শুক্রবার, ১ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা
ইমরান খানের প্রতি অনাস্থা ভোট রবিবার

কী ঘটতে যাচ্ছে পাকিস্তানে?

প্রতিদিন ডেস্ক

কী ঘটতে যাচ্ছে পাকিস্তানে?

পাকিস্তানের রাজনীতি হঠাৎ করেই টলটলায়মান হয়ে উঠেছে। এরই মধ্যে ইমরান খান সরকারের পতন ঘটাতে বিরোধী দলগুলোই শুধু একজোট হয়নি, ক্ষমতাসীন জোট থেকেও গুরুত্বপূর্ণ দল বিরোধীদের পক্ষে যোগ দিয়েছে। এ অবস্থায় আগামী ৩ এপ্রিল হতে যাচ্ছে পাকিস্তানের পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোট। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত, ভোটের পাল্লা বিরোধীদের পক্ষেই রয়েছে। যার অর্থ- ইমরান খান সরকারের পতন এবং নতুন কোনো পক্ষের ক্ষমতায় আরোহণের প্রেক্ষাপট তৈরি হওয়া। সূত্র : বিবিসি, এএফপি।

প্রসঙ্গত, ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে কার্যত রাশিয়ার পক্ষাবলম্বন করার পরই ইমরান খানের বিরুদ্ধে হঠাৎ করে বিরোধীদের রাজনৈতিক তৎপরতা চাঙা হয়ে ওঠে। এ ব্যাপারে ইমরান খান অনেকটা স্পষ্টভাবেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ইঙ্গিত করে প্রচার চালাচ্ছেন যে, তার সরকারের পতন ঘটাতে বিদেশি শক্তি মোটা অঙ্কের মিশন নিয়ে পাকিস্তানের মাঠে নেমেছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্র ইমরানের অভিযোগকে ডাহা মিথ্যা বলে উড়িয়ে দিয়েছে। এদিকে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ইমরান খান এখন শুধু রাজনৈতিকভাবে পতনের মুখেই পড়েননি, তাঁর জীবননাশের চেষ্টা হচ্ছে বলেও আলামত পাওয়া গেছে। ইমরানের পতন ঘটলে ফের নওয়াজ শরীফের রাজনৈতিক দলসহ তাদের জোট ক্ষমতায় আসবে, না আবারও সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখল করবে- তা নিয়ে জোর জল্পনা-কল্পনা রয়েছে। সর্বশেষ প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, অনাস্থা ভোটে হেরে যাওয়া নিশ্চিত জেনে ইমরান খান জরুরি অবস্থা জারি করে পদত্যাগ করবেন বলে ধারণা করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি তা করেননি। এ বিষয়ে গত বুধবার (৩০ মার্চ) তাঁর জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার বিষয়ও ঠিক ছিল। এ ছাড়া তার সামনে কোনো বিকল্প ছিল না বলেও পর্যবেক্ষকরা মনে করছিলেন। কিন্তু তার আগেরদিন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান এবং আইএসআই প্রধান ইমরান খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এরপরই ক্ষমতাসীন দল তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)-এর সিনেপর ফয়সাল জাভেদ এক টুইট বার্তায় নিশ্চিত করেন, ইমরান খান বুধবারের ভাষণ বাতিল করেছেন। এই সিদ্ধান্তে রীতিমতো চমক তৈরি করে। কারণ বিশেষ কোনো আশ্বাস না পেলে এমন সিদ্ধান্ত আসতে পারে না। এতে করে এ ধারণাও করা হচ্ছে, তাহলে কি ইমরান খান নিজের ক্ষমতাকে রক্ষা করার কোনো উপায় বের করে ফেলেছেন? প্রসঙ্গত, কাগজে কলমে পাকিস্তানের ৩৪২ আসনের পার্লামেন্টে পিটিআই এবং জোটসঙ্গীদের আসন রয়েছে ১৭৬টি। আর বিরোধীদের আসন রয়েছে ১৬৩টি। তবে মঙ্গলবার (২৯ মার্চ) জোটসঙ্গী মোত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট (এমকিউএম) জানিয়ে দেয়, তাদের সাত সংসদ সদস্য বিরোধীদের প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেবেন। এ অবস্থায় এখন ইমরান খানের ঝুলিতে রয়েছে মাত্র ১৬৪টি আসন। তাকে আস্থা ভোটে জিততে হলে দরকার ১৭২টি ভোট। কিন্তু সেখানে এখন বিরোধীদের রয়েছে ১৭৬টি ভোট। খবরে বলা হচ্ছে, নাটকীয়তার মধ্যেই কোনো কারণ দর্শানো ছাড়াই জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করেন ইমরান খান। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে সবসময়ই অভিযোগ ছিল যে, তিনি সেনাবাহিনীর সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় এসেছেন। কিন্তু পাকিস্তানের বর্তমান সংসদীয় সমীকরণ বলছে, এই দফায় ইমরান খান বড় ধরনের পরাজয়ের সম্মুখীন হবেন- এমনকি তার নিজের দলের ভিতরের ভিন্ন মতাবলম্বীরা ভোটাভুটিতে অংশগ্রহণ না করলেও। সেই অবস্থাকে তিনি হঠাৎ পাত্তা না দেওয়ায় নানা জল্পনাকল্পনা শুরু হয়েছে। তাহলে কি সেনাবাহিনী তাঁকে বিশেষ কোনো ‘ইঙ্গিত’ দিয়েছে, যাতে করে তিনি অনাস্থা ভোটে হেরে না যাওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন? এদিকে ইমরান সরকার সুপ্রিম কোর্টে একটি রুলের জন্য আবেদন করেছে। যাতে বলা হয়েছে, দল ও জোট থেকে বিদ্রোহ করলে যেন তাদের শুধু ভোট দেওয়া থেকেই বিরত রাখা নয়, সংসদ থেকেও আজীবন নিষিদ্ধ করা হয়। আদালত এমন নির্দেশ দিলে সত্যি সত্যিই পরিস্থিতি পাল্টে যেতে পারে। এদিকে এই পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী এবং তার মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা মিত্রদের সঙ্গে ঘন ঘন বৈঠক করছেন। তারা প্রচার করছেন, তারা ভোটে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। পাকিস্তানের রাজনৈতিক বিশ্লেষক উজাইর ইউনিস মনে করছেন, ইমরান খান তার মিত্রদের সঙ্গে সমঝোতায় ব্যর্থ হওয়ার পরেও এখন যদি ‘আশ্চর্যজনকভাবে পরিস্থিতি উতরে যান’- তবুও তিনি যথেষ্ট অনিশ্চিত পরিস্থিতির মধ্যেই থাকবেন। উজাইর ইউনিস বলেন, ‘আমার মনে হয় নির্ধারিত সময়ের আগে নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে তাকে। কোনোভাবে এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করে যদি তিনি ক্ষমতায় টিকেও যান, তাহলে যতদিন তিনি ক্ষমতায় থাকবেন, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি উন্নয়নের জন্য তার ওপর আরও বেশি চাপ আসবে।’ বিশ্লেষক আবদুল বাসিতও মনে করেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে কোনোভাবে ইমরান খান ক্ষমতায় টিকে গেলেও পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে তাকে নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আর দুর্নীতি রোধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০১৮ সালের জুলাইয়ে ক্ষমতায় আসা ইমরান খান অবশ্য সহজে নিজের অবস্থান ছাড়ছেন না। তিনি এখনো কতটা জনপ্রিয়, তার প্রমাণ হিসেবে গত রবিবার ইসলামাবাদে বিশাল এক র‌্যালির আয়োজন করেন। ওই র‌্যালিতে ইমরান খান তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী তিন বারের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর স্বামী আসিফ জারদারির দিকে ইঙ্গিত করে সমবেত মানুষের প্রতি একটি চিঠি প্রদর্শন করেন, যেটিতে ‘দুর্নীতিগ্রস্ত চোর’দের সহায়তায় বিদেশি চক্রান্তের মাধ্যমে তার সরকার উৎখাতের চেষ্টার প্রমাণ রয়েছে বলে দাবি করেন। তবে ওই চিঠিতে ঠিক কী রয়েছে- সেটি খোলাসা করেননি তিনি। খবরে আরও বলা হয়, ইমরান খান একটা ‘গোপন চিঠি’ পকেটে নিয়ে ঘুরছেন। তার দাবি, এই চিঠিতে বিদেশি ষড়যন্ত্রের প্রমাণ আছে। মন্ত্রিপরিষদকে এরই মধ্যে চিঠিটি তিনি দেখিয়েছেন। পার্লামেন্টেও ক্যামেরা সেশনে সেই ‘গোপন চিঠি’ দেখানোর কথা রয়েছে। ইমরানের দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ওই চিঠিতে বিদেশি ষড়যন্ত্রের পরিষ্কার প্রমাণ রয়েছে। সঙ্গে ইমরানের সরকারকেও হুমকি দেওয়া হয়েছে। ইমরান খান পার্লামেন্টে বলেছেন, ‘বিদেশ থেকে ফোন কল দিয়ে একদল লোক পাকিস্তানে হামলা চালিয়ে তাকে হত্যা করতে চাইছে। তারা মানুষের জন্য কাজ করা সরকারকে সহ্য করতে পারছে না। এখানে যা হচ্ছে, সেটা হলো পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিদেশ থেকে আমদানি করা সংকট। আমি এবার শরিক দলগুলোকে ওই নথি (চিঠি) দেখাব। সিনিয়র সাংবাদিকদেরও দেখাব।’ তবে তিনি ষড়যন্ত্রকারী কোনো দেশের নাম উল্লেখ করেননি। অবশ্য অনেকেই বলছেন, ষড়যন্ত্রকারী দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রকেই বোঝানো হচ্ছে। কারণ ইউক্রেন অভিযানের মধ্যে ইমরানের রাশিয়া যাওয়ার বিষয়টি ভালোভাবে নিতে পারেনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন। এ বিষয়ে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ‘জিও নিউজ’-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের শাসকদল তেহরিক-ই-ইনসাফের বর্ষীয়ান নেতা ফয়জল ভাওদার দাবি করেছেন, ‘ইমরান খানকে খুন করার চেষ্টা চলছে।’ এ খবর প্রকাশ্যে আসতেই রীতিমতো চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর