রবিবার, ১০ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

ভাসানচরে যুক্ত হলো জাতিসংঘ

তিন মাসে আরও ৮০ হাজার রোহিঙ্গা স্থানান্তর পরিকল্পনা

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

ভাসানচরে যুক্ত হলো জাতিসংঘ

ভাসানচরে রোহিঙ্গা ক্যাম্প দেখভালের দায়িত্বে যুক্ত হয়েছে জাতিসংঘ। এ নিয়ে গতকাল সরকারের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর - বাংলাদেশ প্রতিদিন

ভাসানচরে রোহিঙ্গা ক্যাম্প দেখভালের দায়িত্বে যুক্ত হয়েছে জাতিসংঘ। এখন থেকে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করবে জাতিসংঘের সংস্থাগুলো। এ নিয়ে গতকাল সরকারের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর। একসময় রোহিঙ্গাদের কক্সবাজার থেকে স্থানান্তরের বিরোধিতা করলেও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে অবস্থান পরিবর্তন করল জাতিসংঘ। বর্তমানে ভাসানচরে থাকা প্রায় ১৮ হাজার রোহিঙ্গার সঙ্গে কক্সবাজারের ক্যাম্পগুলো থেকে আগামী তিন মাসে আরও প্রায় ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে স্থানান্তরের পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে।

সমঝোতা স্মারকে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোহসীন এবং জাতিসংঘের পক্ষে ইউএনএইচসিআরের বাংলাদেশের প্রতিনিধি জোহানস ভ্যান ডার ক্ল স্বাক্ষর করেন। সমঝোতা স্মারক সই অনুষ্ঠানে দুর্যোগ ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান ও মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ক্যাপ্টেন এ বি তাজুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। সমঝোতা স্মারক অনুসারে, জাতিসংঘের সংস্থাসমূহ কর্তৃক কক্সবাজারের ন্যায় ভাসানচরেও মানবিক সহায়তা পরিচালিত হবে। বেসামরিক প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে এখানে মানবিক সহায়তা কার্যক্রম পরিচালিত হবে। বাংলাদেশ সরকার ও ইউএনএইচসিআরের যৌথ উদ্যোগে রোহিঙ্গা নাগরিকদের খাদ্য ও পুষ্টি, সুপেয় পানি, পয়ঃনিষ্কাশন, চিকিৎসা, মিয়ানমার কারিকুলাম ও ভাষায় এফডিএমএনদের অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা এবং জীবিকায়নের ব্যবস্থা করা হবে ভাসানচরে। বাংলাদেশ সরকার এখানে বসবাসরত এফডিএমএন ও কর্মরত জাতিসংঘ এবং এর সহযোগী সংস্থা ও দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক এনজিওকর্মীদের নিরাপত্তার বিষয় দেখাশোনা করবে। এ ছাড়া ভাসানচরে এফডিএমএনদের বসবাসের কারণে পার্শ্ববর্তী স্থানীয় এলাকা ও জনগণের ওপর যদি প্রভাব পড়ে, তা নিরসনে জাতিসংঘের সংস্থাসমূহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। স্বাক্ষর শেষে প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান বলেন, জনসংখ্যার অতি ঘনবসতি ও পরিবেশের ঝুঁকি হ্রাসের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ১ লাখ রোহিঙ্গাকে নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার ভাসানচরে বসবাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ভাসানচরে ১ হাজার ৪৪০টি আশ্রয়গৃহ ও ১২০টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়। এ পর্যন্ত ৪ হাজার ৭২৪ পরিবারের ১৮ হাজার ৮৪৬ জনকে সেখানে নেওয়া হয়েছে। আগামী তিন মাসের মধ্যে আরও প্রায় ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তরের পরিকল্পনাও জানান প্রতিমন্ত্রী। এদিকে প্রতিমন্ত্রী এনামুর রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে জাতিসংঘের সক্রিয় ভূমিকা প্রত্যাশা করে বলেন, ভাসানচর কিংবা কক্সবাজারে বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের থাকার যে ব্যবস্থা করা হয়েছে, তা সাময়িক। আমাদের মূল লক্ষ্য মিয়ানমারের এসব বাস্তুচ্যুত নাগরিকদের মিয়ানমারে দ্রুত প্রত্যাবাসন। ইউএনএইচসিআর প্রতিনিধি জোহানস ভ্যান ডার ক্ল বলেন, বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের সার্বিক সহযোগিতায় মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত নাগরিকদের আশ্রয়, খাদ্য, চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা সহজ হয়েছে।  রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনে সহযোগিতার কথাও জানান ইউএনএইচসিআর প্রতিনিধি।

মিয়ানমারে দমন-পীড়নের মুখে পালিয়ে আসা ৪ লাখের বেশি রোহিঙ্গা দীর্ঘদিন ধরে কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে রয়েছে। ২০১৭ সালে তার সঙ্গে যোগ হয় আরও ৭ লাখ রোহিঙ্গা। কক্সবাজারে বিশ্বের বৃহত্তম শরণার্থী শিবিরে ১১ লাখ রোহিঙ্গার সহায়তায় জাতিসংঘ কাজ করে যাচ্ছিল। তবে কক্সবাজারের ওপর চাপ কমাতে বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের একাংশকে নোয়াখালীর জনবিরল দ্বীপ ভাসানচরে নেওয়ার উদ্যোগ নেয়। গত দেড় বছরে ১৮ হাজারের বেশি রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তর করে সরকার।

সর্বশেষ খবর