শুক্রবার, ১০ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

ঘাটতি নিয়েই অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের বাজেট

ব্যবসা-বাণিজ্য বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান কৃষি চাঙা করা, সরকারের উন্নয়ন অভিযাত্রা অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার, কমছে করপোরেট কর

মানিক মুনতাসির

ঘাটতি নিয়েই অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের বাজেট

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গতকাল বাজেট উপস্থাপনের জন্য সংসদের অধিবেশন কক্ষে প্রবেশ করেন -পিআইডি

চরম এক বৈরী প্রেক্ষাপটে সামষ্টিক অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা আনার চ্যালেঞ্জ নিয়ে নতুন ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য বাজেট ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এবারই প্রথম পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছিলেন বেশ আগেই। বাজেটে একে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এতে স্থানীয় বিনিয়োগ বাড়বে এবং ডলারের বাজারে চাপ কিছুটা কমবে বলে মনে করে সরকার। ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারে করপোরেট করহার কমানো এবং বিনিয়োগ-কর্মসংস্থান, দেশি শিল্পের বিকাশ ও কৃষিজ উৎপাদনকে  প্রাধান্য দিয়ে গতকাল জাতীয় সংসদে এ বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটের মোট আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। ডলারের সংকট এড়াতে বিলাসী পণ্যের ওপর ভ্যাট ও শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে পাচারের অর্থ ফেরত আনার ঘোষণা ছাড়া তেমন কোনো চমক নেই প্রস্তাবিত বাজেটে। রয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন অভিযাত্রা অব্যাহত রাখার ঘোষণা। আবার টেকসই অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বিশাল আকারের এ বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছর ৭ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি অর্জিত হবে এবং মূল্যস্ফীতির চাপ ৫ দশমিক ৬ শতাংশে ধরে রাখার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। রীতি অনুযায়ী আজ বেলা ৩টায় অর্থমন্ত্রীর বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলন হবে রাজধানীর ওসমানী স্মৃৃতি মিলনায়তনে। গতকাল দুপুর ১২টায় জাতীয় সংসদ ভবনের মন্ত্রিসভা কক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠকে বাজেটের অনুমোদন দেওয়া হয়। নিয়ম অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এতে স্বাক্ষর করেন। এরপর বেলা ৩টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন শুরু করেন অর্থমন্ত্রী। এটি দেশের ৫২তম বাজেট। তবে পূর্ণাঙ্গ হিসেবে ধরা হলে ৫১তম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদে এটি চতুর্থ বাজেট। স্পিকারের অনুমতিক্রমে অধিবেশনের শুরুতে আধঘণ্টার একটি ডকুমেন্টারি উপস্থাপন করা হয়। সেখানে স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত দেশ ও জাতি গঠনে আওয়ামী লীগের প্রায় সব অর্জন সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরা হয়েছে। এরপর অর্থমন্ত্রীর পূর্ণাঙ্গ বাজেট প্রস্তাব পঠিত বলে গণ্য করা হয়। রাষ্ট্রপতি তাঁর নিজস্ব গ্যালারি থেকে অধিবেশন প্রত্যক্ষ করেন। এ সময় জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদের ও সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এ বছরের বাজেটে স্লোগান দেওয়া হয়েছে ‘কভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন’। শুরুতেই প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করে অর্থমন্ত্রী এক ফিনিক্স পাখির গল্প দিয়ে শুরু করেন বাজেট বক্তৃতা। বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী কভিড-১৯ ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে উদ্ভূত অর্থনৈতিক প্রভাব মোকাবিলা করে দেশের সর্বস্তরের মানুষের জীবন-জীবিকা এবং সর্বোপরি ব্যাপক কর্মসৃজন ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এনে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখার ওপর প্রাধান্য দিয়েছেন। প্রস্তাবিত ২০২২-২৩ অর্থবছরে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে অভ্যন্তরীণ বাজারে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা প্রধান চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী। এজন্য বিদ্যমান চাহিদার প্রবৃদ্ধি কমিয়ে সরবরাহ বাড়ানোর কৌশল নেওয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি। আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৬ শতাংশে আটকে রাখার কথা জানান অর্থমন্ত্রী। তিনি জানান, রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত ও বিশ্বব্যাপী সরবরাহ শৃঙ্খল ব্যাহত হওয়ার কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ার প্রেক্ষাপটে দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে স্বল্পমূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিতরণে ‘ফ্যামিলি কার্ড’ কর্মসূচি চালু করা হয়েছে। এতে ১ কোটি পরিবার টিসিবির ‘ফ্যামিলি কার্ড’ সহায়তা পাবে।

অন্যদিকে সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী খাতে ১ লাখ ১৩ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী, যা বাজেটের ১৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং জিডিপির ২ দশমিক ৫৫ শতাংশ। করোনার অভিঘাত মোকাবিলা অব্যাহত রাখার কথা জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। অর্থনৈতিক ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় চলতি অর্থবছরের মতো আগামী অর্থবছরও ৫ হাজার কোটি টাকা রাখা হয়েছে। খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নানা ধরনের কর্মসূচির কথা জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, কৃষি যান্ত্রিকীকরণ, কৃষি সহায়তা কার্যক্রম, কৃষিতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে উৎপাদন বাড়ানো হবে। করোনা মোকাবিলায় ৫ হাজার কোটি টাকা রাখার প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি। মহামারির ক্ষতি পুষিয়ে নিতে শিক্ষা খাতে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়ার কথা উল্লেখ করে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা খাতে ৩৯ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৪৮৭ কোটি টাকা। এ খাতের আওতায় প্রতিবন্ধী ভাতা ১০০ টাকা বাড়িয়ে ৮৫০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া এ খাতের উপকারভোগী ২০ লাখ ৮০ হাজার প্রতিবন্ধী থেকে বাড়িয়ে ২৩ লাখ ৬৫ হাজারে উন্নীত করা হয়েছে। বেসরকারি খাতের অসংখ্যা চাকরিজীবী ও সব শ্রেণির মানুষের কল্যাণের কথা মাথায় রেখে বহুল প্রত্যাশিত সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালুর ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।

মানবসম্পদ উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতেও নজর দিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, দেশের সব অংশে কর্মসংস্থানের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করতে ১০০ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করছে সরকার, যেখানে ১ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হবে। প্রবাসী আয় বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখতে আগামী অর্থবছরও ২ দশমকি ৫ শতাংশ নগদ প্রণোদনা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, দেশে শিল্প ও বাণিজ্য সহায়ক পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকার। এর মধ্যে পদ্মা সেতু অন্যতম, যা আগামী ২৫ জুন উদ্বোধন করা হবে। এতে রাজধানীর সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলে যোগাযোগব্যবস্থায় এক অভূতপূর্ব উন্নতি সাধিত হবে। পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে ৮১ হাজার ৫১৮ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৭২ হাজার ২৯ কোটি টাকা। অর্থমন্ত্রী তাঁর বাজেট বক্তৃতায় উল্লেখ করেন, ব্যক্তি-শ্রেণির করদাতাদের জন্য করমুক্ত আয়ের সীমা ক্রমান্বয়ে বাড়িয়ে ২০২০-২১ অর্থবছরে ৩ লাখ টাকায় উন্নীত করা হয়। পরবর্তী অর্থবছরও ওই সীমা বহাল রাখা হয়। নারী করদাতা, সিনিয়র করদাতা, প্রতিবন্ধী করদাতা, তৃতীয় লিঙ্গ ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য করমুক্ত আয়ের এ সীমা আরও বেশি। ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটেও এটাই বহাল রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। ২০০৯-১০ অর্থবছরে স্টক মার্কেটে নন-লিস্টেড কোম্পানির করহার ছিল ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ, যা ক্রমান্বয়ে কমিয়ে ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩০ শতাংশ করা হয়েছে। এ ছাড়া অনুসৃত করনীতির আলোকে ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত স্টক মার্কেটে লিস্টেড কোম্পানি এবং ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের করহার ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ ও ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে যথাক্রমে ২২ দশমিক ৫ শতাংশ ও ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ করা হয়েছে। সরকারের এ যুগোপযোগী করনীতির ফলে করদাতাদের মধ্যে যেমন কর পরিপালনে আগ্রহ তৈরি হয়েছে, তেমনি দেশে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের পরিমাণও বেড়েছে। বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী উল্লেখ করেন, ‘২০২১ সালের অর্থ আইনে করপোরেট করহার ৩২ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশে কমিয়ে আনা হয়। ২০২২-২৩ অর্থবছরে করপোরেট করহার আরও কমানোর প্রস্তাব করছি। এ ক্ষেত্রে সব ধরনের প্রাপ্তি ও আয় অবশ্যই ব্যাংক স্থানান্তরের মাধ্যমে গৃহীত হতে হবে এবং ১২ লাখ টাকার অতিরিক্ত ব্যয় ও বিনিয়োগ অবশ্যই ব্যাংক স্থানান্তরের মাধ্যমে সম্পাদন করতে হবে এ শর্তে আমি নন-লিস্টেড কোম্পানির করহার ৩০ শতাংশ থেকে ২৭ দশমিক ৫ শতাংশে হ্রাসের প্রস্তাব করছি। এ ছাড়া অর্থনীতির অধিকতর আনুষ্ঠানিকীকরণ এবং এক ব্যক্তি কোম্পানির (OPC) প্রতিষ্ঠা উৎসাহিত করার লক্ষ্যে এক ব্যক্তি কোম্পানির করহার ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২২ দশমিক ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করছি। পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ও পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে পরিশোধিত মূলধনের ১০ শতাংশের অধিক শেয়ারের IPO (Initial Public Offering) মাধ্যমে হস্তান্তর হলে তালিকাভুক্ত কোম্পানির জন্য করহার ২২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করার প্রস্তাব করছি। তবে এ ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ বা এর কম শেয়ার আইপিওর মাধ্যমে হস্তান্তরকারী লিস্টেড কোম্পানির করহার ২২ দশমিক ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করছি। এ ছাড়া পূর্বোক্ত শর্ত পরিপালনে ব্যর্থতায় তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার ২২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে ২৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করছি।’

বাজেট পরিসংখ্যান : আগামী অর্থবছরের বাজেটে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৭৪ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা বেশি। মোট আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৪৪ হাজার কোটি টাকা বেশি। বাজেটে পরিচালন বা আবর্তক ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৭৩ হাজার ২৪২ কোটি টাকা। উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৫৯ হাজার ৬১৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) ২ লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা।

বাজেটের আয় : বাজেটের মোট আয় ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। বরাবরের মতো প্রধান আয়ের খাত হিসেবে এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৪০ হাজার কোটি টাকা বেশি। এনবিআর-বহির্ভূত রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ১৮ হাজার কোটি টাকা। রাজস্ববহির্ভূত আয় ধরা হয়েছে ৪৫ হাজার কোটি টাকা।

ঘাটতি অর্থায়ন : প্রস্তাবিত ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। আর চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৩০ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা বেশি। বাজেটে প্রয়োজনীয় অর্থ সংস্থানের জন্য বৈদেশিক উৎস থেকে (অনুদানসহ) পাওয়া যাবে ১ লাখ ১২ হাজার ৪৫৮ কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে নেওয়া হবে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংক খাত থেকে ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। ব্যাংকবহির্ভূত ঋণ ৪০ হাজার ১ কোটি ও সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। অন্যান্য খাত থেকে নেওয়া হবে ৫ হাজার ১ কোটি টাকা।

জিডিপির আকার : আগামী অর্থবছরের জন্য জিডিপির আকার প্রাক্কলন করা হয়েছে ৪৪ লাখ ৪৯ হাজার ৯৫৯ কোটি টাকা। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে মোট জিডিপির আকার ধরা হয়েছে ৩৬ লাখ ৭৬ হাজার ৪৬২ কোটি টাকা।

সম্পূরক বাজেট : চলতি অর্থবছর বাজেটের আকার ৬ লাখ ৩ হাজার কোটি টাকা। সংশোধন করে তা কমিয়ে ৫ লাখ ৯৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা করা হয়েছে। তবে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা কমানো হয়নি। ঘাটতি অর্থায়ন ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৮২ কোটি থেকে কমিয়ে ২ লাখ ৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা করা হয়েছে, যা জিডিপির ৫ দশমকি ১ শতাংশ। মূল বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ২ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে অবশ্য সরকার অনেকটাই সফলতার পরিচয় দিয়েছে।

আড়াই ঘণ্টার সংক্ষিপ্ত অধিবেশন : স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবং সব এমপিকে নিয়ে দুই বছর পর এবার সংসদে ডিজিটাল পদ্ধতিতে বর্তমান সরকারের চতুর্থ বাজেট উপস্থাপন করলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। অর্থমন্ত্রীর সংক্ষিপ্ত বাজেট বক্তৃতার পর ডিজিটাল উপস্থাপনা শুরু হয়। এরপর সংক্ষিপ্ত বক্তৃতার মাধ্যমে বাজেট উপস্থাপন শেষ করেন অর্থমন্ত্রী। লিখিত বাজেট বক্তৃতা ছিল ২০৮ পৃষ্ঠার। অপঠিত বক্তব্য সংসদে উপস্থাপিত বলে গণ্য করার ঘোষণা দেন স্পিকার। অর্থমন্ত্রী বাজেট উপস্থাপনের পর অর্থবিল-২০২২ পেশ করেন। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সংসদে উপস্থিত থেকে সোয়া দুই ঘণ্টা স্থায়ী বাজেট পেশ প্রত্যক্ষ করেন।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে একাদশ জাতীয় সংসদের ১৮তম অধিবেশনের গতকালের বৈঠক বেলা ৩টায় শুরু হয়ে শেষ হয় বিকাল সোয়া ৫টায়। বৈঠকে সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারি ও বিরোধী দলের এমপিরা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া অধিবেশন শুরুর আগে প্রস্তাবিত বাজেটে অনুমোদন স্বাক্ষর করেন তিনি। এর আগে দুপুরে জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠকে নতুন বাজেট অনুমোদন করা হয়। দুই বছর পর এবার গ্যালারিতে বসে সাংবাদিকরা অধিবেশন কভার করেন। আগামী সোমবার ১২ জুন চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেট সম্পর্কে সাধারণ আলোচনা হবে। ১৩ জুন সম্পূরক বাজেটে অন্তর্ভুক্ত দায়যুক্ত ব্যয়ের ওপর আলোচনা এবং নির্দিষ্টকরণ (সম্পূরক) বিল, ২০২২ উত্থাপন ও পাস করা হবে। ২৯ জুন অর্থবিল, ২০২২ পাস এবং ৩০ জুন নির্দিষ্টকরণ বিল, ২০২২ উত্থাপন ও পাস করা হবে। এবারও বাজেট পেশের দিনটিতে সংসদ ভবন জুড়ে আগের মতো উৎসবের আমেজের পরিবেশ ফিরে আসেনি। করোনা পরিস্থিতির কারণে গত দুই বছর ছিল একেবারেই ভিন্ন চিত্র। এবার কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট দেখিয়ে সংসদ ভবনে প্রবেশ করতে হয়েছে। এ সময় এমপিসহ সংশ্লিষ্ট সবার তাপমাত্রা মাপা হয়। প্রতি বছরই বাজেট উপস্থাপনের দিন বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা উপস্থিত থাকলেও এবার কাউকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। সংসদ সচিবালয় জানিয়েছে, একই সতর্কতা মেনে আগামী রবিবার বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনা শুরু হবে। প্রতিদিন বিকাল ৫টা থেকে চলবে আলোচনা।

দাম বাড়বে

দাম কমবে

সর্বশেষ খবর