনগণের আসা-ভরসার স্থল। কিন্তু বর্তমানে সেখানে চির ধরেছে। কারণ দলের শীর্ষ দুই নেতা দেশের রাজনীতির ময়দানে একেবারেই অনুপস্থিত। দুজনই অন্যায়ভাবে সাজাপ্রাপ্ত হওয়ার কারণে রাজনৈতিক কর্মকান্ডে সরাসরি সম্পৃক্ত হতে পারছেন না। সুতরাং অভিভাবকহীন অবস্থায় দল চলছে। আসলে যৌথ নেতৃত্বের মাধ্যমে কখনো রাজনৈতিক দল চলে না। এটি যদি কোনো উত্তম পন্থা হতো- আল্লাহ-রাব্বুল আলামিনও এই পৃথিবীতে একসঙ্গে ১০-১৫ জন করে পয়গম্বর (নবী) প্রেরণ করতেন। ‘লিডার লিডস, নট লেড বাই দ্য ওয়ার্কার্স’। অর্থাৎ নেতা নেতৃত্ব দেন। আর কর্মীরা সেটি বাস্তবায়ন করেন। আশা করি বিএনপি দেরিতে হলেও জনগণকে হতাশ করবে না। বাস্তবতার নিরিখে দলকে শক্তিশালী করা ও এগিয়ে নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। তাদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আমাদের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা ও সফলতা কামনা করি।

লেখক : সাবেক সামরিক কর্মকর্তা এবং সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর