বুধবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

বিবস্ত্র করে নির্যাতনে ১৩ জনের ১০ বছর করে জেল

নোয়াখালী প্রতিনিধি

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুরের চাঞ্চল্যকর এক নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন মামলার রায়ে ১৩ জনের ১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড এবং একই সঙ্গে ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড ও অনাদায়ে তিন মাসের কারাদণ্ডের রায় দিয়েছে বিজ্ঞ আদালত। নোয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ আদালতের বিচারক জয়নাল আবেদীন দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে ওই নয় আসামির উপস্থিতিতে এ রায় ঘোষণা করেন। এর মধ্যে চার আসামি পলাতক ছিলেন। চাঞ্চল্যকর এ মামলার রায় শুনতে মামলার বাদী ভুক্তভোগী সেই নারী, মানবাধিকার ও নারী অধিকার সংগঠনের নেতারা এবং আসামিদের স্বজনরাও আদালতে উপস্থিত ছিলেন। এদিকে মামলার রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বাদীর আইনজীবী ও রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবী, তবে অসন্তোষ প্রকাশ করেন আসামির আইনজীবীরা।  তারা উচ্চ আদালতে যাবেন বলে জানান।

এ মামলায় সন্তোষ প্রকাশ করে বাদী (ভিকটিম) আরও বলেন, ‘আসামিদের অপরাধের তুলনায় এ সাজা কম হয়েছে। তারা কোনোভাবে কারাগার থেকে ছাড়া পেলে আমার এবং পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা হুমকিতে পড়বে। তারা আমাকে যেভাবে নির্যাতন করেছে তা দেশের বেশিরভাগ মানুষ দেখেছে। আর যাতে কোনো নারী আমার মতো এমন নির্যাতনের শিকার না হয় এ জন্য তাদের ফাঁসি হওয়া দরকার ছিল। তারা উচ্চ আদালত থেকে জামিনে বের হয়ে আসলে আমাকে এবং আমার পরিবারের কাউকে বাঁচতে দেবে না। আমার একটাই চাওয়া তারা যেন কোনোভাবেই বের হতে না পারে’। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মামুনুর রশীদ লাভলু জানান, গতকাল জেলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক জয়নাল আবেদীন এ রায় ঘোষণা করেন। এ সময় আসামিদের প্রত্যেকের ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন বিচারক। রায় ঘোষণার সময় জেলহাজতে থাকা ৯ আসামি নূর হোসেন বাদল, আবদুর রহিম, আবুল কালাম, ইসরাফিল হোসেন মিয়া, মাঈন উদ্দিন সাজু, সামছুদ্দিন সুমন, নূর হোসেন রাসেল, আনোয়ার হোসেন সোহাগ ও দেলোয়ার হোসেন দেলু আদালতে উপস্থিত ছিলেন। পলাতক অপর চার আসামি হলেন- আবদুর রব চৌধুরী, মোস্তাফিজুর রহমান, জামাল উদ্দিন ও মিজানুর রহমান তারেক। সকাল ১০টায় ৯ আসামিকে কড়া পুলিশ পাহারায় প্রিজন ভ্যানে করে আদালতে আনা হয়। দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে বিচারক ৬৫ পৃষ্ঠার রায় পড়ে শোনান। এ সময় বিচারক ঘটনার বীভৎসতা বিবেচনায় আসামিদের আরও কঠিন সাজা প্রয়োজন থাকলেও আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ সাজা দেওয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেন।

রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবী (পিপি) মামুনুর রশীদ লাভলু আরও জানান, চাঞ্চল্যকর এ মামলায় ১৪ আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। পরে আদালত স্থানীয় ইউপি সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন সোহাগকে অব্যাহতি দিয়ে বিচারের জন্য ১৩ আসামির নামে অভিযোগ গঠন করে। এর মধ্যে নয়জন জেলহাজতে রয়েছে এবং চারজন পলাতক। গত এক বছরে বিচারক মামলার বাদীসহ ৪০ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। সাক্ষ্য গ্রহণসহ মামলার সব কার্যক্রম শেষ হওয়ায় মঙ্গলবার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। বাদীর পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট মোল্লা হাবিবুর রসুল মামুন ও আসামি পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট আবদুল কাইয়ুম দিদার।

উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ২ সেপ্টেম্বর স্থানীয় দেলোয়ার বাহিনীর সদস্যরা বসতঘরে ঢুকে ওই নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন করে। এ ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে এবং পর্নোগ্রাফি আইনে পৃথক দুটি মামলা করেন ভুক্তভোগী নারী।

সর্বশেষ খবর