বুধবার, ১ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

ছাত্রবিক্ষোভে অচল রাজধানী

পথে পথে গাড়ির কাগজ পরীক্ষা, রামপুরার ঘটনায় দুই মামলা, শর্ত দিয়ে হাফ পাসে রাজি মালিকরা, আজ ফের রাস্তায় নামার ঘোষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছাত্রবিক্ষোভে অচল রাজধানী

রাজধানীর রামপুরায় গতকাল বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা -জয়ীতা রায়

হাফ পাসসহ নয় দফা দাবিতে গতকালও রাজধানীর সড়কে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। এতে অচল হয়ে পড়ে ঢাকা। পথে পথে বিভিন্ন গাড়ির লাইসেন্স ও ফিটনেসের কাগজপত্র যাচাই করে দেখেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। বাদ পড়েনি পুলিশের গাড়িও। কাগজপত্র ঠিক না থাকলে পুলিশের বিরুদ্ধে পুলিশকেই মামলা দিতে বাধ্য করেছেন। আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে শর্ত সাপেক্ষে শুধু ঢাকায় হাফ পাসের দাবি মেনে নিয়েছে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি।

তবে মালিকদের শর্ত প্রত্যাখ্যান করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। রাজধানীসহ সারা দেশেই গণপরিবহনে হাফ (অর্ধেক) ভাড়ার দাবি না মানা পর্যন্ত বনানী বিআরটিএ ভবনের সামনে টানা অবস্থান কর্মসূচি পালনের হুমকি দিয়েছেন তারা। শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলনে পুরো ঢাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দেখা দেয় তীব্র যানজট। এতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে নগরবাসীকে। তারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে কোনো গণপরিবহন না পেয়ে ব্যক্তিগত পরিবহন এবং হেঁটে নিজ নিজ গন্তব্যে পৌঁছেন। এদিকে সোমবার দিবাগত রাতে রামপুরায় বাসচাপায় শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। গতকাল দুপুর থেকে বনানীর বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ভবনের সামনে ছাত্ররা ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। এ সময় সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। সেখানে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পক্ষে শহিদ আপন বলেন, ‘পরিবহন মালিকরা বিভিন্ন শর্ত জুড়ে দিয়ে শুধু ঢাকায় হাফ পাস চালুর ঘোষণা দিয়েছেন। আমরা তাদের কোনোরকম শর্ত মানি না।’ বাসচাপায় সহপাঠীর মৃত্যুর সুষ্ঠু বিচার, নিরাপদ সড়কসহ নানা দাবিতে কয়েকদিন ধরে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা। ২৪ নভেম্বর গুলিস্তানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ময়লার গাড়ির চাপায় নটর ডেম কলেজের ছাত্র মৃত্যুর পর সড়কে নামেন শিক্ষার্থীরা। নিরাপদ সড়কের দাবিতে তাদের চলমান আন্দোলনের মধ্যেই সোমবার রাতে গ্রিন অনাবিল পরিবহনের একটি বাসের চাপায় রামপুরা বাজারের সামনে প্রাণ হারান আরেক শিক্ষার্থী। ওই ঘটনার পর বিক্ষুব্ধরা বেশ কয়েকটি বাসে আগুন দেন। রাতেই আন্দোলন শুরু করেন তার সহপাঠীরা।

গতকাল সকালেই তারা ফের সড়কে নামেন। ‘ছাত্র সমাজ জেগেছে, উই ওয়ান্ট জাস্টিস, সড়কে হত্যাকারীদের বিচার চাই’ এমন স্লোগানে উত্তাল ছিল ঢাকার সড়ক। ক্লাস শেষ করে, কেউ কেউ ক্লাস না করেই কাঁধে ব্যাগ নিয়ে গতকাল সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করতে থাকেন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা।

রামপুরায় শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধে দুই পাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আজ বেলা ১১টায় আবার রাস্তায় নামার ঘোষণা দিয়ে রামপুরার রাস্তা ছাড়েন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনকারীদের পক্ষে কর্মসূচি ঘোষণা দেন খিলগাঁও মডেল কলেজের শিক্ষার্থী সোহাগী সামিয়া। তিনি বলেন, আগামীকাল তাদের বিস্তারিত কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। এর আগে সকালে বিএএফ শাহীন কলেজ, ইম্পেরিয়াল কলেজ, একরামুন্নেছা স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা রামপুরায় মানববন্ধন শুরু করেন। এ সময় বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের হাতে বিভিন্ন ধরনের প্ল্যাকার্ড দেখা যায়। এর মধ্যে কয়েকটিতে লেখা ছিল- ‘আমার বাবা কাঁদছে নিরাপদ সড়কের দাবিতে’, ‘ছাত্রজনতা ঐক্য গড়, নিরাপদ সড়কের দাবি তোলো’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘অ্যাম আই নেক্সট’, ‘রাতের আঁধারে শিক্ষার্থী মরে, প্রশাসন ঘুম পাড়ে’। মাইনুদ্দিন নিহতের বিচার চাওয়া ছাড়াও গণপরিবহনে হাফ পাস নিশ্চিত করার দাবিও জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। রামপুরায় শিক্ষার্থীরা গাড়ির চালকদের লাইসেন্স ও কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করেন। বেলা ১১টার দিকে শিক্ষার্থীদের কাগজ যাচাই-বাছাইয়ের সময় রাস্তায় বিআরটিসির একটি বাস ফেলে পালিয়ে যান চালক ও সহকারী। তবে জরুরি সেবার গাড়িগুলোকে ছেড়ে দেওয়া হয়। সেখানে পুলিশের স্টিকারসহ একটি গাড়ি আটক করেন তারা। গাড়িটির চালক নিজেকে পুলিশ সদস্য পরিচয় দিলেও গাড়ির কোনো লাইসেন্স ও ফিটনেসের কাগজ দেখাতে পারেননি বলে অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা। পুলিশ গাড়িটি আটক করে রামপুরা ট্রাফিক পুলিশ বক্সে নিয়ে যায়।

গাড়ির চালক বলেন, ‘গাড়িটি পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রেজাউল করিমের। আজ তিনি নিজেই গাড়িটি চালাচ্ছিলেন। গাড়ির লাইসেন্স হারিয়ে গেছে। স্যার জিডির কপি দেখালেও শিক্ষার্থীরা মানতে রাজি হননি।’

সেখানে উপস্থিত ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) মোহাম্মদ নূরুল আমীন বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের দাবির ভিত্তিতে আমরা গাড়িটি আটক করেছি। কাগজপত্র যাচাই করা হচ্ছে।’

এর কিছুক্ষণ পর শিক্ষার্থীরা আরেকটি বাসের চালকের কাগজ দেখতে চাইলে তিনিও কোনো লাইসেন্স দেখাতে পারেননি। শিক্ষার্থীরা পুলিশের আরও চারটি মোটরসাইকেলের কাগজপত্র দেখতে চাইলে তারাও কোনো কাগজ দেখাতে পারেননি। লাইসেন্স ও নম্বরপ্লেট না থাকা পুলিশের মোটরসাইকেলে লাল রং দেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা এ সময় ‘ভুয়া, ভুয়া’ বলে স্লোগান দেন। তারা বলেন, ‘হায়, হায় বাংলাদেশ, পুলিশের নাই লাইসেন্স’। শিক্ষার্থীরা তথ্য মন্ত্রণালয়/বাংলাদেশ টেলিভিশনের স্টিকারওয়ালা একটি গাড়ির কাগজপত্র দেখতে চান। তবে গাড়িটি বাংলাদেশ বেতারের একজন অনুষ্ঠান সচিবের বলে দাবি করেন এর চালক। তিনি জানান, তার কাগজপত্র ঠিক থাকলেও লাইসেন্সের মেয়াদ নেই। গাড়িতে দুজন আরোহী থাকলেও পরে আর তাদের সেখানে পাওয়া যায়নি। এদিকে দুপুর ১টায় মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ উচ্চবিদ্যালয় এবং মতিঝিল সেন্ট্রালের ছাত্ররা শাপলা চত্বরে অবস্থান নিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেন। দুপুর ২টায় তারা সড়ক ছেড়ে দেন। এ সময় তারা ‘জেগেছে জেগেছে ছাত্র সমাজ জেগেছে’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘আমার ভাইয়ের কিছু হলে জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে’ এমন নানা স্লোগান দেন। একই দাবিতে বেলা সাড়ে ১১টায় ধানমন্ডি ২৭ নম্বরে রাপা প্লাজার সামনে সড়ক অবরোধ করেন মোহাম্মদপুর মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মোহাম্মদপুর গভর্নমেন্ট কলেজ, লালমাটিয়া মহিলা কলেজ ও ধানমন্ডি আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ সময় পুলিশ ও ট্রাফিক সদস্যদের আশপাশে অবস্থান করতে দেখা গেছে। সেখানে চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স ও গাড়ির ফিটনেস সনদ যাচাই করতে দেখা গেছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের। লালমাটিয়া মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী শাহরিন শামস বলেন, ‘আমাদের জন্য ঢাকার সড়ক মোটেও নিরাপদ নয়। শিক্ষার্থীরা নিয়মিতই মরছে এ সড়কে। নটর ডেমের শিক্ষার্থী মারা যাওয়ার পর গতকাল আরেক এসএসসি শিক্ষার্থী মারা গেল। সুষ্ঠু বিচার ও ব্যবস্থাপনা না থাকায় এমনটি হচ্ছে। সড়ক নিরাপদ না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরব না।’

দুপুর ১২টায় মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড-সংলগ্ন সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন মোহাম্মদপুর মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মোহাম্মদপুর গার্লস কলেজ, মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ আশপাশের স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ সময় ওই এলাকায় সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ভাষ্য- সোমবার রাতে রামপুরায় যখন কলেজছাত্র মাইনুদ্দিন মারা গেলেন, আজ (মঙ্গলবার) সকালে ঢাকা সড়ক পরিবহন মা?লিক স?মি?তির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনা?য়েত উল্যাহ ঘোষণা দিলেন ছাত্রদের হাফ ভাড়ার দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে শুধু ঢাকা মহানগরীর মধ্যে। শুধু ঢাকা মহানগরীর মধ্যেই ছাত্ররা পড়ালেখা করে না সারা দেশে ছাত্ররা পড়ালেখা করছে। যদি হাফ পাস ভাড়া দিতে হয় একসঙ্গে একযোগে সারা দেশে ছাত্রদের হাফ পাস ভাড়ার দাবি মেনে নিতে হবে। শুধু মুখের কথায় হবে না আইন করে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে।

গতকাল বেলা পৌনে ১১টায় নীলক্ষেত মোড় অবরোধের চেষ্টা করে ঢাকা কলেজের উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণির শিক্ষার্থীরা। কিন্তু ঢাকা কলেজের শিক্ষকদের বাধার কারণে তারা সেখানে দাঁড়াতে পারেনি। পরে ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুল অ্যান্ড কলেজ, আজিমপুর গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা সিটি কলেজ, ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজসহ আশপাশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা মিলিত হয়ে মিছিল শুরু করেন। প্রথমে তারা নীলক্ষেত এবং পরে মিছিল নিয়ে মিরপুর রোডে অবস্থান নেন। এ সময় শিক্ষার্থীদের ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘নিরাপদ সড়ক চাই’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাইরে’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়।

মাইনুদ্দিনের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন : সোমবার রাত পৌনে ১১টায় রামপুরায় গ্রিন অনাবিল পরিবহনের বাসের চাপায় মাইনুদ্দিন নিহত হন। এ ঘটনায় রাতে সড়ক অবরোধ করে উত্তেজিত জনতা। এ সময় অভিযুক্ত বাসসহ নয়টি বাসে আগুন দেওয়া হয়। ভাঙচুর করা হয় আরও চারটি বাস। গতকাল দুপুর ১টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে মাইনুদ্দিনের লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। এরপর রামপুরায় জানাজা শেষে গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় বাসচালক সোহেলকে (৩৫) গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছেন স্থানীয়রা। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হয়। পুলিশি পাহারায় তার চিকিৎসা চলছে। অন্যদিকে গতকাল সকালে সায়েদাবাদ থেকে অভিযুক্ত বাসের হেলপার চান মিয়াকেও আটক করেছে র?্যাব।

রামপুরার ঘটনায় দুই মামলা : বাসচাপায় শিক্ষার্থী মাইনুদ্দিন নিহতের ঘটনায় রামপুরা থানায় একটি মামলা হয়েছে। গতকাল সকালে নিরাপদ সড়ক আইনে মামলাটি করেন নিহত মাইনুদ্দিনের মা রাশিদা বেগম। একই ঘটনার জেরে রামপুরায় বাসে আগুন ও ভাঙচুর করায় পৃথক মামলা হয়েছে। রামপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম জানান, নিহত শিক্ষার্থীর মায়ের করা মামলায় অনাবিল পরিবহনের বাসের চালককে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। বাসে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনায় অজ্ঞাত ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করে মামলা দেওয়া হয়েছে।

লাইসেন্স ও ফিটনেস যাচাই করেন শিক্ষার্থীরা : রামপুরা ও ধানমন্ডি-২৭-এ চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স ও গাড়ির ফিটনেস সনদ যাচাই করতে দেখা গেছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের। সহযোগীর ভূমিকায় ছিলেন সংশ্লিষ্ট ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা। লাইসেন্স ও ফিটনেস সনদ দেখাতে না পারলেই ঘুরিয়ে দেওয়া হয় অথবা সামনে যেতে হলে মামলা নিতে হয়েছে। কোনো কোনো গাড়ির সামনে শিক্ষার্থীরা লিখেও দিয়েছেন- ‘সাবধান, মেয়াদোত্তীর্ণ’, ‘লাইসেন্স নেই, দূরত্ব বজায় রাখুন’, ‘সাবধান’। বাদ যায়নি সরকারি কিংবা গণমাধ্যমের গাড়িও। শিক্ষার্থীদের সনদ দেখাতে না পারায় একটি বেসরকারি গণমাধ্যমের গাড়ির সামনে ‘সাংঘাতিক, লাইসেন্স নাই’ এবং সরকারি গাড়িতে ‘সরকারি গাড়ি, লাইসেন্স নেই’ লিখে দেওয়া হয়। মোহাম্মদপুর জোনের ট্রাফিক সার্জেন্ট রিয়াদ মোর্শেদ বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা বাসচালকদের লাইসেন্স ও ফিটনেস সনদ দেখেছেন। আমরা তাদের সহযোগিতা করেছি। কয়েকটি গাড়ির ব্যাপারে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আমরা সব সময়ই চাই যেন সড়কে মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়।’

শিক্ষার্থীদের নয় দফা দাবি : ১. দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে শিক্ষার্থীসহ সব সড়ক হত্যার বিচার করতে হবে এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ২. ঢাকাসহ সারা দেশে সব গণপরিবহনে (সড়ক, নৌ, রেলপথ ও মেট্রোরেল) শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া নিশ্চিত করে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে। ৩. গণপরিবহনে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এবং জনসাধারণের চলাচলের জন্য যথাস্থানে ফুটপাথ, ফুটওভার ব্রিজ বা বিকল্প নিরাপত্তা ব্যবস্থা দ্রুত নিশ্চিত করতে হবে। ৪. সড়ক দুর্ঘটনায় আহত যাত্রী এবং পরিবহন শ্রমিকদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে হবে। ৫. পরিকল্পিত বাস স্টপেজ ও পার্কিং স্পেস নির্মাণ এবং এগুলোর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনে কঠোর আইন প্রয়োগ করতে হবে। ৬. দ্রুত বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এবং যথাযথ তদন্ত সাপেক্ষে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের দায়ভার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা মহলকে নিতে হবে। ৭. বৈধ ও অবৈধ যানবাহন চালকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বৈধতার আওতায় আনতে হবে এবং বিআরটিএর সব কর্মকান্ডের ওপর নজরদারি ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। ৮. আধুনিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে ঢাকাসহ সারা দেশে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা অবিলম্বে স্বয়ংক্রিয় ও আধুনিকায়ন এবং পরিকল্পিত নগরায়ণ নিশ্চিত করতে হবে। ৯. ট্রাফিক আইনের প্রতি জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিষয়টিকে পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে এবং প্রিন্ট-ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান প্রচার করতে হবে।

হাফ পাসে মালিক সমিতির যেসব শর্ত : গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের হাফ পাস কার্যকরের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বাস মালিকরা। এ ক্ষেত্রে কিছু শর্তও নির্ধারণ করে দিয়েছেন। আজ থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। গতকাল সকালে রাজধানীর কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউয়ে শিক্ষার্থীদের হাফ পাসের বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ।

বিআরটিসি বাসে হাফ ভাড়া কার্যকরে দেওয়া শর্তগুলোর মতো বাস মালিক সমিতিও শর্ত আরোপ করেছে। আর এ শর্তগুলো প্রায় একই রকম। ভ্রমণকালে বিআরটিসি বাসের মতোই ব্যক্তিমালিকানাধীন বাসে ছাত্রছাত্রীদের অবশ্যই নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বৈধ পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখতে হবে। প্রয়োজনে তা প্রদর্শন করতে হবে। বিআরটিসি বাসে চলাচলের ক্ষেত্রে সকাল ৭টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা হাফ ভাড়ার সুবিধা পাবেন। তবে ব্যক্তিমালিকানাধীন বাসে এ সুবিধা শুরু হবে সকাল ৮টায়, চলবে রাত ৮টা পর্যন্ত। এ ছাড়া ছুটির দিন হাফ ভাড়া কার্যকর হবে না। হাফ ভাড়া শুধু ঢাকায় সীমাবদ্ধ, অন্যান্য জেলার জন্য নয় বলে জানিয়েছেন এনায়েত উল্যাহ।

সর্বশেষ খবর