রবিবার, ১২ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

মধ্যরাতে হার্ট অ্যাটাক খালেদার

♦ হাসপাতালে ভর্তি, বসানো হয়েছে রিং ♦ বিদেশে উন্নত চিকিৎসা চায় বিএনপি ♦ নিতে হলে আবার কোর্টে যেতে হবে : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

মধ্যরাতে হার্ট অ্যাটাক খালেদার

খালেদা জিয়া -ফাইল ছবি

বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ‘মাইল্ড হার্ট অ্যাটাক’ হয়েছে। চিকিৎসকরা তার শরীরে এনজিওগ্রাম সম্পন্ন করেছেন। রিপোর্টে একটি ৯৫ শতাংশ ব্লক ধরা পড়ায় সেখানে রিং পরানো হয়েছে।

গতকাল বেলা ২টা ৫০ মিনিটে বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও দলের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন এসব তথ্য জানান।

হৃদযন্ত্রে সমস্যা নিয়ে শুক্রবার রাত ৩টা ২০ মিনিটে খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) ভর্তি করা হয়। ডা. জাহিদ হোসেন বলেন, তার হার্টে বেশ কয়েকটি ব্লক ধরা পড়ে। তার মধ্যে একটি ব্লক ছিল ৯৫ শতাংশ। সেটিতে রিং পরানো হয়েছে। তার অবস্থা স্থিতিশীল নয়।

বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবিতে আজ রবিবার সকালে রাজধানীতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ ডেকেছে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি। গতকাল বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর খালেদা জিয়াকে অবিলম্বে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে সরকারের কাছে অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, এনজিওগ্রামে হার্টে ব্লক ধরা পড়ায় রিং পরানো হয়। মেডিকেল বোর্ড তাকে উন্নত চিকিৎসার্থে বিদেশে পাঠানোর জন্য পরিবারের সদস্যদের ব্যবস্থা নিতে বলেছেন।

অধ্যাপক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের তত্ত্বাবধানে শুক্রবার রাত ৩টা ২০ মিনিটে খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ারে সিসিইউতে ভর্তি করা হয়। তাৎক্ষণিকভাবে ১৮ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড পুনর্গঠন করা হয়। অধ্যাপক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মোমিন-উজ জামান ও অধ্যাপক সামস মনোয়ার রয়েছেন এই বোর্ডে। সকাল সাড়ে ১০টায় মেডিকেল বোর্ড বৈঠকে বসে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও সে বৈঠকে অংশ নেন। ৭৬ বছর বয়সী বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘ সময় ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন। গতকাল রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল আরও বলেন, খালেদা জিয়া হঠাৎ আবার অসুস্থ হওয়ায় প্রমাণিত হলো উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে বিদেশে পাঠানো না হলে তার জীবন আবারও হুমকির মধ্যে পড়বে। দেশের বাইরে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে সরকারের কাছে আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, অন্যথায় এর সব দায়দায়িত্ব সরকারের ওপর বর্তাবে। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, নজরুল ইসলাম খান, বেগম সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন। মির্জা ফখরুল আরও বলেন, আমরা বহুবার দেশনেত্রীর চিকিৎসার ব্যাপারে কথা বলেছি। দলের পক্ষ থেকে দেশের বাইরে চিকিৎসার জন্য আমরা আন্দোলন করেছি। তার পরিবারের পক্ষ থেকে তাকে বাইরে পাঠানোর জন্য আবেদন করা হয়েছে। তার পরিবারের সদস্যরা একসময় আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও দেখা করেছেন। কিন্তু এই সরকার কোনো কর্ণপাত করেনি। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী আজ পর্যন্ত তার চিকিৎসার জন্য তাকে যে বিদেশে পাঠানো দরকার, সে বিষয়টাকে সম্পূর্ণ বাতিল করে দিয়ে যে ব্যবস্থার কথা বলেন সেটা সঠিক নয়। এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ম্যাডামের হার্টের অসুখ। এটা ‘লাইফ থ্রেটেনিং’। এটা আজকে সাময়িকভাবে চিকিৎসকরা সমাধান দিতে সক্ষম হয়েছেন। তবে তার অন্যান্য যেসব রোগ রয়েছে- সেটার চিকিৎসা দেশে সম্ভব নয়। সেটার জন্য দেশের বাইরে উন্নত কেন্দ্রে নিয়ে চিকিৎসা দরকার। ‘দলীয় চেয়ারপারসনকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে বিএনপি কী পদক্ষেপ নেবে’ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা এখন সরকারের কাছে আপনাদের মাধ্যমে আহ্বান জানিয়েছি। দল থেকে সিদ্ধান্ত এখনো নেইনি। অবশ্যই আমরা আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব। তবে এটা জনগণের দাবি, গোটা বাংলাদেশের মানুষের দাবি যে, বেগম খালেদা জিয়াকে তার জীবন রক্ষার জন্য মুক্তি দিয়ে তাকে বিদেশে পাঠানো হোক। শুক্রবার মধ্যরাতে গুলশানের বাসা ফিরোজায় অসুস্থ হয়ে পড়লে বেগম খালেদা জিয়াকে তার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দারের গাড়িতে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় অসুস্থতার সংবাদ শুনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেনসহ বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতা হাসপাতালে ছুটে যান। ২০২১ সালের এপ্রিলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর এ নিয়ে খালেদা জিয়াকে পাঁচ দফায় এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হলো। তৃতীয় দফায় প্রায় তিন মাস হাসপাতালে থাকতে হয়েছে তাকে। তখন পরিপাকতন্ত্রে রক্তক্ষরণ এবং লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হওয়ার কথা জানিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। এ ছাড়াও বহু বছর ধরে তিনি আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন। এর আগে সর্বশেষ ৬ এপ্রিল নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য তাকে একই হাসপাতালে নেওয়া হয়। দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকারের নির্বাহী আদেশে শর্ত সাপেক্ষে সাজা স্থগিত করে সাময়িকভাবে মুক্তি দেওয়া হয় তাকে। এরপর থেকে গুলশানের ভাড়া বাসায় রয়েছেন ৭৬ বছর বয়সী খালেদা জিয়া।

ঢাকা মহানগর বিএনপির সমাবেশ আজ  : বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবিতে আজ রবিবার সকালে রাজধানীতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ ডেকেছে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন- দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল বাদ জোহর রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। বেগম খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসায় অবিলম্বে বিদেশে যেতে দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপির একাংশের সভাপতি আবদুল করিম আব্বাসী ও মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম। গতকাল এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তারা এ আহ্বান জানান। বিবৃতিতে খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে গণদাবি সৃষ্টি করতে দেশের মানুষের প্রতি আহ্বান জানান তারা।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ইউট্যাবের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম ও মহাসচিব অধ্যাপক ড. মো. মোর্শেদ হাসান খান এক বিবৃতিতে বলেন, খালেদা জিয়াকে বাঁচাতে হলে বিদেশে অ্যাডভান্স সেন্টারে নিয়ে ট্রিটমেন্ট অতি জরুরি। তাই সরকারকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে মানবিক দিক বিবেচনা করে অবিলম্বে বিদেশে চিকিৎসা নেওয়ার সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানাই।

 

সর্বশেষ খবর