রবিবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

কর্মীদের সঙ্গে দিন কাটল আইভীর, মরে গেলেও মাঠ না ছাড়ার ঘোষণা তৈমূরের

রোমান চৌধুরী সুমন, নারায়ণগঞ্জ

আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণায় নিষেধ থাকায় সারা দিন শহরের পশ্চিম দেওভোগের নিজ বাস ভবন চুনকা কুটিরে নেতা-কর্মী ও এজেন্টদের সঙ্গে ব্যস্ত সময় পার করেছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। এ সময় বাড়িতে আসা নেতা-কর্মী, সমর্থকদের সঙ্গে ভোটের দিনের কর্মপরিকল্পনা ঠিক করতে একাধিক বৈঠকও করেছেন তিনি। বাড়িতে আসা শুভাকাক্সক্ষীদের সঙ্গে কুশল বিনিময়ও করেছেন আইভী।

অন্যদিকে সদ্য অব্যাহতিপ্রাপ্ত বিএনপি নেতা স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকার দিনভর ব্যস্ত ছিলেন নেতা-কর্মীদের ধরপাকড় ঠেকানো নিয়ে। এ নিয়ে গতকাল দুই দফায় সংবাদ সম্মেলন করেছেন তৈমূর। প্রথম দফায় সকাল ১০টায় শহরের মাসদাইর এলাকায় নিজ বাসভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার-তল্লাশির চিত্র তুলে ধরে তৈমূর বলেন, ‘মরে গেলেও মাঠ ছাড়ব না।’ বেলা ১২টার দিকে সরেজমিন আইভীর চুনকা কুটিরে গিয়ে দেখা যায়, মিডিয়া কর্মীরা ভিড় করেছেন। বাড়ির বাইরে কর্মী-সমর্থকরা গল্প-গুজব জমিয়েছেন। কেউ কেউ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করছেন। অনেকে আলাপ করছিলেন কে কোন এলাকার এজেন্ট থাকছেন। ভোটের দিনের অন্যান্য কর্মকান্ড নিয়েও তারা নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করছিলেন। বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী জানান, প্রতিবেশী থেকে শুরু করে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা একের পর এক বাড়িতে প্রবেশ করছেন। এ ছাড়া ভোট কেন্দ্রে নৌকার পোলিং এজেন্টরা কে কোন কেন্দ্রে দায়িত্ব পেয়েছেন তা বণ্টন করে দেওয়ার বিষয়ে আইভীর সঙ্গে নানা আলোচনা করে বের হচ্ছেন। চুনকা কুটির থেকে বের হয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সমর্থক জানান, প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী সবার সঙ্গে কুশল বিনিময় করছেন। বন্দর ও সিদ্ধিরগঞ্জ শহরে তার ভোটের অবস্থান বা সমীকরণ নিয়ে কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে আলোচনা করেন তিনি। কর্মী-সমর্থকরা ভোট ও জয়ের বিষয়ে আইভীকে আশ্বস্ত করেন। ওই সময় কেন্দ্রে কেন্দ্রে থাকা পোলিং এজেন্টদের সমন্বয় বা অন্য কোনো সমস্যা দেখা দিলে যেন তাৎক্ষণিক তথ্য পাওয়া যায় সে বিষয়ে বেশ কয়েকজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

মরে গেলেও মাঠ না ছাড়ার ঘোষণা তৈমূরের : নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকার বলেছেন, ‘আমি প্রচার না সংবাদ সম্মেলন করছি। আমি ভোট চাইনি। আমার ঘরে আগুন লাগিয়ে দিলে আমি কি বলব না। আমার লোকজন গ্রেফতার হচ্ছে। আমার গলায় আপনি ফাঁসি লাগিয়ে দেবেন কিন্তু আমি কথা বলতে পারব না তা তো হবে না। এটা নৈতিক দায়িত্ব। মানুষের ওপর যত অত্যাচার হয় ভোটাররা তত ঐক্যবদ্ধ হন। লক্ষাধিক ভোটের ব্যবধানে পাস করব ইনশা আল্লাহ। মরে গেলেও মাঠ ছাড়ব না। প্রশাসনকে বলব, জনগণের সেবা করা আপনাদের দায়িত্ব। বহুবার রিকোয়েস্ট করেছি। এখন আপনাদের বিবেকের কাছে ছেড়ে দিলাম। ভোট যা-ই হোক আমরা মাঠে থাকব। গ্রেফতার হলে হব কিন্তু নির্বাচন চালিয়ে যাব।’ গতকাল সকাল ১০টায় নিজ বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তৈমূর।

তিনি বলেন, ‘মহানগর শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক ঈদগাহের সামনে থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আরও চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের বেশির ভাগই আমার দলের গুরুত্বপূর্ণ পদের নেতা। এ পর্যন্ত আমার শতাধিক নেতা-কর্মীর বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়েছে। এমনকি সরকারি দলের সদস্যদেরও হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে। পাঠানটুলি এলাকার একটা ছেলে আহসান সেই এলাকায় আমার নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করেছিল। তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমি এখনো তার খোঁজ পাইনি।’ এরপর বিকালে আরেকটি সংবাদ সম্মেলনে তৈমূর বলেন, ‘যাদের কাছে আমাদের অভিযোগ করার কথা তারাই নির্বাচনকে কলুষিত করছে এবং সুষ্ঠু পরিবেশে বাধা সৃষ্টি করছে। আমার বাসার সিসিটিভি ফুটেজ চেক করেন এবং যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের দেখেন। দেখবেন তাদের বেছে বেছে গ্রেফতার করা হয়েছে। আদালত থেকে আমি কাগজ নিয়ে এসেছি। গত বছরের হেফাজতের মামলায় তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। এখন দেখা যায় ছাত্রলীগও হেফাজতের মামলার আসামি, হিন্দুও হেফাজতের মামলার আসামি। মানে হিন্দুরাও হেফাজত করেন।’ তৈমূর বলেন, ‘যারা আমার নির্বাচনের নানা কাজের দায়িত্বে আছেন তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে ডিসি-এসপি সাহেব বলেন, আমি অভিযোগ করিনি। এখানে সই করা কাগজ আছে আমার কাছে।’

সর্বশেষ খবর