বৃহস্পতিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

টাকা ফেরতের জবাব কারও কাছে নেই

ড. মো. রিদওয়ানুল হক

টাকা ফেরতের জবাব কারও কাছে নেই

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের (আইবিএ) শিক্ষক অধ্যাপক ড. মো. রিদওয়ানুল হক বলেছেন, ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জ, ধামাকা বা ই-কমার্স কোম্পানিতে পণ্য কিনে প্রতারণার শিকার মানুষ অর্থ কীভাবে ফেরত পাবেন তার সঠিক জবাব দেওয়ার মতো আসলে কেউ নেই। এ জবাব আমার কাছে যেমন নেই, সরকারের কাছেও নেই। আমার পক্ষে এটা বলা খুবই কঠিন।

গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন। আলাপচারিতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক বলেন, আমি বলতে পারি এ ঝুঁকি কেন তৈরি হলো। আমাদের দেশে ই-কমার্স ব্যবসা বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই চলছে। তবে এর ব্যাপ্তি বেড়েছে করোনাভাইরাস সংক্রমণের সময়। আমাদের দেশে বড় সমস্যা হচ্ছে নতুন কোনো ব্যবসা শুরু হলে তার পলিসিগত কিছু ঝুঁকি থাকে। ই-কমার্স ব্যবসার জন্য আমাদের একটি নীতিমালা ছিল; কিন্তু তা পর্যাপ্ত ছিল বলা যাবে না। হয়তো ধীরে ধীরে পরিণত হতো। এ ক্ষেত্রে আমি বলব যারা ক্রেতা তাদের সচেতনতার যথেষ্ট ঘাটতি ছিল।

ড. মো. রিদওয়ানুল হক বলেন, আমরা ক্রেতাদের প্রায়ই বলতে শুনি ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জ, ধামাকা বা অন্য কোম্পানিতে ইনভেস্ট করেছি। এটা কীভাবে সম্ভব? তারা শুধু পণ্য বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান। সাধারণ ক্রেতাদের বোঝা উচিত এটা উৎপাদন খাতের কোনো পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি নয়; কোম্পানিগুলো শুধু সেলার বা বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান। আমি এখানে যতটা না সরকারের ব্যর্থতা বলব; তার চেয়ে বলব ক্রেতাদের অসাবধানতা। সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে ই-কমার্স সেক্টর কিছু কাজ করেছে। এখানে সরকারেরও পলিসি ছিল হয়তো তা পূর্ণাঙ্গ নয়। ধীরে ধীরে পূর্ণাঙ্গ হতো। কিন্তু তারা ই-কমার্স সেক্টরকে ঝুঁকির মুখে ফেলে দিয়েছে; সেই পাঁচ-ছয়টি কোম্পানি কিন্তু সরকারের ই-কমার্স নীতির নানা গ্যাপ ধরে তার মধ্য দিয়ে গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে। তিনি আরও বলেন, আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে ই-অরেঞ্জ, ইভ্যালি বা ধামাকা যে কোম্পানিই বলুন, তারা সাধারণ গ্রাহকের অজ্ঞতা পুঁজি করেছে। একটা বিষয় আমাদের বোঝা দরকার- বাজারে যে গাড়ির দাম ৯ লাখ টাকা সে গাড়ি কীভাবে একটি সেলার কোম্পানি ৪-৫ লাখ টাকায় দেবে! তা গ্রাহক হিসেবে আমারও বোঝা উচিত। এই না বোঝার প্রতিবেশ সিস্টেমের কারণে আজ ই-কমার্স সেক্টর ধ্বংসের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে।

কোম্পানিগুলোর প্রতারণা কীভাবে রোধ করা যায়- এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক রিদওয়ানুল হক বলেন, ই-কমার্স ব্যবসার জন্য যারা ই-কমার্স বিষয়ে কাজ করেন যেমন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, অভিজ্ঞ সরকারি কর্মকর্তা, শিল্প উৎপাদনবিষয়ক বিশেষজ্ঞ তাদের নিয়ে একটি যৌথ কমিশন করা যেতে পারে। দ্বিতীয়ত, সরকার যেহেতু ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছে তাই ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রণে যেসব বডি আছে যেমন ই-ক্যাব, বেসিস, ভোক্তা অধিকারসহ যেসব সংগঠন বা প্রতিষ্ঠান, তারা প্রতি বছর কোম্পানিগুলো নিরীক্ষা করে জবাবদিহি নিশ্চিত করবে। কোম্পানিতে গভার্নেস অডিট করা দরকার। তৃতীয়ত, প্রতিটি ট্রানজেকশনে সামান্য পরিমাণ অর্থ ইন্স্যুরেন্সে রাখা যেতে পারে, যাকে আমরা বলব রিস্ক ম্যানেজমেন্ট বা ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা।

 

সর্বশেষ খবর