মুশফিকুর রহিম ও লিটন দাসের সামর্থ্য এবং যোগ্যতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। টেকনিক্যালি দুজনেই দুর্দান্ত ব্যাটসম্যান। বিপর্যয়ে হাল ধরার অনেক নজির আছে দুজনের। কিন্তু টি-২০ বিশ্বকাপে ছন্দহীন হয়ে পড়েন দুই ব্যাটসম্যান। দুজনের ছন্দহীন ব্যাটিংয়ের প্রভাব পড়ে বাংলাদেশের পারফরম্যান্সে। রঙিন পোশাকে সাদা বলের বাজে পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা ছিল ঘরের মাঠে পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-২০ সিরিজেও। টি-২০ বিশ্বকাপে বাজে পারফরম্যান্সের জন্য নির্বাচক প্যানেল দুজনকে ছুড়ে ফেলেন পাকিস্তান সিরিজে। কিন্তু টেস্ট সিরিজে আস্থা রাখেন দুজনের ওপর। তার প্রতিদানও দেন লিটন ও মুশফিক। খাঁদের কিনারায় থাকা দলকে দুজনে রেকর্ড জুটি গড়ে নিয়ে যান শক্ত অবস্থানে। পঞ্চম উইকেট জুটিতে দুজনের অবিচ্ছিন্ন ২০৪ রানের জুটিতে চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিন ৪ উইকেটে ২৫৩ রান করেছে বাংলাদেশ। জুটি গড়ার পথে নান্দনিক ব্যাটিংয়ে ১১৩ রানের হার না মানা ইনিংস খেলেন লিটন। যা তার ২৬ টেস্ট ক্যারিয়ারে প্রথম সেঞ্চুরি। দেশের সবচেয়ে সিনিয়র ও অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মুশফিক অপরাজিত রয়েছেন ৮২ রানে।
জুলাইয়ে সর্বশেষ টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়েকে হারানোর পর থেকে টানা টি-২০ ম্যাচ খেলেছে টাইগাররা। ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জিতলেও টি-২০ বিশ্বকাপে ছিল যাচ্ছেতাই পারফরম্যান্স। বিশ্বকাপের বাজে পারফরম্যান্স বজায় থাকে পাকিস্তান সিরিজেও। গতকাল চট্টগামে প্রথম টেস্ট খেলতে নেমে প্রথম সেশনে ৪৯ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বিপর্যয়ে পড়ে। সেখান থেকে হিমালয়সম দৃঢ়তায় ব্যাট করে দলকে বড় স্কোরের পথে টেনে নিয়ে যায় মুশফিক-লিটন জুটি। দুজনে পঞ্চম উইকেট জুটিতে যোগ করেন ৬৮.৪ ওভারে ২০৪ রান। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে পঞ্চম উইকেট জুটিতে যা সর্বোচ্চ। আগের রেকর্ডটি ২০০৮ সালে ১৪৪ রানের, মেহরাব জুনিয়র ও মুশফিক করেছিলেন। শুধু তাই নয়, যে কোনো ভেন্যুতে পাকিস্তানের বিপক্ষে পঞ্চম উইকেট জুটিতেও এটা সর্বোচ্চ। ২০১১ সালে মিরপুরে শাহরিয়ার নাফিস-সাকিব আল হাসান পঞ্চম উইকেট জুটিতে ১৮০ রান করেছিলেন। তবে পঞ্চম উইকেট জুটিতে সর্বোচ্চ রান, ৩৫৯। ২০১৭ সালে ওয়েলিংটনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জুটি গড়েছিলেন মুশফিক ও সাকিব। পঞ্চম উইকেটে দুই শতাধিক রানের মোট জুটি ৪টি। ৩৫৯ ও ২০৪ রান ছাড়াও রয়েছে ২৬৭ ও ২৩৫ রানের। ২০১৩ সালে গলে আশরাফুল-মুশফিক ২৬৭ রান করেছিলেন। ওই টেস্টে বাংলাদেশের ক্রিকেটার হিসেবে ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলেন মুশফিক। ২০১৯ সালে হ্যামিল্টনে সৌম্য সরকার-মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ করেছিলেন ২৩৫ রান। লিটন ১১৩ রানের অপরাজিত ইনিংসটি খেলেন ২২৫ বলে ১১ চার ও ১ ছক্কায়। ২৬ টেস্টে এটা তার প্রথম সেঞ্চুরি। দৃষ্টিনন্দন সেঞ্চুরির ইনিংসটি কিন্তু নিন্ডিদ্র ছিল না। ব্যক্তি ৬৭ রানের মাথায় সহজ জীবন পান লিটন। শাহীন আফ্রিদিকে পুল খেলেন লিটন। ডিপ মিড উইকেটে সাজিদ ফেলে দেন সহজ ক্যাচ। দলের স্কোর তখন ৬৫ ওভারে ৪ উইকেটে ১৮৯ রান। ২৬ নম্বর টেস্টে লিটন প্রথম সেঞ্চুরি পান। এর আগে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৯৪ ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৯৫ রানে আউটের রেকর্ড রয়েছে তার। মুশফিক অপরাজিত রয়েছেন ৮২ রানে। ১৯০ বলের ইনিংসটিতে রয়েছে ১০টি চার। ৭৬ টেস্ট ক্যারিয়ারে সাবেক অধিনায়কের এটা ২৪ নম্বর হাফসেঞ্চুরি। তার রান ৪৭৭৮। টেস্টে তামিম ইকবালকে টপকে বাংলাদেশের সর্বাধিক রানের মালিক হতে মুশফিকের চাই আর মাত্র ১১ রান। বাঁ-হাতি ওপেনার তামিমের রান ৪৭৮৮। তবে জহুর আহমেদ স্টেডিয়ামে তিনি এখন সর্বধিক রানের মালিক। ৮২ রানের ইনিংস খেলার পথে তিনি পেছনে ফেলেন টাইগার টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুলকে। ১৮ টেস্টে মুশফিকের রান ১২৭৬ এবং মুমিনুলের রান ১১ টেস্টে ১২০৩ রান।