শুক্রবার, ১০ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

শিক্ষা-কৃষিতে রেকর্ড, স্বাস্থ্যেও কম নয়

তিন খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির প্রস্তাব ২৩ হাজার কোটি টাকা

উবায়দুল্লাহ বাদল

চলতি অর্থবছরের (২০২১-২২) তুলনায় আগামী অর্থবছরে (২০২২-২৩) শিক্ষা, কৃষি, স্বাস্থ্য গুরুত্বপূর্ণ এ তিন খাতে ২২ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে শিক্ষায় ৯ হাজার ৪৯৫ কোটি, কৃষিতে (কৃষি, খাদ্য এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ) ৯ হাজার ৩৫৩ কোটি এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জন্য ৪ হাজার ১৩২ কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। গতকাল জাতীয় সংসদে বাজেট বক্তৃতায় এসব খাতের বরাদ্দ বৃদ্ধির প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হওয়া অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবার প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আসন্ন বাজেটে শিক্ষা ও কৃষিতে রেকর্ড পরিমাণ বরাদ্দ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। করোনা মহামারি-পরবর্তী পরিস্থিতি ঠেকাতে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর প্রস্তাবও অযৌক্তিক নয়। শিক্ষা খাতের বাজেট পর্যালোচনায় দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের তুলনায় আগামী অর্থবছরে (২০২২-২৩) মোট ৯ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকা বেশি বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ দুই মন্ত্রণালয়ের জন্য আসন্ন অর্থবছরে মোট ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। যা চলতি অর্থবছরে ছিল ৭১ হাজার ৯৫৪ কোটি টাকা। বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য এবার ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। যা চলতি অর্থবছরে ছিল ২৬ হাজার ৩১৪ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। যা এ বছর ছিল ৩৬ হাজার ৪৮৭ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। যা চলতি অর্থবছরে ছিল ৯ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা।’ একইভাবে কৃষি ক্ষেত্রে (কৃষি, খাদ্য এবং মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ) সার্বিক উন্নয়নে (২০২২-২৩) অর্থবছরের জন্য ৩৩ হাজার ৬৯৮ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। যা চলতি অর্থবছরে ২৪ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকা ছিল। বরাদ্দ বেড়েছে ৯ হাজার ৩৫৩ কোটি টাকা। অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সবার জন্য নিরাপদ, পর্যাপ্ত ও মানসম্মত প্রাণিজ আমিষ নিশ্চিতকরণ সরকারের একটি অন্যতম লক্ষ্য। বাংলাদেশ মাছ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে সক্ষম হয়েছে। সরকারের মৎস্যবান্ধব কর্মসূচি বাস্তবায়ন এবং চাষি ও উদ্যোক্তা পর্যায়ে চাহিদাভিত্তিক ও লাগসই কারিগরি পরিষেবা প্রদানের ফলে ২০২০-২১ অর্থবছরে মাছ উৎপাদন হয়েছে ৪৬ দশমিক ২১ লাখ টন, যা ২০০৯-১০ সালের মোট উৎপাদনের চেয়ে ৫৯ দশমিক ৪০ শতাংশ বেশি।’

এ ছাড়া স্বাস্থ্য খাতের উল্লেখযোগ্য বরাদ্দ বাড়ানোর প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘স্বাধীন বাংলাদেশের ৫১তম বাজেটের মূল স্লোগান কভিডের অভিঘাত কাটিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন। যেখানে মূল লক্ষ্য সক্ষমতার উন্নয়ন। বৈশ্বিক ঝুঁকি কাটিয়ে অর্থনীতির স্থিতিশীলতার সঙ্গে জনজীবনে স্বস্তি ফেরানোই এবারের বাজেটের মূল লক্ষ্য। গত অর্থবছরে (২০২১-২২) স্বাস্থ্য খাতের জন্য ৩২ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। এবার ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ হয়েছে ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা। সে হিসেবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ বেড়েছে ৪ হাজার ১৩২ কোটি টাকা।’ সংশ্লিষ্টদের মতে, আগের কয়েকটি অর্থবছরে স্বাস্থ্য খাতের জন্য মোট বাজেটের ৬ শতাংশের নিচে বরাদ্দ দিলেও করোনা মহামারিকালে ২০২০-২১ ও ২০২১-২২ অর্থবছরে সেই বরাদ্দ উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ানো হয়েছে।

কোন মন্ত্রণালয়ে কত বরাদ্দ : পর্যালোচনায় দেখা গেছে, মোট ৬২টি মন্ত্রণালয়/বিভাগের জন্য আলাদা বরাদ্দ দিয়ে ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ পাচ্ছে অর্থ বিভাগ, ১ লাখ ৯০ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ স্থানীয় সরকার বিভাগ, ৪১ হাজার ৭০৭ কোটি টাকা এবং তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, ৪০ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা। উল্লেখযোগ্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো হলো- রাষ্ট্রপতির কার্যালয় ৩১ কোটি, জাতীয় সংসদ ৩৪১ কোটি, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ৫ হাজার ৭৭৫ কোটি, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ১৩৭ কোটি, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ২৩০ কোটি, নির্বাচন কমিশন ১ হাজার ৫৩৯ কোটি, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ৪ হাজার ৭৪ কোটি ও সরকারি কর্ম কমিশন ১২৩ কোটি টাকা। পাশাপাশি মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় ২৯১ কোটি, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ ৩ হাজার ৪৭৮ কোটি, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ২ হাজার ৮৫২ কোটি, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের ৮ হাজার ৯৩ কোটি, পরিকল্পনা বিভাগের ১ হাজার ৩৬৪ কোটি, বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ ২৭৪ কোটি এবং পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের ৪১০ কোটি টাকা।

এ ছাড়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ৫৪৫ কোটি, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ১ হাজার ৬৫১ কোটি, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ ৪৫ কোটি, আইন ও বিচার বিভাগ ১ হাজার ৯২৪ কোটি, জননিরাপত্তা বিভাগ ২৪ হাজার ৫৯৪ কোটি, লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিভাগ ৪০ কোটি, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ৩১ হাজার ৭৫৯ কোটি, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ১৬ হাজার ৬১৪ কোটি, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ ২৯ হাজার ২৮২ কোটি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ ১ হাজার ৯১৬ কোটি, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ১০ হাজার ১৯৮ কোটি, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় ৪ হাজার ২৯০ কোটি, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ৩৫৭ কোটি, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ৬ হাজার ৮২১ কোটি, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় ১ হাজার ৯৯ কোটি, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ৬৩৭ কোটি, ধর্ম মন্ত্রণালয় ২ হাজার ৩৫৩ কোটি, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ১ হাজার ২৭৫ কোটি, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ ১ হাজার ৬৪৫ কোটি, শিল্প মন্ত্রণালয় ১ হাজার ৫২১ কোটি, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ৯৯০ কোটি, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় ৬২৮ কোটি, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ ১ হাজার ৮৭০ কোটি, কৃষি ২৪ হাজার ২২৪ কোটি, মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয় ৩ হাজার ৮০৮ কোটি, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় ১ হাজার ৫০১ কোটি, ভূমি মন্ত্রণালয় ২ হাজার ৩৮১ কোটি, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ১০ হাজার ১৯৬ কোটি, খাদ্য মন্ত্রণালয় ৬ হাজার ২১৩ কোটি, দুর্যোগ মন্ত্রণালয় ১০ হাজার ২২৯ কোটি, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ ৩৬ হাজার ৬৪৮ কোটি, রেলপথ মন্ত্রণালয় ১৮ হাজার ৮৫২ কোটি, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ৭ হাজার ২২৪ কোটি, বেসামরিক বিমান ৭ হাজার ৪ কোটি, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় ২ হাজার ৪৮৭ কোটি, পার্বত্য চট্টগ্রাম ১ হাজার ৩৩৮ কোটি, বিদ্যুৎ বিভাগ ২৪ হাজার ১৯৬ কোটি, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ৬ হাজার ৯৮৪ কোটি, দুর্নীতি দমন কমিশন ১৭৮ কোটি, সেতু বিভাগ ৯ হাজার ২৯৭ কোটি, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ ৯ হাজার ৭২৮ কোটি, সুরক্ষা সেবা বিভাগ ৪ হাজার ১৮৭ কোটি এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগ ৭ হাজার ৫৮২ কোটি টাকা বরাদ্দ পাচ্ছে।

 

সর্বশেষ খবর