বৃহস্পতিবার, ৭ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

পাওনা ছিল ৩ কোটি টাকা সাহিত্যচর্চার মাধ্যমে পরিচয়

শরীরে আগুন দিয়ে গাজী আনিসের মৃত্যুতে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে হেনোলাক্সের মালিক ও তার স্ত্রীকে

নিজস্ব প্রতিবেদক

পাওনা ছিল ৩ কোটি টাকা সাহিত্যচর্চার মাধ্যমে পরিচয়

বেশি লাভের প্রলোভন দেখিয়ে হেনোলাক্স কোম্পানির মালিক নুরুল আমিন ও ফাতেমা আমিন দম্পতি গাজী আনিসকে বিনিয়োগ করার প্রস্তাব দেন। শুরুতে রাজি না হলেও পরবর্তী সময়ে গাজী আনিস তার স্বজন ও বন্ধুদের কাছ থেকে লভ্যাংশ দেওয়ার কথা বলে ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা ধার করে বিনিয়োগ করেন। বিভিন্ন সময় হেনোলাক্স কোম্পানি তাকে ৭৪ লাখ টাকা দিলেও লভ্যাংশসহ কোম্পানির কাছে তার মোট পাওনা দাঁড়ায় ৩ কোটি টাকা। মূলত হেনোলাক্স কোম্পানি এই টাকা দিতে গড়িমসি করায় এবং পাওনাদাররা টাকা ফেরত পেতে তাগাদা দেওয়ায় চরম হতাশায় ভুগতে থাকেন গাজী আনিস। একপর্যায়ে মৃত্যুর পথ বেছে নেন। এ ঘটনার পর আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে মঙ্গলবার রাতে র‌্যাব-৩-এর একটি দল রাজধানীর উত্তরা থেকে গ্রেফতার করে আমিন ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির (হেনোলাক্স) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নুরুল আমিন ও কোম্পানির পরিচালক তার স্ত্রী ফাতেমা আমিনকে। গতকাল দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, গ্রেফতার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগে চেক জালিয়াতির মামলাও করেছিলেন গাজী আনিস। সংবাদ সম্মেলনও করেছিলেন জাতীয় প্রেস ক্লাবে। তবু তার আবেদনে কোনো সাড়া দেননি এই দম্পতি। কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, সাহিত্যচর্চা করতেন ভিকটিম গাজী আনিস। ১০-১৫টি কবিতার বইও বের করেছিলেন তিনি। মূলত হেনোলাক্স কোম্পানির পাশে জুপিটার পাবলিকেশন্স থেকে কবিতার বই বের করতেন গাজী আনিস। ফাতেমা আমিনও সাহিত্যচর্চা করেন। এই সূত্র ধরে ২০১৭ সালে তাদের মধ্যে পরিচয়। ২০১৮ সালে চিকিৎসার জন্য আমিন দম্পতি পার্শ্ববর্তী একটি দেশে গেলে সেখানে স্থানীয় একটি আবাসিক হোটেলে অবস্থানকালে গাজী আনিসকে হেনোলাক্স কোম্পানিতে বিনিয়োগের জন্য প্ররোচিত করেন তারা। প্রথমে অসম্মতি জানালেও পরে রাজি হন গাজী আনিস এবং প্রাথমিকভাবে ১ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেন। এরপর আসামিদের প্ররোচনায় তিনি আরও ২৬ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন। অধিকাংশ টাকাই ভিকটিম ঋণ হিসেবে আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে ধার নিয়েছিলেন। বিনিয়োগ করার সময় পরস্পরের প্রতি সম্মান ও বিশ্বাসের কারণে তাদের মধ্যে কোনো চুক্তিনামা করা হয়নি। তারা বিনিয়োগ-পরবর্তী চূড়ান্ত রেজিস্ট্রি চুক্তিপত্র সম্পাদনে গড়িমসি করতে থাকেন। একপর্যায়ে প্রতি মাসে লভ্যাংশ প্রদানও বন্ধ করে দেন। কয়েকবার আনিসকে হেনস্তা এবং ভয়ভীতিও প্রদর্শন করেন আমিন দম্পতি। তিনি বলেন, ৪ জুলাই পাওনা টাকা পরিশোধের দিন ধার্য ছিল। কিন্তু বিকাল গড়ালেও তারা আনিসকে টাকা দেননি। এরপর গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন আনিস। আশির দশকে হোমিও চিকিৎসক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করা মো. নুরুল আমিনের বর্তমানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও অঢেল সম্পত্তি রয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি র‌্যাবকে জানিয়েছেন, ১৯৯১ সালে শুরু করা হেনোলাক্স কোম্পানি একচেটিয়া ব্যবসা করায় বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান খুলতে পেরেছেন তিনি। 

গাজী আনিসের লাশ দাফন : সোমবার বিকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গায়ে আগুন দেওয়া ঠিকাদার গাজী আনিসের দাফন তার কুষ্টিয়ার গ্রামের বাড়িতে সম্পন্ন হয়েছে। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টায় কুমারখালী উপজেলার পান্টি ইউনিয়নের পান্টি গ্রামে তাকে দাফন করা হয়েছে বলে বড় ভাই নজরুল ইসলাম জানান। এ সময় তার স্ত্রী জুমিনা রহমান স্বপ্না এ ঘটনার বিচার দাবি করেন এবং তিন মেয়েকে নিয়ে অনিশ্চয়তার কথা জানান। বড় মেয়ে এইচএসসি পরীক্ষার্থী মেধা রহমান আঁচল তার বাবার পাওনা টাকা উদ্ধারে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছেন।

সর্বশেষ খবর