মঙ্গলবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

জার্মানিতে অবসান মেরকেল যুগের

প্রতিদিন ডেস্ক

জার্মানিতে অবসান মেরকেল যুগের

২০০৫ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে ইউরোপীয় রাজনীতির মঞ্চে বড় একটি অবস্থানে দাঁড়িয়ে ছিলেন অ্যাঙ্গেলা মেরকেল। সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ছিলেন জর্জ ডব্লিউ বুশ, প্যরিসের এলিসি প্রাসাদের অধিকর্তা জ্যাক শিরাক এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তখন টনি ব্লেয়ার। সেই মেরকেল যুগের অবসান হলো জার্মানিতে। জাতীয় নির্বাচনে অল্পের জন্য হেরে গেছে বিদায়ী চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেলের দল। অল্প ব্যবধানে তাঁর দল ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়নকে (সিডিইউ) হারিয়ে দিয়েছে মধ্য বামপন্থি সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এসপিডি)। ফলে জার্মানির নতুন সরকার পররাষ্ট্রনীতির বিষয়গুলোয় কীভাবে জড়িত হয় তার ওপরই ইউরোপ এবং অন্যান্য মিত্র দেশের সঙ্গে বার্লিনের সম্পর্ক নির্ভর করবে। আর তা স্পষ্ট হতে কয়েক মাস লাগবে। নির্বাচনে এসপিডি পেয়েছে ২৫ দশমিক ৭ শতাংশ ভোট। অন্যদিকে ২৪ দশমিক ১ শতাংশ ভোট পেয়েছে মেরকেলের সিডিইউ ও এর শরিক দল। তৃতীয় অবস্থানে থাকলেও দলগতভাবে ভোটে সবচেয়ে ভালো করেছে গ্রিন্স। তারা পেয়েছে ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট যা দলটির ইতিহাসে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি। এ ছাড়া এফডিপি পেয়েছে ১১ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট। এখন সরকার গড়তে একটি জোট গঠন করতে হবে। এসপিডির নেতা ওলাফ শলৎজ অবশ্য এর আগে বলেছেন, সরকার গঠনে তাঁর দল ভোটে স্পষ্ট রায় পেয়েছে।

সমর্থকরা ব্যাপক উচ্ছ্বাসের সঙ্গে ওলাফ শলৎজকে অভ্যর্থনা জানিয়েছেন। পরে এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ভোটাররা একটি ‘বাস্তবধর্মী সরকার’ গঠনে তাঁকে দায়িত্ব দিয়েছেন। চূড়ান্ত ফলাফলে যে দলই এগিয়ে থাক সরকার গড়তে তাদের জোটের শরণ নিতে হবে। ফলে নতুন চ্যান্সেলর কে হবেন তা জানতেও অপেক্ষায় থাকতে হবে। পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে গ্রিন পার্টি এবং এফডিপির সঙ্গে এসপিডির জোট গড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও দল দুটি রক্ষণশীলদের সঙ্গে যোগ দিতে পারে বলেও আভাস হয়েছে। এসপিডির প্রার্থী ওলাফ শলৎজকে পরবর্তী চ্যান্সেলর করার চেষ্টা হবে জানিয়ে দলটির সাধারণ সম্পাদক লার্স ক্লিংবেইল এআরডি টেলিভিশনকে বলেছেন, ‘এসপিডি প্রথম স্থানে রয়েছে। নির্বাচনে আমরা জিতেছি।’ ফলে ৬৩ বছর বয়সী ওলাফ শলৎজ হতে পারেন এসপিডির চতুর্থ চ্যান্সেলর। অ্যাঙ্গেলা মেরকেলের মন্ত্রিসভায় অর্থমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা শলৎজ একসময় হামবুর্গের মেয়র ছিলেন। এবারের নির্বাচনে মেরকেলের দল সিডিইউ এ যাবৎকালের সবচেয়ে খারাপ ফল করলেও দলটির প্রার্থী ৬০ বছর বয়সী আরমিন লাশেট এখনো নিজের চ্যান্সেলর হওয়ার সুযোগ দেখছেন।

জার্মানি পরিবর্তন চায় : জার্মান ভোটাররা দেশের রাজনৈতিক পটভূমিতে বিশাল পরিবর্তন এনেছেন। বড় দুই দলের প্রভাবকে ইতিহাসের পাতায় বন্দী করেছেন, অন্তত এখন পর্যন্ত। এ পরিবর্তন দরকার ছিল বলে মনে করেন ডিডব্লিউর প্রধান সম্পাদক মানুয়েলা কাসপার-ক্লারিজ। তাঁর অভিমত, পরিবর্তন এসেছে। জার্মান ভোটাররা জানিয়ে দিয়েছেন শেষ মহাজোট সরকারের ক্ষুদ্র আপোস দিয়ে আর কাজ হবে না। এখন জলবায়ু পরিবর্তন, ডিজিটালাইজেশন ও জার্মানির প্রয়োজনীয় আধুনিকীকরণের মতো বড় চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার সময়। এসব কাজ শুধু ছোট দলগুলোর সঙ্গে মিলে করা সম্ভব। পরিবেশবাদী সবুজ দল ও ব্যবসাবান্ধব মুক্ত গণতন্ত্রী এফডিপি দল ছাড়া এবার কিছু করা যাবে না এবং এটা ভালো বিষয়। সাময়িক সরকারি ফল বলেছে এবার এসপিডির নেতৃত্বে গ্রিন্স ও এফডিপির সমন্বয়ে জোট সরকার গঠনের সম্ভাবনা বেশি। কিন্তু গ্রিন্স ও এফডিপির মতো দুটো দলের সঙ্গে এ-সংক্রান্ত আলোচনা সহজ হবে না। কারণ জলবায়ু পরিবর্তন ও করারোপ এ দুটি বিষয়ে ওই দুই দলের মধ্যে বেশ মতপার্থক্য রয়েছে। অর্থাৎ নতুন সরকার কেমন হতে যাচ্ছে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকছে। তবে ভোটাররা জানিয়ে দিয়েছেন তারা অ্যাঙ্গেলা মেরকেলের নীতির ধারাবাহিকতা চান না। গত কয়েক দশকের তুলনায় সিডিইউ ও এসপিডির মতো বড় দলগুলোর ক্ষমতা ও প্রভাব অনেক কমে গেছে।

সর্বশেষ খবর